সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মারধোর করার ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্ররাই তাদের মেরেছে বলে শোনা যাচ্ছে। ঘটনা যতোটুকু জানা গেছে, আন্দোলনরত শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য যখন নিজ কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছিলেন তখন তাকে ধাক্কা দিয়েছিলেন, আর এই প্রেক্ষিত একটি ছাত্র সংগঠনের ছাত্ররা আন্দোলনরত শিক্ষকদের উপর ব্যাপকভাবে চড়াও হয়! এতে বেশ কিছু শিক্ষক আহত হয়েছেন।
কোন ঘটনাটি সত্য আর কোনটি মিথ্যা সেটি অবশ্য বিবেচনার দাবি রাখে। অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, এই পুরো ঘটনার মাঝেই একটা পৈশাচিক ব্যাপার কাজ করেছে। সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠে এই ধরনের শারীরিক আঘাত কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
গুগলে সার্চ দিয়ে দেখলাম, পৃথিবীর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোন কারনে খবরের শিরোনামে আসে। দেখলাম কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ইবোলা ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করছে, কেউ আবার বৈপ্লবিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এরকম কারণেই খবরের শিরোনাম হচ্ছে তারা। আর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিরোনাম হয় হত্যা, মারামারি, ধর্ষণ ইত্যাদির কারণে।
এ থেকেই বোঝা যায় আমরা মানুষ হিসেবে কতোটা হিংস্র হয়ে উঠছি। সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে পুরো দেশের কী অবস্থা সেটাও বোঝা যায়!
এইতো কিছুদিন আগেই বর্বর উপায়ে শিশু হত্যা নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছিলো। এই যে শিশুদের পৈশাচিক উপায়ে হত্যা করা হচ্ছে, এর কিন্তু একটা সামাজিক প্রভাব রয়েছে। আপনি যে সমাজে বসবাস করবেন, সেই সমাজের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রদের একটা আলাদা অবস্থান রয়েছে। প্রায় সব সমাজেই এই মানুষগুলোকে জাতির বিবেক হিসেবে ধরে নেয়া হয়। যারা দেশ ও জাতির জন্য কাজ করবে, ভবিষ্যতে সমাজ গড়ার কারিগর হবে। অর্থাৎ সমাজের বাকি মানুষগুলো তাদের আদর্শ হিসেবে মনে করে।
এই যে আজ সিলেটে শিক্ষক মারধোরের ঘটনা ঘটলো, অনেকে হয়তো মনে করবে; একটা ঘটনা ঘটে গেছে, ভুল হয়েছে, আর হবে না ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু সমাজে এর প্রভাব কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী। কিছুদিন আগে এক মন্ত্রী একজন রিক্সাওয়ালা ও মোটর সাইকেল আরোহীকে কানে ধরতে বলেছেন, এই ধরনের একটা খবর বেরিয়েছিলো। সমাজে এর প্রভাবও কিন্তু খুব নেতিবাচক।
একজন শিশু যে কিনা সব কিছু দেখে শিখছে, সে কিন্তু দেখলো বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় শারীরিকভাবে শিক্ষকদের পর্যন্ত লাঞ্ছিত করা যায়! যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর প্রকাশ্য, দিবালোকে নির্যাতন করা যায় সেখানে বড় হয়ে শিশুদের উপর নির্যাতন করা হয়তো তার জন্য সাধারণ ব্যাপার হবে! যে কোনো সভ্য সমাজে ফিজিক্যাল এসাল্ট কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক থেকে শুরু করে সমাজে যারা প্রতিষ্ঠিত, যাদের কাছ থেকে অন্যরা শিখবে তাদের এই সব বিষয়ে সতর্ক হওয়া উচিত। নইলে ভবিষ্যতে এই ধরণের ঘটনা ঘটলে নিজেদের দায় এড়ানোর সুযোগ থাকবে না।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)