নিখোঁজের ৪৮ ঘণ্টা পার হলেও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোবাশ্বের হাসান সিজারের এখনো কোন খোঁজ পায়নি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তারা বলছেন, সিজারকে উদ্ধারে যেকোন ‘ক্লু’ পাওয়ার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: এখনো তার অবস্থান সম্পর্কে আমরা খোঁজ পাইনি, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা তাকে উদ্ধারে সাধ্যমতো কাজ করছে।
সিজারের বাবা মোতাহের হোসেন চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান: ও আমার একমাত্র ছেলে। এখনো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ সিজারকে উদ্ধার করতে পারেনি। তারা নিজেরাও ধারণা করতে পারছেন না বিষয়টি কী হচ্ছে। তবে তারা তদন্ত করছেন বলে জানিয়েছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন সিজার। সে জন্য বাসার সামনে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাও স্থাপন করেছিলেন তিনি। কিছু দিন আগে তার বাসায় একজন অপরিচিত ব্যক্তি এসে তার খোঁজ করেছিলেন বলে সিজারের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
তবে গতকাল সিজারের দক্ষিণ বনশ্রীর বাসার নিচে গণমাধ্যম সিজারের প্রতি কোনো হুমকি ছিল কি না জানতে চাইলে তার ছোট বোন তামান্না তাসমিন জানিয়েছিলেন, কোনো হুমকি ছিল না।আমরা খুব সাধারণ পরিবার।সিজারের বাবা অবশ্য বলেছিলেন, বাসার সামনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এলকার সোসাইটি থেকেই করা হয়েছে।
গত ৩১ অক্টোবর সিজার তার ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি লিখেছিলেন; এক-দুইবছর ধরে তিনি বেনামি ফেসবুক ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে বিরক্তিকর বার্তা পেয়ে আসছেন।
গতকাল বুধবার সিজারের পরিবার থেকে জানানো হয়, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে মোবাশ্বের হাসান সিজারের মুঠোফোন বন্ধ পেয়ে তারা তার বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়েও খোঁজ নেন। কিন্তু কোথাও সিজারের সন্ধান না পেয়ে রাত আড়াই’টার দিকে খিলগাঁও থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর বুধবার সকালে সিজারের বাবা র্যা ব-৩-এর কার্যালয়ে গিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ জানান।
বৃহস্পতিবার দুপুরে র্যাব-৩ পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো: এমরানুল হাসান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: এখনো সিজারের খোঁজ পাওয়া যায় নি, আমরা আজও তার বাবাকে অফিসে ডেকেছিলাম, তার কাছে কোন তথ্য উপাত্ত রয়েছে কিনা।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য মতে, মঙ্গলবার পৌনে সাতটা থেকে সিজারের মুঠোফোন বন্ধ, সন্ধ্যা ৬ টা ৪১ মিনিটে তার মুঠোফোনে সর্বশেষ ফোন এসেছিল, তখন তিনি বেগম রোকেয়া স্বরণীর লায়ন্স ভবনের দিকেই ছিলেন।
এ ব্যাপারে র্যাবের পক্ষ থেকে কী ভূমিকা নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে র্যাব-৩ পরিচালক বলেন: ওই এলাকাগুলোতে র্যাব কাজ করছে, আমরা যেকোন ‘ক্লু’ পাওয়ার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।
এমরানুল হাসান আরো বলেন: সিজার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণামূলক লেখা লিখতো। এসব বিষয় মাথায় রেখেও আমরা তদন্ত করে চলেছি।
অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটিতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলামের প্রভাব কতটা ভূমিকা রাখছে, সেটি ছিল সিজারের পিএইচডি থিসিসের বিষয়বস্তু। ইসলাম, রাজনীতি এবং জঙ্গিবাদ বিষয়ে সম্প্রতি তিনি দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও জার্নালে গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখেছেন।
সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বর মাসে দিল্লিভিত্তিক একটি জার্নালে তার প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল।বিশ্বায়নের ছায়ায় বাংলাদেশের ভেতরে কীভাবে রাজনৈতিক ইসলাম ও উগ্রবাদী সহিংসতা ছড়াচ্ছে, সে বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন তিনি সর্বশেষ লেখায়।
সিজার এমন এক সময়ে নিখোঁজ হলেন, যখন বাংলাদেশে নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে।গত ২২ আগস্ট বনানী থেকে ব্যবসায়ী সৈয়দ সাদাত আহমেদ, ২৬ আগস্ট ধানমণ্ডি থেকে শিক্ষার্থী ইশরাক আহমেদ, ২৭ আগস্ট গুলশান থেকে ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ কুমার রায় এবং একই দিন পল্টন থেকে কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এমএম আমিনুর রহমান নিখোঁজ হন।