“Valuing Teachers, Improving their Status” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্বের প্রায় ১০০টির মত দেশে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিক্ষক দিবস। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে উপরোক্ত প্রতিপাদ্যটি আলাদা গুরুত্বের দাবি রাখে। শিক্ষা, শিক্ষার মান ও শিক্ষকদের অধিকার নিয়ে বাংলাদেশে যত আলোচনা হয়, বিশ্বে আর কোথাও তা হয় কিনা সন্দেহ আছে।
আমাদের এখানে যারা শিক্ষক হচ্ছন বিশেষ করে স্কুল কলেজ পর্যায়ে, তাদের বেশির ভাগই স্রেফ ঠেকায় পড়ে কিংবা কর্মজীবনের আর কোন উপায়ন্তর না পেয়ে শেষ পর্যন্ত বিশেষ ব্যবস্থায় শিক্ষকতা পেশায় ঢুকে গেছেন। যদিও গুরুত্ব বিবেচনায় দেশের সবচেয়ে মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আসার কথা ছিল। তা না হওয়ার পিছনে দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক উদ্যোগহীনতাই দায়ী।
ইদানিং যদিও মেধাবীদের অনেকেই শিক্ষকতায় আসছেন, আসার আগ্রহ দেখাচ্ছেন, দেখা যাচ্ছে এ পেশায় আসার পর তাদের অনেককেই শেষ পর্যন্ত আর ধরে রাখা যাচ্ছে না । ‘বেটার চান্স’ পেয়ে তারা শিক্ষকতা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। কিন্তু একজন তুখোর মেধাবী তরুণের কাছে পেশা হিসেবে ‘শিক্ষকতা’ই ‘বেটার চান্স’ বিবেচ্য হওয়া উচিত ছিল। জাতি হিসেবে এটা আমাদের চরম দূর্ভাগ্য ! যার খেসারত কিন্তু আমরা এখনো দিয়ে যাচ্ছি।
দেশের প্রাথমিক শিক্ষার প্রায় শতভাগ সরকারি। এ স্তরের শিক্ষকদের চাকরি সরকারি হওয়ায় অপেক্ষাকৃত ভালো ও মেধাবীরা ইদানিং প্রাথমিক বিদ্যালয় হলেও শিক্ষকতায় যোগ দিচ্ছেন। অপরদিকে দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার প্রায় ৯৭ ভাগ বেসরকারী নির্ভর। সরকারি এমপিও কিছু আর্থিক সুবিধার ভিত্তিতে এই স্তরের শিক্ষা পরিচালিত হয়ে আসছে।
উচ্চ শিক্ষাগুলো স্বায়ত্বশাসিত ও ব্যক্তিমালিকানাধীন। উচ্চ শিক্ষায় যারা শিক্ষকতা করছেন, তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও মান-মর্যাদার সাথে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের মানগত ব্যবধান আকাশ-পাতাল। কিন্তু শিক্ষকের মর্যাদা ও তার আর্থসামাজিক অবস্থান একই হওয়া উচিত ছিল। এরকম না হওয়ার পিছনে রাষ্ট্রচালকদের ভূমিকাই দায়ী।
তবে, খুব অল্প বিস্তর হলেও শিক্ষার প্রায় প্রতিটি স্তরে শিক্ষকদের অবস্থান আগের চেয়ে পরিবর্তন হয়েছে । এই সামান্য পরিবর্তনের কল্যাণেই এখন অপেক্ষাকৃত ভালোরা এই পেশায় আসার জন্য আগ্রহী হচ্ছেন। এর বাস্তব উদাহরণ লাখ লাখ শিক্ষিত তরুণ এনটিআরসির অধীনে শিক্ষক হওয়ার নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।
শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে মেধাবী তরুণদের কাছে অধিকতর আগ্রহী করে তোলার জন্য সরকারকে বাস্তবোচিত উদ্দ্যোগ এবং তার প্রয়োগ দেখাতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের সবচেয়ে মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আনা গেলে আগামী ১৫/২০ বছরে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের চেহারা বদলে যাবে।
কারণ মেধাবী শিক্ষক একটি মেধাবী প্রজন্ম সৃষ্টি করবে। যারা আগামী দিনে দেশের আমূল পরিবর্তনে মুখ্য ভূমিকা রাখবে। শেষ বাক্যটি এটিই হবে শিক্ষকদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হোক। শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীদের আসার পথ সুগম হোক।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)