গত মাসের ২৩ তারিখ থেকে দেশে যে ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ বা ‘কঠোরতম বিধিনিষেধ’ শুরু হয়েছিল, ১৯ দিন পর তা শেষ হচ্ছে মঙ্গলবার মধ্যরাতে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামান্য নিষেধ ছাড়া; বলা চলে বুধবার থেকে আবার সবকিছুই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে। এমনকি গণপরিবহনে যাত্রী নেওয়ার ক্ষেত্রে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাও থাকছে না। মূলত ‘জীবন ও জীবিকার সমন্বয়’ করতেই সরকারের এমন উদ্যোগ বলে দাবি করা হচ্ছে।
কিন্তু যে জন্য এতসব উদ্যোগ; সেই করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়েছে বলে সরকার বা অন্য কোনো পক্ষ জোর দিয়ে বলতে পারছে না। অবশ্য তা বলা সুযোগ আছে বলেও আমরা মনে করি না। কেননা শেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর নতুন রেকর্ড গড়ে তা ২৬৪ জনে ঠেকেছে। দেশে একদিনে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে এত মানুষের মৃত্যু এর আগে কখনও হয়নি। তবে দৈনিক শনাক্তের পরিমাণ কিছুটা কমে ১১ হাজার ১৬৪ জনে দাঁড়িয়েছে। সার্বিকভাবে এই পরিস্থিতিকে ‘ভালো’ বলারও সুযোগ নেই।
‘জীবনের প্রয়োজনে’ চলা বিধিনিষেধের আজকে মধ্যরাতে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মানুষকে ঘরে রাখা সম্ভব হয়নি। সরকারের নির্দেশনার একদিন আগেই রাজধানীসহ সারাদেশ ‘স্বাভাবিক অবস্থায়’ ফিরেছে। রাস্তাগুলোতে যানবাহনের চাপ ছিল অন্যদিনগুলোর মতোই। সড়কজুড়ে প্রাইভেটকার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা আর রিকশার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এমনকি এতদিন ধরে কঠোর অবস্থানে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও তৎপর হতে দেখা যায়নি। বাস ছাড়া সবই চলেছে রাজধানীতে। বন্ধ থাকা বহু দোকানপাটও খুলে গেছে আজকেই।
আমরা জানি, সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছিল ১১ আগস্ট থেকে ধাপে ধাপে সবকিছু খুলে দেওয়া হবে। এ সংক্রান্ত যে প্রজ্ঞাপন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে মূলত বিধিনিষেধ শিথিলের কথাই বলা হয়েছে। সেখানে সড়ক, রেল ও নৌপথে আসনসংখ্যার সমপরিমাণ যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচল করতে পারবে বলে জানানো হয়েছে।
কিন্তু আমরা এর আগেও দেখেছি, সব আসনে যাত্রী তোলার পরও দাঁড়িয়েও অনেক যাত্রী তোলা হয়েছে। যেটা করোনা সংক্রমণে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করেছিল। আবার হোটেল-রেস্তোরাঁয় অর্ধেক আসন খালি রাখার কথা এর আগেও বলা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তা মেনে চলা হয়নি। এমন আরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকার যা বলেছে, ঠিক তার উল্টোটা করতে আমরা দেখেছি।
পরিস্থিতি যখন এমন, আমরা মনে করি, কোনো ক্ষেত্রেই শিথিলতা দেখানোর সুযোগ নেই। বিশেষ করে মাস্ক পরা-সহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। অন্তত এই ক্ষেত্রে কঠোর হতেই হবে। না হলে করোনাভাইরাসকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না।