‘সাংবাদিকদের সাথে আমার মুখোমুখি অবস্থান কখনো ছিলো না, আজও নেই, ভবিষ্যতেও সে আশঙ্কা নেই। কারণ আমিও এই মিডিয়া থেকেই উঠে এসেছি, এই মিডিয়াতেই বড় হয়েছি। তাদের সাথে আমার দূরের সম্পর্ক নয়।’
নিজের স্মার্ট ফোন হারানোর পরিপ্রেক্ষিতে শমী কায়সারের ভাষায় সাংবাদিকদের সাথে তার ‘ভুল বোঝাবুঝি’ নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরেই অনলাইন, অফলাইনে আলোচনা-সমালোচনা তুঙ্গে। সাম্প্রতিক এই ইস্যু নিয়েই চ্যানেল আই অনলাইনকে কথাগুলো বললেন এক সময়ের ছোটপর্দার তুমুল জনপ্রিয় অভিনেত্রী শমী কায়সার।
শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সারের মেয়ে বলে নয়, নিজের প্রতিভায় পুরো ক্যারিয়ারে দ্যুতি ছড়িয়েছেন তিনি। তার অভিনয়, গ্ল্যামার আর ব্যক্তিত্ব পরবর্তী প্রজন্মের কাছে অনুসরণীয়, অনুকরণীয়। পুরো অভিনয় ক্যারিয়ারে কোনো বিতর্ক না থাকলেও গত বুধবার ব্যবসায়ী হিসেবে মস্ত বিতর্কের মুখোমুখি হলেন তিনি।
ওইদিন জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে ই-কমার্সভিত্তিক একটি পর্যটন সাইটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে গিয়েছিলেন শমী কায়সার। কেক কাটার পর তিনি তার স্মার্টফোন খুঁজে না পাওয়ার পর থেকেই ঝামেলার সূত্রপাত। এই ইভেন্টে যে সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন, তাদের অভিযোগ: মোবাইল ফোন হারানোর পর শমী কায়সার তাদের ‘চোর’ বলেছেন এবং সবাইকে তল্লাশী করতে চেয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন শমী কায়সার। মঙ্গলবার রাতে চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে বিতর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেন শমী কায়সার। সেসময় সাংবাদিকদের কখনো ‘চোর’ কিংবা তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেননি বলে দাবি করেন তিনি।
শমী কায়সার বলেন, সাংবাদিকদের আমি কেন ‘চোর’ বলতে যাব? আমি কি এই মিডিয়া থেকে উঠে আসিনি? আমি তাদেরকে চোর বলেছি, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা। সাংবাদিকদের সাথে অভদ্র আচরণ করেছি এরকম কোনো ঘটনা সেই ইভেন্টে ঘটেনি। সেই ইভেন্টে আমার ফোন হারিয়ে যায়, সেই ফোনে গুরুত্বপূর্ণ ডাটা ছিলো। মোবাইল ফোন হাতছাড়া হওয়ায় খুব স্বাভাবিকভাবেই আমি কিছুটা উদ্বিগ্ন ছিলাম। তখন কথা উঠেছিলো যে চেক হবে কিনা, সেটা আমিও বলিনি। তল্লাশীটাওতো হয়নি। এরপর তো সাংবাদিক ভাইদের ক্যামেরাতেই ধরা পড়লো যে, অন্য একটা ছেলে আমার ফোন নিয়ে চলে গেছে।
বিষয়টিকে স্রেফ ভুলবোঝাবুঝি বলে মনে করেন শমী কায়সার। তারপরও সাংবাদিক নেতাদের আহ্বানে দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিনি। এ বিষয়ে তিনি বলেন: ওইদিন যাই ঘটুক, এরইমধ্যে আমি অনলাইন, কাগজ, সোশাল মিডিয়া, টেলিভিশন গুলোতে দুঃখ প্রকাশ করেছি। যারা মনক্ষুণ্ন হয়েছেন, সবার কাছে আমি দুঃখ প্রকাশ করেছি। কারণ এই পেশার প্রতি আমার পূর্ণ সম্মান ও শ্রদ্ধা রয়েছে। কিন্তু তারপরও এই ঘটনাগুলোকে নানা রঙে ছড়ানো হচ্ছে। আমিও তো এই মিডিয়ার তৈরি, এই মিডিয়া থেকে উঠে এসেছি। অথচ নিজেরা নিজেরা কাদা ছোড়াছুড়ি করেই যাচ্ছি, আর অন্যরা সমালোচনায় মেতে উঠছে। এটা দুঃখজনক।
দুঃখ প্রকাশের পরও শমী কায়সারের নামে মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) মানহানি মামলা করেছেন এক সাংবাদিক। এ বিষয়ে জানেন কিনা জানতে চাইলে শমী কায়সার বলেন: হ্যাঁ, শুনেছি। কিন্তু দুঃখপ্রকাশ করার পরও যখন বিষয়টি আরো বাজেভাবে ছড়ানো হয়, তখন মনে হয় এরমধ্যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিছু আছে। মনে প্রশ্ন জাগে, আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে এই সুযোগে কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কিছু করছে কিনা!
প্রথম দিনের ঘটনায় যে সিনিয়র সাংবাদিকরা ভুল বুঝেছিলেন, ফেসবুকে লিখেছিলেন তারাও বিষয়টি এখন ইতিবাচকভাবে দেখছেন বলে মনে করেন শমী কায়সার। তিনি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় সবকিছু খুব দ্রুত ছড়ায়। আর শুরুতে যা ছড়িয়ে যায়, মানুষ সেটাই বিশ্বাস করে। তখন আত্মপক্ষ সমর্থনেরও জায়গা থাকে না। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা যারা করেন তাদের অনেকের সাথে আমার কথা হয়েছে, তারা পরে বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। সাংবাদিকদের সাথে আমি কখনো মুখোমুখি না, তাদের সাথে আমার শত্রুতা নেই। কিন্তু এখনো যারা এটাকে স্প্রেড করছেন, তাতে বোঝা যায় হয়তো কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার ডিগনিটি, সম্মান, এতো বছরের অ্যাচিভমেন্টগুলো ম্লান করে দিতে চাইছে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সার এবং সাবেক সংসদ সদস্য ও লেখিকা পান্না কায়সারের মেয়ে শমী কায়সার। নিজের কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ অসংখ্য সম্মাননা ও পুরস্কার অর্জন করা এই শিল্পী ইদানীং অভিনয়ে নিয়মিত নন। তবে তিনিই একমাত্র অভিনেত্রী যিনি অভিনয় জগত ছেড়ে ব্যবসাজীবনেও সফলতা অর্জন করেছেন। দ্বিতীয় বারের মতো এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক নির্বাচিত হওয়া ছাড়াও বর্তমানে তিনি ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সভাপতি।
অভিনয়ের মতো এখানেও তিনি সকলের, বিশেষ করে সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়েছেন।