সম্প্রচারসহ যে কোনো মাধ্যমের সাংবাদিকতায় নীতি-নৈতিকতার শিক্ষাগ্রহণ এবং কর্মক্ষেত্রে তার প্রয়োগ অনেক বেশি জরুরি বলে মনে করেন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের বিএসএস (সম্মান) তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা টেলিভিশন ও সম্প্রচার সাংবাদিকতা বিষয়ে ধারণা নিতে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে চ্যানেল আই কার্যালয় পরিদর্শনে আসেন। তাদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
চ্যানেল আইয়ের কনফারেন্স রুমে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তব্যে শাইখ সিরাজ বলেন, সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের সবচেয়ে বড় শত্রু খ্যাতি ও সম্পদের লোভ। এই লোভ সংবরণ করে পেশার প্রতি পুরোপুরি নিবেদিত হলে একজন সাংবাদিক নিজের ক্যারিয়ারে যথাযথভাবেই স্থায়ী খ্যাতি অর্জন করতে পারবেন।
তিনি বলেন, ‘সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা আমরা সবাই চাই। কিন্তু স্বাধীনতা মানেই স্বেচ্ছাচারিতা নয়। জনগণকে আমরা প্রয়োজনীয় অনেক কিছু দেখাতে ও জানাতে পারি, কিন্তু সবকিছু নয়। দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থান থেকে মানুষকে কতটা জানানো উচিত বা কল্যাণকর সেটা আমাদেরকে নিজ দায়িত্ববোধ থেকে ভাবতে হবে। সংবাদমাধ্যম সবসময়ই রাষ্ট্রের কাছ থেকে কমবেশি চাপের মধ্যে থাকে। একে আমি অনৈতিক মনে করি না। কারণ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার কথাও আমাদের সংবাদ প্রচারের সময় ভাবতে হবে।’
‘কোনো সংবাদমাধ্যমই একে অপরের প্রতিপক্ষ নয়। ‘উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অনলাইন মাধ্যম এখন অনেকটা দাপটের সঙ্গেই ভূমিকা রাখছে সংবাদমাধ্যম হিসেবে। কারণ হচ্ছে এর দ্রুতগতি। তারপরও কিন্তু কনভেনশনাল টেলিভিশনের কদর কমেনি। বরং অনেক ক্ষেত্রে, বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ বা সংকটপূর্ণ ঘটনায় এর বিশ্বাসযোগ্যতা অন্য অনেক মাধ্যমের চেয়ে অনেক বেশি।’
প্রযুক্তির কল্যাণে নাগরিক সাংবাদিকতা এখন অনেক এগিয়ে গেছে মন্তব্য করে চ্যানেল আইয়ের বার্তা প্রধান বলেন, ‘কিন্তু তারপরও একটি বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যমের পেশাদার সাংবাদিক যখন ঘটনাস্থলে গিয়ে সংবাদটা যাচাই করেন তখন ঘটনার গভীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসে। তখন সত্যটা স্পষ্টভাবে জানা সম্ভব হয় এবং নাগরিক সাংবাদিকের সংবাদ আরও অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্যতা পায়।’
তবে প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে শুধু ঘরে বসে সাংবাদিকতা করার চেষ্টা না করে মাঠে নেমে সংবাদ সংগ্রহের প্রতি শাইখ সিরাজ বেশি গুরুত্ব দেন। বলেন, যতদিন যাচ্ছে, সাংবাদিকতা ততই প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়ছে। এটি ব্যক্তিশিক্ষার জন্য ক্ষতিকর। তাই মাঠ ছাড়া যাবে না। ঘটনাস্থলে গিয়ে সাংবাদিকতা করলে ঘটনা সম্পর্কে নিজে তথ্য সংগ্রহ করা যায়, নিজ থেকে পরিস্থিতি বোঝা যায়। এর সঙ্গে নিজের নীতিবোধ মিলিয়ে রিপোর্টিং করলে সেটি পূর্ণতা পায়।
তিনি বলেন, কৃষিসহ সব ইস্যু নিয়েই উন্নয়ন সাংবাদিকতা করার সুযোগ রয়েছে। তাই জনগণের উন্নয়নে এ ধরণের সাংবাদিকতায় এগিয়ে আসতে জাবি শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান চ্যানেল আইয়ের বার্তা প্রধান।
চ্যানেল আইয়ের বার্তা সম্পাদক এবং চ্যানেল আই অনলাইনের সম্পাদক জাহিদ নেওয়াজ খান বলেন, ‘সাংবাদিকতা বিষয়টি এখন আর প্রথাগত সাংবাদিকতায় সীমাবদ্ধ নেই। একজন সাংবাদিককে শুধু ভালো লিখতে পারলে বা অনেক বেশি সূত্র থেকে সংবাদ সংগ্রহ করতে পারলেই হবে না। তাকে একই সঙ্গে একটি রিপোর্ট তৈরির সবগুলো কাজ সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে।’
গত দশ বছরে সাংবাদিকতায় যে পরিবর্তন এসেছে তার সদ্ব্যবহার করে চ্যালেঞ্জগুলোকে কাজে লাগিয়ে যোগ্য সাংবাদিক হয়ে উঠতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সাংবাদিকতা বিভাগে পড়লে যে সাংবাদিকই হতে হবে এমন কোনো কথা নেই- মন্তব্য করে জাহিদ নেওয়াজ খান বলেন, ‘যে খাতেই ক্যারিয়ার গড়া হোক না কেন, সাংবাদিকতার শিক্ষা সেখানে কাজে লাগাতে হবে। প্রচুর পরিমাণে তথ্য জানতে হবে। তাহলেই একটা সময় একজন সাংবাদিক তথ্য সমৃদ্ধ ও জ্ঞানী হয়ে উঠতে পারবে।’
বক্তব্য শেষে উপস্থিত জাবি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন শাইখ সিরাজ। টেলিভিশন চ্যানেলে সংবাদ সংগ্রহ থেকে প্রচার পর্যন্ত বিভিন্ন প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি আলোচনা করেন ও ব্যাখ্যা দেন।
পরে শিক্ষার্থীদের চ্যানেল আইয়ের সংবাদকক্ষসহ বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখানোর পাশাপাশি টেলিভিশনের জন্য সংবাদ প্রচারের যে প্রক্রিয়া তা দেখানো হয়।