চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

শিক্ষাঙ্গন যেন খুনিদের অভয়ারণ্য না হয়

শিক্ষা ব্যবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় যে কোনো দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। আর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) দেশের সেরা মেধাবীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবেই পরিচিত। কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠানে এমন এক হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে, যা কখনোই একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটতে পারে না।

গতরাতে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষ থেকে আবরার ফাহাদ নামের এক শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে ‘শিবির’ সন্দেহে জেরা করার পর ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আর এ ঘটনায়ও উঠে আসছে ছাত্র রাজনীতি।

এবারের অভিযোগ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। চ্যানেল আই, চ্যানেল আই অনলাইনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের বরাতে ইতোমধ্যে এ হত্যাকাণ্ডে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের একাধিক শীর্ষ নেতার নাম উঠে এসেছে। এর মধ্যে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।

এ ঘটনার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নড়েচেড়ে বসলেও হত্যাকাণ্ডের আগে কেন আবরার ফাহাদের জীবন রক্ষা করতে পারলেন না, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। একজন শিক্ষার্থীকে শুধু সন্দেহের জেরে পড়ার টেবিল থেকে ডেকে নিয়ে রাতভর পিটিয়ে মেরে ফেললেও বিশ্ববিদ্যালয় ও হল কর্তৃপক্ষ তা টের পাবে না, তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা মনে করি, বুয়েট কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। তাই তারা কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না।

এছাড়া রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন এদেশে নতুন কিছু নয়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে নানা সময়ে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এই দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসবের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে বড় ধরনের অ্যাকশন নিতে শুরু করেছেন। ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের অপসারণ থেকে শুরু করে যুবলীগের অপরাধীদের ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এই অবস্থার মধ্যেও কিভাবে বুয়েট ছাত্রলীগ এসব করছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মনোভাবও ইতিবাচক বলে আমাদের মনে হয়েছে। আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটিও করেছে ছাত্রলীগ। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের কোনো নেতা অথবা বুয়েট শাখার নেতাকর্মী যদি বিন্দুমাত্র জড়িত থাকে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। এছাড়া সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। ছাত্রলীগের এই অবস্থান প্রশংসনীয়।

তবুও এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি নতুন করে সামনে আসছে। তাদের জীবনের নিরাপত্তার সব ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই করতে হবে। রাজনৈতিক সংগঠনের নামে কেউ যাতে পেশিশক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে ঘটাতে না পারে, সেই খেয়ালও সংশ্লিষ্টদের রাখতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কখনোই খুনিদের অভয়ারণ্য না হয়ে মানুষ তৈরির কারখানা হবে বলেই আমাদের আশাবাদ। তাই আবরার হত্যাকাণ্ডের যথাযথ বিচারসহ এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে আমরা সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।