রাবি সংবাদদাতা: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দশম সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় আচার্য আব্দুল হামিদ বলেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় মূলত মুক্তি চিন্তার জায়গা। প্রযুক্তিগত জ্ঞান সমগ্র বিশ্ব এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দশম সমাবর্তনে তিনি এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অসহিষ্ণুয়তা, উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদসহ বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকাণ্ড আমাদের গভীরভাবে ভাবিয়ে তোলে। এই সকল কর্মকাণ্ড সৃষ্টি হয়েছে উগ্রচিন্তা ও অপসংস্কৃতির প্রভাবে।
‘তবে উচ্চ শিক্ষা যাতে সার্টিফিকেট সর্বস্ব না হয় কিংবা শিক্ষা যাতে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত না হয় তা দেশ ও জাতির স্বার্থে সম্মিলিতভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এটা না করতে পারলে দেশে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়বে এবং বিশ্ব প্রতিযোগিতায় আমরা পিছিয়ে পড়বো।’
এ সময় তিনি আরো বলেন, সময়ের বিবর্তনে বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশের দ্রুত উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছে জনগণের অনেক প্রত্যাশা। বিদ্যমান অবকাঠামো, পদ্ধতি ও মূল্যবোধকে বহন করেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তৈরি করতে হয় আগামী দিনের নেতৃত্ব, সুদক্ষ, মানবসম্পদ। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে তীব্র প্রতিযোগিতাময় বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে বিশ্বমানের গুণগত শিক্ষা ও গবেষণার বিকল্প নেই।
‘গণতন্ত্রের ভিতকে মজবুত করতে হলে দেশে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে। আর সেই নেতৃত্ব তৈরি হবে ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমেই। ছাত্র রাজনীতির নেতৃত্ব থাকবে ছাত্রদের হাতে। লেজুড়বৃত্তি বা পরনির্ভরতার কোনো জায়গা থাকবে না। ছাত্রসমাজেই এব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। জাতির অমিত শক্তি যুব সমাজ। যুব সমাজকে কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়ন সাধন করতে হবে।’
সমাবর্তনে বিশেষ অতিথি হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, দেশের বড় সম্পদ হলো শিক্ষার্থীরা। তাদের ওপর নির্ভর করছে আগামী দিনের বাংলাদেশ। শিক্ষা, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা অর্জন করার শেষ নাই। যেকেউ যেকোনো বয়সে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। আধুনিক জ্ঞান অর্জন করতে হবে যা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে জাতির উন্নয়নের জন্য কাজ করে যায়। কেননা আমরা দেশ ও জাতির প্রতি দায় ও কর্তব্য অস্বীকার করতে পারি না।’
অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা অধ্যাপক ইমেরিটাস আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের একটি প্রতিবেদন ক্যাম্পাসের শিক্ষক ও ছাত্রদের দলীয় রাজনীতির অকল্যাণকর প্রভাব, সেশনজট সংস্কৃতির কারণে শিক্ষা জগতে নৈরাজ্য, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাজে ও চিন্তায় স্বচ্ছতায় ও জবাবদিহিতার অভাব উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য অর্জনের বাধা বলে চিহ্নিত। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুধু উচ্চশিক্ষার মানের অবনতি হয়নি, পরীক্ষা পদ্ধতিও বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। অবস্থা এমন যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক অন্যের মূল্যায়নের উপর আস্থা রাখতে চায় না।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা ও অধ্যাপক ড. চৌধূরী মো. জাকারিয়া, কোষাধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার আব্দুল বারী।
এর আগে দুপুর সাড়ে তিনটায় রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়ে আগমন করেন। এসময় তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা ও গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। পরে বিকাল ৪টার দিকে রাষ্ট্রপতি সমাবর্তন অনুষ্ঠানের শুরুর আগে দুটি আবাসিক হলের ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে দুই প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক ও সেলিনা হোসেনকে বাংলা সাহিত্যে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি ডিলিট উপাধি প্রদান করেন। সমাবর্তনে ৬ হাজার ১৪ জন গ্রাজুয়েটকে ডিগ্রী প্রদান করা হয়। পরে সন্ধ্যায় আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন।