শ্রেণিকক্ষে লেকচার দেয়ার সময় আমি বিভিন্ন ইস্যুতে উদাহরণের সুবিধার্থে মাঝেমধ্যেই নানা রকমের নৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করি।
আলোচনা করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে; শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারিপ্বার্শিকতা নিয়ে চিন্তা ভাবনার উদ্রেক ঘটানো, সমাজ সমন্ধে অবগত হওয়া, সমাজে প্রচলিত রীতি নীতি ধারণ করা ও ভাল কাজগুলোর সাথে সম্পৃক্ত হওয়া ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখার বিষয়ে সতর্ক ও অবগত করা। সর্বোপরি আমি এ কথাটি স্পষ্টাক্ষরে বলি যে, আপনি যতই উচ্চশিক্ষিত, সম্পদশালী, প্রভাবশালী হোন না কেন সবকিছুই বুমেরাং হয়ে যাবে যদি না আপনি ভাল মানুষ হোন।
কাজেই, মানবিক মানুষ, বিবেকসম্পন্ন মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য সকলেরই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা বাঞ্ছনীয়। আর ভাল মানুষ হতে হলে আপনাকে অবশ্যই উন্নত চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। আর উন্নত চরিত্রের অধিকারী হবার মৌলিক শিক্ষা প্রত্যেকটি ছেলে বা মেয়ে মূলত পরিবার থেকেই পেয়ে থাকে।
পরিবার ও সমাজ উন্নত চরিত্রের অধিকারী ছেলে বা মেয়ে গড়ার ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করে থাকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত নার্সারিং করে থাকে শিক্ষার্থীদের, চিন্তা চেতনার জায়গাকে প্রস্ফূটিত করার প্রচেষ্টা চালায়, কিন্তু মূল কাজটি করে থাকে পরিবার।
মানুষ গড়ার কারিগর হচ্ছেন শিক্ষক সমাজ। আপনি যতই অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হোন না কেন, দক্ষ ও পরিশীলিত মানবসম্পদ তৈরি ব্যতিরেকে স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন কখনোই সম্ভবপর হবে না। আর স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন তখনই হবে যখন আমাদের তরুণ সমাজ মানবিক মানুষ হিসেবে দায়িত্বশীল ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে। নিজের যোগ্যতা, পরিশ্রম ও প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সমন্বয়ে ব্যতিক্রম ও ভাল কাজ করার প্রচেষ্টা চালাবে তরুণ প্রজন্মের সারথিরা।
অগ্রজদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন, অনুজদের প্রতি স্নেহাস্পদ আচরণ প্রদর্শনের মাধ্যমে সকলের জন্য বসবাস উপযোগী সমাজ নির্মাণই কাম্য। অন্যের বিপদে এগিয়ে আসার মানসিকতা বপন করতে হবে, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বরগুনার ঘটনাটি আমাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে সামাজিক অবক্ষয়, নৈতিক স্ফলন ও যুব সমাজের অধ:পতনের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে।
যুব সমাজ যদি মানবিক গুণসম্পন্ন হতো তাহলে প্রকাশ্যে দিবালোকে কুপিয়ে হত্যার মুহূর্তে সাহায্য করার জন্য কেউ না কেউ এগিয়ে আসতো। কাজেই তরুণ সমাজকে সামাজিক বাস্তবতা বিবেচনায় ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণের নিমিত্তে উন্নত চরিত্রের ও আধুনিক মানসিকতা সম্পন্ন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।
আর তরুণ সমাজকে অগ্রগামী, উদ্যমী, পরিশীলিত ও উন্নত আচরণে আদিষ্ট হিসেবে তৈরি করার ক্ষেত্রে শিক্ষক সমাজের ভূমিকা অগ্রগণ্য। অস্বীকার করার উপায় নেই, প্রতিনিয়ত শিক্ষক সমাজকে নানাভাবে হেঁয় করা হচ্ছে। আমরা সব ক্ষেত্রেই উন্নত রাষ্ট্রে উদাহরণ তুলে ধরে নিজেদের পরিবর্তনের জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছি, জনসাধারণকে একীভূত করে রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন কর্মকান্ডে অব্যাহত প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কিন্তু একটিবারের জন্য কেউও বলছি না, উন্নত রাষ্ট্রে শিক্ষকদের অবস্থান কোথায় রাখা হয়েছে?
উন্নত রাষ্ট্রে শিক্ষকদের অবস্থান সবার উর্ধ্বে। আমরা উন্নত রাষ্ট্রের চর্চা করি আর শিক্ষকদের অবমূল্যায়ন করি, তাহলে আমরা কিভাবে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে পৌঁছাবো? রাষ্ট্রীয়ভাবে শিক্ষক সমাজকে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে, শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের কিন্তু সরকার সেদিকে নজর দিচ্ছে না।
সরকার, সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধা বারংবার বৃদ্ধি করলেও শিক্ষক সমাজের সাথে সে বিবেচনায় সুযোগ সুবিধাদি বৃদ্ধি করেনি। কিছুদিন পূর্বে দেখেছি সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ি কেনার জন্য বিনা সুদে ব্যাংক থেকে ঋণ দেওয়া হচ্ছে এবং ঐ সব কর্মকর্তাদের গাড়ী পরিচর্যার জন্য আলাদা খরচ বহন করছে সরকার। এসব কিসের আলামত?
