প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন: দেশের প্রতিটি অর্জনে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভূমিকা রয়েছে। সুষ্ঠু সমাজ ব্যবস্থা নির্মাণে শিক্ষা খাতে বিনিয়োগের চেয়ে ভালো কিছু আর হতে পারে না। তাই বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে।
শনিবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন: আমি বিশ্বাস করি শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি উন্নত করতে পারে না। আপনাদের হাতেই দেশের ভবিষৎ। বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূলে শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর নির্ভর করলেই চলবে না। এখানে শিক্ষক ও পিতামাতাকে ভূমিকা রাখতে হবে। একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। সেটা যেন অটুট থাকে, বাংলাদেশ যেন ভালো থাকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন: আমরা ক্ষমতায় আসার পর আবার বিজ্ঞানভিত্তিক প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বহুমুখী বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করেছি। যাতে আমাদের ছেলে মেয়েরা বিশ্বের যেকোন জায়গায় গিয়ে মানসম্মত চাকরি করে খেতে পারে। আমরা প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছি।
‘‘৯০ ভাগ জেলায় আমরা ব্রডব্যান্ড, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম নির্মাণ ও আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সার্বিক সহযোগিতায় শিক্ষার মান উন্নয়নের কাজ করে চলেছি।
২ কোটি শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে ১ কোটি ৪০ লাখ প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের হাতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বৃত্তি পৌঁছে দিচ্ছি। ঝড়ে পড়া রোধে স্কুলে নানা ভাবে টিফিনের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’’
তিনি বলেন: আমাদের লক্ষ্য দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আমাদের সময়ে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখার জন্য আমরা নানা ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রসঙ্গে বলেন: দেশের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্তের বিষয়ে কয়েক মন্ত্রী ও উপদেষ্টা ছাড়া বাংলাদেশের মানুষ আমার পাশেই ছিলো। বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তা ছাড়া নাকি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব নয় বলে আমাকে যখন জানিয়েছিল আমার অর্থমন্ত্রী ও উপদেষ্টা, তখন আমি বলেছিলাম কেন সম্ভব নয়? প্রয়োজনে নকশা পরিবর্তন করে করবো। ঠিক সেসময় আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন বাংলাদেশের মানুষ। নিজস্ব টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করার বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে সক্ষমতার প্রমাণ রেখেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন: পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্রের কথা আপনারা সবাই জানেন। কারা পদ্মা সেতু হতে দিয়ে চায়নি। অথচ উনাকে ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর ফোনের ব্যবসাটা আমিই দিয়েছিলাম। উনার বয়স নেই তারপরও উনি গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে থাকতে চান। একজন নোবেল বিজয়ী মানুষ গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে কেন থাকতে চান আমি বুঝি না। অথচ আমরা বলেছিলাম আপনার বয়স নেই আপনি এমিরেটাস অ্যাডভাইজর হয়ে থাকেন। কিন্তু না, তিনি থাকলেন না। তিনি কোর্টে গেলেন।
‘‘গ্রামীণ ব্যাংকে তার এমডি পদ নিয়ে টনি ব্লেয়ার ও হিলারি ক্লিনটন আমাকে ফোন করেছিলেন। আমার সঙ্গে দেখা হওয়ার পরও তারা আমাকে উনার বিষয়ে বলেছেন। আমি তাদের বলেছিলাম, এটা আমার ব্যাপার নয় এটা কোর্টের ব্যাপার। কোর্ট অার যাই করুক কারো বয়স তো কমাতে পারে না। সেজন্য তারা বিশ্ব ব্যাংককে ফোন করে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দিলো। শুধু বন্ধ নয় আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অভিযোগ আনা হলো।
আমার মেয়ে, ছেলে, বোনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে তদন্তের নামে হয়রানি করা হয়। আমাদের বারবার ডেকে তদন্ত করা হয় তারপরও আমরা কারো কাছে মাথা নত করি নাই। বাংলাদেশের মানুষ আমার উপর আস্থা রেখে আমাকে সাহস যুগিয়েছে। আমাকে ফোনে মেসেজে টাকা দেয়ার কথা বলেছে। তাদের টাকায় আজ পদ্মা সেতু দৃশ্যমান।’’
শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমান প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়েকে স্বায়ত্ত্বশাসিত করে দিয়েছিলেন। ভাষা আনোদালনের জন্য ছাত্রলীগ, তমুদ্দিন মজলিসস গঠন করেছিলেন। তিনি বাংলার মানুষের অধিকারকার প্রতিষ্ঠার জন্য ৬ দফা প্রণয়ন করেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরে তিনি যুদ্ধ বিধস্ত একটা দেশকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন। স্বাধীন দেশে তিনি নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল কলেজ, কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বারোপ করেন। কিন্ত তার মৃত্যুর মাধ্যমে সবকিছুই শেষ হয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন: আমি গর্ববোধ করি আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালের ছাত্রী ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সবসময় জাতির সকল অর্জনে ভূমিকা রেখেছে। ১৯৪৮ সাল থেকে ২০০৭ সালের জাতির যেকোন সংকটে ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই প্রথম আন্দোলন শুরু হয়। শিক্ষার মান উন্নয়নে ও নারী শিক্ষায় আমাদের সরকার গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
‘‘১৯৯৬ সালে ক্ষমতা গ্রহণের সময় স্বাক্ষরতার হার ছিলো মাত্র ৪৫%। তারপর জেলা ধরে ধরে স্বাক্ষরতার ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিয়েছিলাম আমরা। যার ফলে আমরা ৬৫% স্বাক্ষরতায় উন্নীত হয়। এজন্য আমাদেরকে ইউনেস্কো আমাদের পুরস্কৃত করেছিলেন। দু:খের বিষয় আমরা ক্ষমতায় না থাকায় তা আবার ৪৫% চলে আসে। শুধু শিক্ষায় নয়, সবক্ষেত্রে যেমন বিদুৎ, খাদ্য, শিক্ষায় সবক্ষেত্রে দেশ পিছিয়ে যায়।’’
শেখ হাসিনা বলেন: বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা যেসব রেকর্ডগুলো করে সেই ফাইলগুলো আমি সংগ্রহ করি। আমি আমাদের ছাত্রলীগ, বেবি আপাকে নিয়ে ড. এনায়েতুর রহমানের সহযোগিতায় এই ফাইলগুলো আপনাদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এটা আমাদের কাছে একটা সম্পদ। তিনি যেসব চিঠিগুলো লিখেছেন সেই চিঠির ভাষাগুলো জানা খুব দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যারা ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করেন তাদের জন্য এগুলো খু্বই গুরত্বপূর্ণ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারিদের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কারের জন্য বন্ড সই দিয়ে তিনি মুক্তি চাননি। তাকে অনুরোধ করলেও তিনি বলেন ‘আমি কারো কাছে মাথা নত করতে শিখি নাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন: সরকার গবেষণার উপরে জোর দেয়ার ফলে মাছ উৎপাদানে আমরা চতুর্থ। সবজি উৎপাদনেও আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি।