চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

শহীদ জননীর মৃত্যুবার্ষিকী

শহীদ জননী, কথা সাহিত্যিক ও একাত্তরের ঘাতক দালাল বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী জাহানারা ইমামের ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৯৪ সালের ২৬ জুন মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

দেশের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় নানা
কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে সর্বজন শ্রদ্ধেয় জননী সাহসিকা জাহানারা ইমামকে স্মরণ
করছে।

বিশিষ্টজনদের মতে, তার আন্দোলনের দুই দশকেরও বেশি সময় পর আজ যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং একের পর এক যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হচ্ছে, প্রধান প্রধান যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকরে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তিকে যখন বিপর্যস্ত করা সম্ভব হয়েছে, তখন অতীতের দিকে ফিরে তাকালে স্পষ্ট হয়, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম নতুন প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রবল ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার বিপরীতে যুদ্ধাপরাধীদের জন্য প্রবল যে ঘৃণার সৃষ্টি করে যেতে পেরেছেন সেটাই নতুন প্রজন্মকে জাগিয়ে দিয়েছে।

সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী বলেন, বর্তমান সময়ে জাহানারা ইমামের মতো নেতৃত্ব প্রয়োজন, যিনি টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া ঘুরে বেড়িয়ে দেশের অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করার জন্য জনগণকে উজ্জীবিত করবেন।

তিনি বলেন, জাহানারা ইমাম শরীরে ক্যান্সারের জীবাণু নিয়েও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য জনমত গড়তে সারা দেশ চষে বেরিয়েছেন।

কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইন বলেন, জাহানারা ইমাম গণআদালতের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। সফলভাবে সব শক্তিকে সংগঠিত করে আন্দোলন পরিচালনা করেছিলেন। তার আন্দোলনের পথ ধরেই দেশের শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। আরও অনেকের বিচার প্রক্রিয়া চলছে।

১৯২৯ সালের ৩ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে জন্ম নেন জাহানারা ইমাম। তার লেখা ‘একাত্তরের দিনগুলি’ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রামাণ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃত। তার বড় ছেলে শফি ইমাম রুমী উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর ছাত্র থাকা অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং গেরিলা অপারেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পরে তিনি শহীদ হন।

জাহানারা ইমামের নেতৃত্বেই প্রথম মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সারাদেশে আন্দোলন গড়ে ওঠে। তিনি ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী, ছাত্র, নারী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় কমিটি গঠন করেন। সর্বসম্মতিক্রমে তিনি ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক নির্বাচিত হন।

এই কমিটি ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ ‘গণআদালত’-এর মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একাত্তরের নরঘাতক গোলাম আযমের ঐতিহাসিক বিচার করে। গণআদালতে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে দশটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপিত হয়। ১২ জন বিচারক সমন্বয়ে গঠিত গণআদালতের চেয়ারম্যান জাহানারা ইমাম গোলাম আযমের ১০টি অপরাধ মৃত্যুদণ্ডযোগ্য বলে ঘোষণা করেন। সমবেত লাখ লাখ মানুষের পক্ষ থেকে জাহানারা ইমাম গণআদালতের রায় কার্যকর করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।

গণআদালতের ওই রায়ের পর তৎকালীন বিএনপি সরকার ২৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিসহ জাহানারা ইমামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে জামিনঅযোগ্য মামলা দায়ের করে। পরে হাইকোর্ট ওই বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জামিন দেন।

এরপর লাখো জনতার পদযাত্রার মাধ্যমে জাহানারা ইমাম ১২ এপ্রিল ১৯৯২ গণআদালতের রায় কার্যকর করার দাবি সংবলিত স্মারকলিপি নিয়ে জাতীয় সংসদের স্পীকার, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার কাছে পেশ করেন।