ইচ্ছে করে কি একটি পক্ষকে খুশি করা হচ্ছে নাকি সুযোগ সুবিধাদি বৃদ্ধির বিষয়টি সরকারি কর্মকর্তাদের হাতে ন্যস্ত থাকে বিধায় তারা নিজেদের খেয়াল খুশি মতো সুবিধা নিচ্ছে অন্যদের বঞ্চিত করে। বিষয়টি অত্যন্ত গর্হিত ও অবমাননাকর। ৫% সুদে শিক্ষকদের গৃহ ঋণ প্রদানের ঘোষণা আসলেও অজানা কারণে এখনো তা বাস্তবায়িত হয়নি।
রাষ্ট্রীয়ভাবে শিক্ষক সমাজকে বিভিন্ন পেশাজীবীদের তুলনায় হেঁয় করা হচ্ছে, অন্যান্য পেশাজীবীদের যেখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে নানা রকমের সুযোগ সুবিধার আওতায় আনা হচ্ছে সেখানে শিক্ষক সমাজের প্রশ্নে দৈন্যতার বহি:প্রকাশ দেখা যায়। অথচ শিক্ষক সমাজই বিভিন্ন উদ্ভাবন, পলিসি প্রণয়ন, এককথায় নীতি নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত থেকে দেশের ইতিবাচক পরিবর্তন আনয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
একটি কথা এখানে স্পষ্ট করে বলে রাখা প্রয়োজন শিক্ষকদের প্রতিনিয়ত নতুন জ্ঞানের অনুসন্ধান করতে হয়, শিক্ষার্থীদের একাডেমিক মনোবৃত্তির পরিপূর্ণতা প্রদানের জন্য অধিকাংশ সময়ই অধ্যয়ন ও ব্যবহারিক কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে হয়। পাশাপাশি শিক্ষকদের পদোন্নতির জন্য মৌলিক গবেষণার প্রয়োজন হয়। মৌলিক গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন সেক্টরে তার প্রয়োগের মাধ্যমে উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিবর্তন আনা সম্ভব হচ্ছে।
আবার কেউ কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন; বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অধ্যাপনার পাশাপাশি মৌলিক গবেষণা করতে হয়; এ সব জেনে বুঝেই আপনারা এ পেশায় যোগদান করেছেন। অধ্যাপনা করতে হলে প্রতিদিনি আপনাকে একাডেমিক কারিকুলামের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে নিজের মধ্যে নতুনত্ব নিয়ে আসতে হবে, ছাত্রদের মধ্যে উদ্ভাবনী শক্তির সঞ্চার ঘটাতে হবে। সুতরাং আপনারা সরকারি সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তির বিষয়ে মনোনিবেশ না করে অধ্যাপনায় মনোযোগ দেন।
উল্লেখ করার মতো বিষয় হচ্ছে; অন্যান্য পেশায় সাধারণত অফিস চলাকালিন সময়ের বাইরে খুব বেশি অধ্যয়নের প্রয়োজন রয়েছে কিংবা বড় বড় কর্মকর্তারা উদ্ভাবনমূলক আবিষ্কার করেছেন মর্মে সংবাদের শিরোনাম হয় না। শিরোনাম হয় দুর্নীতির দায়ে অমুক অফিসের তমুক কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে পুলিশের নিকট গ্রেপ্তার হয়েছে অনেক নামী দামী বড় কর্মকর্তা।
সম্প্রতি বালিশ কর্মকাণ্ডে দুর্নীতির যে মোচড় আমরা অবলোকন করেছি তা কিন্তু সরকারের বড় বড় কর্মকর্তাদের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে। আবার এমন গর্হিত ঘটনা ঘটছে, যেখানে দেখা যায় মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে মন্ত্রণালয়ের অনেক বড় কর্মকর্তা চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি করেছে এবং পরবর্তীতে সে তথ্যও প্রকাশ পেয়েছে।
বাংলাদেশে দুর্নীতির মাত্রা পর্যালোচনার জন্য বিভিন্ন সংস্থার জরিপে যে চিত্র বাস্তবায়িত হয়ে থাকে সেখানেও দেখা যায় সরকারি অফিসগুলো দুর্নীতিগ্রস্থ। তার পরেও কেনইবা, প্রতিনিয়ত সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিদের জন্য লাগামহীনভাবে সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
বিষয়টা বোধগম্য নয়! বিপরীতদিকে শিক্ষক সমাজ যাঁরা মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্যতম শিক্ষা নিয়ে গবেষণা, ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে পঠন পাঠন, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধকরণ, উদ্ভাবনীমূলক আবিষ্কারে অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা প্রদান করে প্রতিনিয়ত নিরলস প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে তাদের যৌক্তিক দাবি দাওয়া পূরণ করতেও কর্তৃপক্ষ দ্বিধান্বিত থাকে।
