শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার মূল হোতা ছাত্রলীগ নেতা জুন্নুনকে গ্রেপ্তার করেছে পাবনা সদর থানা পুলিশ। শনিবার ভোরে পাবনার একটি বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে পাবনা সদর থানার ওসি ওবায়দুল হক চ্যানেল আই অনলাইন-কে বলেন: শিক্ষক লাঞ্চনার ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তাকে আটক করা হয়েছে।
গত বুধবার রাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় মামলা হয়। তবে ‘রাজনৈতিক চাপে’ প্রধান অভিযুক্ত বুলবুল কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি শামসুদ্দিন জুন্নুনকে আসামি করা হয়নি বলে জানিয়েছলেন ওই শিক্ষক।
ওই ঘটনার সিসিটিভির ফুটেজে অন্তত পাঁচ জনকে শিক্ষক মাসুদুরের উপর হামলা করতে দেখা গেলেও মামলার আসামি করা হয় সজল (২০) ও শাফিন (২০) নামে ছাত্রলীগের দুই কর্মীকে। মামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাদেরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মারধরের শিকার শিক্ষক মাসুদুর রহমান তখন অভিযোগ করেন, ‘রাজনৈতিক চাপে’ প্রধান আসামি ছাত্রলীগের সভাপতি শামসুদ্দিন জুন্নুনকে বাদ দিয়ে মামলা করতে হয়েছে।
এমনকি প্রধান অভিযুক্তকে আসামি না করায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন কলেজের শিক্ষকরা।
মাসুদুর পাবনা শহিদ বুলবুল সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক। পরীক্ষায় নকল করতে বাধা দেওয়ায় কেন্দ্রের মধ্যেই তাকে মারধর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এই ঘটনার একটি ভিডিও এরই মধ্যে ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
ঘটনার শুরু ৬ মে। এইচএসসি পরীক্ষার ডিউটি করছিলেন প্রভাষক মাসুদুর রহমান। সেসময় দেখতে পান তার কক্ষের দু’জন পরীক্ষার্থী অসদুপায় অবলম্বনের চেষ্টা করছে। তিনি তাদের খাতা কেড়ে নেন এবং নিয়মানুযায়ী যতটুকু দায়িত্ব পালন করা দরকার তা করেন।
এতেই বাধে বিপত্তি। ঘটনার পর ৫ দিন চুপ করে থাকলেও গত ১২ মে এইচএসসি পরীক্ষা শেষে কেন্দ্র থেকে বের হবার পথে দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে প্রভাষক মাসুদুর রহমানের উপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পাবনা শহিদ সরকারি বুলবুল কলেজের ছাত্রলীগের সভাপতি জুন্নুনের নেতৃত্বে তার উপরে হামলা চালানো হয়।
কলেজে রাখা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, কলেজ গেট থেকে মোটরসাইকেলে করে বের হওয়ার সময় কয়েকজন যুবক এসে অতর্কিত হামলা চালায় শিক্ষক মাসুদুর রাহমানের উপর। তাকে এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি ও থাপ্পড় মারা হয়। ফেলে দেয়া হয় মাথার পাগড়িও। একপর্যায়ে তিনি বেরিয়ে যেতে চাইলে পেছন থেকে এসে তাকে লাথি মারে এক যুবক।
ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার একজন শিক্ষকের এ ধরনের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন অনেকেই।
প্রভাষক মাসুদুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক-স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর ৩৬তম বিসিএসের মাধ্যমে যোগ দেন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে। নিজ সততা ও সদাচারণের গুনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে ভীষণ জনপ্রিয় তিনি।