করোনা মহামারির দুই বছর পর দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যখন পুরোদমে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হওয়ার কথা তখন আমরা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে দেখি কোথাও কোথাও শিক্ষক সংকটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকটসহ নানাবিধ জটিলতা তৈরি হয়েছে। সারাদেশের চিত্র একই রকম প্রায়। এর মধ্যে নেত্রকোনা জেলায় ৩৫২টি স্কুলের প্রধান শিক্ষক নেই। এটা কোন ক্ষুদ্র সমস্যা নয়।
দেশের শিক্ষাব্যবস্থার প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। নানা জটিলতার কারণে এখনও প্রাথমিক স্তরে এই কার্যক্রম সর্বাত্মকভাবে শুরু করা যায়নি। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের যোগসূত্রটি কীভাবে হবে সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ ছাড়া নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রাথমিকের পাঠ্যবইও চূড়ান্ত হয়নি। প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের নতুন এই শিক্ষাক্রম আগামী বছর থেকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন শ্রেণিতে পুরোপুরি চালু হবে। কিন্তু এখনও অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষকসংকট থেকে গেছে।
নেত্রকোনায় তিন শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। অনেক জেলায় এমন শিক্ষকসংকটের খবর আমরা দেখতে পাই সংবাদমাধ্যমগুলোতে। এর মাধ্যমে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থা কেমন নাজুক অবস্থায় আছে, সেটিই প্রতীয়মান হয়। এক প্রতিবেদনে জানা যায়: নেত্রকোনায় অন্তত ৩৫২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া ২৩টি সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (এইউইও) পদ শূন্য। এতে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা ব্যাহত হচ্ছে। নেত্রকোনায় ১০টি উপজেলায় ১ হাজার ৩১৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। যেখানে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ লাখ ৭১ হাজার ৫২৭। বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রধান শিক্ষকের অনুমোদিত পদ আছে ১ হাজার ৩১৩টি। বাকি ২টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের অনুমোদিত পদ নেই। অনুমোদিত পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ৯৬১ জন প্রধান শিক্ষক। বাকি ৩৫২টি বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়েই চলছে কার্যক্রম।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকরা জানান, করোনার কারণে দুই দফায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি বিদ্যালয়গুলো খুলে দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে একসঙ্গে সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের দ্বৈত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে তাদের। বিদ্যালয়ের দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি প্রশাসনিক দায়িত্ব সামলানো, জাতীয় দিবসগুলোতে অনুষ্ঠান পালন করতে গিয়ে তাদের বেগ পেতে হয়। অনেক অভিভাবক জানান: প্রধান শিক্ষকের পদ খালি থাকায় বিদ্যালয়গুলো অনেকটা অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। ভারপ্রাপ্তরা অনেক সময় সঠিক সিদ্ধান্তও নিতে পারেন না। কোন কোন বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কয়েক শত অথচ শিক্ষক আছেন তিন-চারজন।
দেশের তৃণমূলের এই শিক্ষা ব্যবস্থার হাল বলে দেয় এই সব ব্যাপারে আমরা কতটা উদাসীন। দীর্ঘ দুই বছর ধারাবাহিক শিক্ষা ব্যাহত হওয়ার পর এখন যেখানে সব কিছু দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করার কথা সেখানে শিক্ষক সংকটের এই চিত্র আমাদের হতাশ করে। তবে আশার খবর হলো: শিক্ষক সংকট নিরসনে এপ্রিলে ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেশের প্রাথমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে এই অচল অবস্থা দূর করবে তাদের ত্বরিত পদক্ষেপ নিয়ে, এটাই আমাদের আশাবাদ।