কাজেই, এখন সময় এসেছে সব কিছু মূল্যায়নের, বুঝতে হবে কারা দেশের মেধাশক্তি বিনির্মাণের চাবিকাঠি, তাদেরকে অবশ্যই যথার্থ এবং সময়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে মূল্যায়ন ব্যতিরেকে সুষ্ঠু সমাজ গঠন ও দক্ষ মানবসম্পদ গঠন অসম্ভব।
আচ্ছা আপনাদের কথায় মেনে নিলাম; তাই বলে কি শিক্ষকদের আজন্ম লালিত সম্মানটুকু নিয়ে আপনারা ছেলেখেলা করবেন? সম্মানের জায়গা বিবেচনায় নিয়ে এখনো দেশের মেধাবী প্রজন্ম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাকে ব্রত হিসেবে গ্রহণ করে। কিন্তু মাঝে মধ্যেই সারা বাংলাদেশে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনার খবর পত্রিকার পাতায় খবরের শিরোনাম হয়।
খবরগুলো কতটা লজ্জার এবং ন্যাক্কারজনক সে বিষয়ে আমরা কেউই ভ্রুক্ষেপ করছি না। আবার এমনও হচ্ছে, সব লাঞ্ছনার খবর পত্রিকার পাতায় আসছে না। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে; শিক্ষক সমাজের সামাজিক অবস্থা পূর্বের ন্যায় সুসংহত অবস্থায় আর নেই। লাঞ্ছনার ঘটনাগুলো যে বিচ্ছিন্ন তা নয়, ধারাবাহিকভাবে একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলেছে আমাদের দেশে।
সর্বশেষ যে ঘটনাটি আমাদের মজ্জাকে বেদনাগ্রস্থ করেছে তা হল: বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের ইংরেজি বিভাগের উপদেষ্টা মাসুদ মাহমুদ ছাত্রের হাতে লাঞ্ছিত হবার ঘটনাটি। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে পুলিশ আটক করেছে। একবার ভাবা যায়, ঘটনাটি কতটা নির্মম; একজন সিনিয়র অধ্যাপকের গায়ে কেরোসিন ঢেলে দেওয়া হয়েছিল, যদি শলাকার আগুন শরীরে দেওয়া হতো তাহলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যেতেন।
বিষয়টা কী দাঁড়ালো; শিক্ষার্থীদের কাছে একজন শিক্ষক নিরাপদ নয়। অবশ্য ধানে চিটা থাকবেই। উক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল; সাহিত্য বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে অপ্রাসঙ্গিকভাবে যৌনতা বিষয়ে তুলে ধরে প্রকারান্তরে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করেছেন। এ মর্মে তারা শিক্ষা উপমন্ত্রীর নিকট একটি স্মারকলিপি দেন যেখানে ইংরেজি বিভাগের ২৬৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২২ জনের স্বাক্ষর ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই যৌন হয়রানির অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করে আসছিল।
হামলার পিছনে প্রকৃত কারণ হচ্ছে, ক্লাসে উপস্থিত না হওয়ার কারণে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অযোগ্যতা এবং বিভাগের চাকরিচ্যুত কিছু শিক্ষকের ইন্ধন (মাসুদ মাহমুদ কয়েকজনকে চাকরিচ্যুত করে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেন)। শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত উপস্থিত না হলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি কোন শিক্ষক স্বাভাবিকভাবেই দিবেন না। সেখানে যারা অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা যারা এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে শিক্ষকের গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিয়েছে তারা মূলত ধানের মধ্যে চিটা ছাড়া আর কিছুই নয়।
উন্নত বিশ্বে (যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, জাপান) শিক্ষক লাঞ্ছনার এ ধরনের গর্হিত ঘটনা ঘটে থাকলে সাথে সাথে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করে দোষীদের যে কোন মূল্যে শাস্তির বিধান নিশ্চিত করা হতো। অথচ, এখনো আমাদের দেশে এ বিষয়ে জোরালো কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। কয়েকদিন নিউজটি পত্রিকার পাতায় আসবে, পরবর্তীতে একটা সময়ে এ ঘটনার বিষয়ে কারো কোন ভ্রুক্ষেপ লক্ষ্য করা যাবে না। ঘটনাটি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক, তড়িৎগতিতে এর সাথে দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করার জোর দাবি জানাচ্ছি, অন্যথায় এ ধরনের ঘটনা ক্রমান্বয়ে ঘটতেই থাকবে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)