করোনাকালে দেশের শিক্ষা খাত নাজুক সময় পার করছে। প্রায় এক বছরের কাছাকাছি সময় ধরে দেশের কয়েক কোটি শিক্ষার্থী প্রচলিত শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের উপরে কোনোরকমে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যাভাস টিকে থাকলেও প্রযুক্তি ও টেলিভিশনের বাইরে থাকা একটি বিরাট সংখ্যক শিক্ষার্থী চিরতরে হারাতে বসেছে তাদের শিক্ষা জীবন।
করোনাকালে সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিয়মিত জীবন যাপনে নানা বিধি নিষেধ থাকলেও সেসব দেশে ক্লাসরুম ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম অনেকটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের দেশে বিষয়টি উল্টা, নিয়মিত জীবনকর্ম ও অন্যান্য বিষয়ে কোনো বিধি নিষেধ মানছে না জনগণ, শুধু শিক্ষা ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের করোনা আক্রান্ত হবার ভয় থেকেই এই ব্যবস্থা।
এই পরিস্থিতির মধ্যে এবছর এইচএসসি পরীক্ষাসহ বিদ্যালয় পর্যায়ের সকল পরীক্ষা বাতিল করে অটোপাস দেয়া হয়েছে। তবে সামনের দিনগুলিতে অন্যকোনো পরীক্ষায় এরকম হবে না বলে ঘোষণা এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রভর্তির কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যদিও ক্লাসের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ নানা সময়ে নানা ধরণের নিয়ম ও পরীক্ষামূলক ঘোষণা দিয়ে আসছে। এই করোনার মধ্যে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাক্রম পাল্টে দেবার ঘোষণা এসেছে। বিষয় ও পরীক্ষা কমিয়ে বইয়ে আনা হচ্ছে পরিবর্তন। প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা এক বছরের পরিবর্তে দুই বছর হবে। দশম শ্রেণির আগে কোনো পাবলিক পরীক্ষা থাকবে না। একজন শিক্ষার্থী বিজ্ঞান, মানবিক নাকি ব্যবসায় শিক্ষায় পড়বে, সেটি ঠিক হবে উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে, যা এখন নবম শ্রেণিতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বিষয়ে গুচ্ছ পদ্ধতি প্রয়োগের ঘোষণাও এসেছে সম্প্রতি।
করোনা পরিস্থিতিতে দেশের শিক্ষা খাতের নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে এসব নিয়ম নানা সমস্যা তৈরি করবে বলে সংশ্লিষ্ট অনেকের ধারণা। এছাড়া এসব সিদ্ধান্ত নেবার আগে এই করোনার মধ্যে কোনো ধরণের গবেষণা-সমীক্ষা বা উপযোগিতা পরীক্ষা হয়েছে কিনা, তা জানা যায় নি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এধরণের পরিবর্তনের আগে নানা ধরণের কার্যক্রম, গণশুনানি নয়তো বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে ডায়ালগ আয়োজন করা হয়ে থাকে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।
করোনার এই সঙ্কটকালে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠ্যাভাস ফিরিয়ে আনা। শুধুমাত্র অনলাইনেই যদি তা চালিয়ে যেতে হয়, সেক্ষেত্রে প্রযুক্তি সুবিধার বাইরে যেসব শিক্ষার্থী রয়েছে তাদের শিক্ষা অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ও ভর্তি কার্যক্রমে নিয়ম পরিবর্তনের আগে যথেষ্ট পরিমাণ গবেষণা ও বিশেষজ্ঞ মতামত নেয়া জরুরি বলে আমরা মনে করি।