বাড়িতে বসে থেকে থেকে হাঁপিয়ে উঠা শিক্ষার্থীরা আবারও তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাবে। আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে আবারও মুখরিত হবে স্কুল-কলেজ প্রাঙ্গন, আর পর্যায়ক্রমে সব পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন ধরে একটানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার্থীর লেখাপড়া ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ইউনিসেফসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাপী নানা সময়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিল। এই বাস্তবতায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দরজাগুলো খোলার সিদ্ধান্ত সঠিক ও সময়োপযোগী।
বহুদিন বাড়িতে অবস্থান করা ও করোনাকালীন নানা বিধিনিষেধের কারণে শিক্ষার্থীরা অনেকটাই শারীরিক ও মানসিকভাবে অপ্রস্তুত। কাজেই স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গে মূল যে চ্যালেঞ্জটি সামনে এসেছে, তা হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপদে স্কুল-কলেজ খোলা। যদিও একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, স্কুল-কলেজ কাঠামোর মধ্যে সংক্রমণ সাধারণত কমিউনিটি সংক্রমণের হারের চেয়ে কম হয়, যদি তারা করোনা প্রতিরোধের কৌশলগুলো মেনে চলে।
দেশে সর্বস্তরে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা অনেকটাই কম, এই প্রেক্ষিতে পশ্চিমা দেশগুলোর আদলে দেশের স্কুল-কলেজগুলো কতোটা কৌশল অবলম্বন করতে পারবে, তা নিয়ে শঙ্কা কিছুটা থেকেই যায়। এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ ও সিডিসির মতো প্রতিষ্ঠানের গাইডলাইন ফলো করা যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজেস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) মতে, করোনাকালে নিরাপদে স্কুল-কলেজ চালু করতে ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দুটি অগ্রাধিকার কৌশল হচ্ছে- ১) মাস্কের সঠিক ব্যবহার এবং ২) শারীরিক দূরত্ব যতটা সম্ভব বজায় রাখা। এ দুটি অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে আরও কিছু প্রয়োজনীয় নিয়ম মেনে চলা আবশ্যক। টিফিন বা দুপুরের খাবারসহ কোনো প্রকার খাদ্য গ্রহণে সতর্কতা ও স্ট্রিট ফুড বিক্রি বন্ধ করা। স্কুলে আপাতত অ্যাসেম্বলি এবং ইনডোর খেলাধুলা কিংবা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন না করা। আসন ফাঁকা রেখে আসন নির্দিষ্ট করে বসা, কেউ অসুস্থ হলে শিক্ষককে জানানো। হাত ধোয়া, হাঁচি-কাশি কিংবা থুতু ফেলার শিষ্টাচারগুলো বেশি বেশি জানানো ও অসুস্থ হলে শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে আসতে নিরুৎসাহীত করা। শিফট ভিত্তিতে যথাসম্ভব শিক্ষার্থী কম রাখা এবং স্কুল-কলেজে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা।
উপরোক্ত স্বাস্থ্যবিধিসহ সাধারণ কিছু সচেতনতার প্রচার ও নজরদারি বাড়ালে স্কুল-কলেজে করোনার প্রভাব অনেকটাই কমে আসবে বলে আমাদের ধারণা। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বিধিনিষেধ শেষ হওয়ার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রতি আগ্রহ কমে গেছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা চোখে পড়ে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রতি এই শৈথিল্যে যেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে না ঘটে, সেদিকে সংশ্লিষ্টদের মনোযোগ কামনা করছি।