চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

শাওয়াল মাসের ছয় রোজা: গুরুত্ব ও ফজিলত

আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত ও গোলামী করার জন্যই তিনি মানুষ ও জ্বীন জাতিকে সৃজন করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা বলেন, “আমি জ্বীন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি এ জন্য যে তারা আমারই ইবাদত করবে” (সূরা আল-জারিআত- ৫৬)। আল্লাহর কাছে নফল ইবাদত ও নফল সিজদা’র গুরুত্ব অনেক বেশি।

হিজরি ১০ম মাস তথা রমজানের পরবর্তী মাস ‘শাওয়াল’। এ মাসে ছয়টি নফল রোজা রাখা সুন্নাত, যদিও তা শরীয়তী পরিভাষায় ‘নফল’ হিসেবে পরিচিত। হাদিস শরীফে এর বহু ফজিলতও বর্ণিত হয়েছে। হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখলো, এরপর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখলো, সে যেন গোটা বছর রোজা রাখলো” (সহিহ মুসলিম)। হযরত সাওবান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “রমজানের রোজা দশ মাসের আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দু’মাসের রোজার সমান, সব মিলিয়ে এক বছরের রোজা” (নাসায়ী শরিফ)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, “রমজান মাসের রোজা হচ্ছে ১০ মাসের সমান। আর ছয় দিনের রোজা হচ্ছে দুই মাসের সমান। এভাবে এক বছরের রোজা হয়ে গেল” (সহিহ ইবনে খুজাইমা)।

উপযুক্ত হাদিসে বলা হয়েছে, রমজানের রোজা রাখার পর শাওয়ালের ৬টি রোজা রাখলে সারা বছর রোজা রাখার সাওয়াব পাওয়া যাবে। হিসেবটি হলো এরূপ- আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, “যে ১টি নেক আমল করবে, সে ১০ গুণ সাওয়াব পাবে” (সূরা আনআম- ১৬০)। আর এ হিসেবে মাহে রমজানের ৩০ টি ফরজ রোজায় ৩০০ রোজার সাওয়াব পাওয়া যাবে (৩০*১০=৩০০)। অন্যদিকে মাহে শাওয়ালের ৬টি রোজায় ৬০ রোজার সাওয়াব পাওয়া যাবে (৬*১০=৬০)। তাহলে দেখা যায়, মাহে রমজানের ৩০ রোজার বিপরীতে ৩০০ রোজা ও মাহে শাওয়ালে ৬ রোজার বিপরীতে ৬০ রোজার সাওয়াব পাওয়া যাচ্ছে, মোট ৩৬০ রোজার সাওয়াব। আমরা জানি, ৩৬০ দিনে হিজরি বা চন্দ্র এক বছর হয়ে থাকে। তাই মাহে রমজানের ৩০ রোজা ও মাহে শাওয়ালে ৬ রোজা আদায় করলে এক বছর রোজার সাওয়াব পাওয়া যায় (সুবহান আল্লাহ)।

একজন মানুষ ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি অধিকহারে নফল ইবাদত-রিয়াজত করতে করতে আল্লাহর বান্দা হতে বন্ধুতে পরিণত হয়ে যায়। নফল ইবাদত করার মাধ্যমে আল্লাহ নৈকট্য লাভ করা যায়। হযরত হাসান বসরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী আজমেরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি সহ বিশ্ব বিখ্যাত যত অলি-বুজুর্গ রয়েছেন, তাদের জীবনী পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে তারা প্রচুর পরিমাণে নফল ইবাদতে সময় ব্যয় করেছেন। আর এ কারণেই তাঁরা সকলেই আল্লাহ নিকটবর্তী হয়েছেন। তাদের ইন্তেকালের পরও ভিন্ন দেশ থেকে তাদের আলোচনা করা হচ্ছে। কুরআনুল কারিমে এসেছে, “আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবেন না” (সূরা ইউনুস- ৬২)।

আসুন, মাহে রমজানে সকল রোজা সঠিকভাবে আদায়ের পর মাহে শাওয়ালে ৬টি রোজা রাখার নিয়ত করি। শাওয়াল মাসের পহেলা তারিখ তথা ঈদুল ফিতর দিবস ব্যতীত শাওয়ালের সকল দিবসের মধ্যে এ নফল রোজা রাখা যাবে। আল্লাহ আমাদের সকলের মাহে রমজানের ফরজ রোজা কবুল করুন ও শাওয়ালের ৬টি রোজা থাকার তাওফিক প্রদান করুন, আমিন।