পশু চিকিৎসায় নিষিদ্ধ ঔষধ ব্যবহারের ফলে বিলুপ্তির পথে প্রকৃতির ঝাড়ুদার শকুন। শকুন সংরক্ষণে পশু চিকিৎসার ঔষধ মেলোক্সিক্যাম ব্যবহারে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত দুই দশকে শকুন কমেছে ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থাৎ এক হাজারের শকুনের মধ্যে বেঁচে আছে মাত্র ১ টি। এক সময় সারা বাংলাদেশে বিস্তৃত থাকলেও বর্তমানে বৃহত্তর সিলেট ও খুলনা অঞ্চলের কিছু এলাকায় শকুনের দেখা পাওয়া যায়। এর সংখ্যা এখন নেমে এসেছে ৫শ’র নিচে।
গবেষকরা বলছেন, গরু বা গবাদিপশু চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম ও কিটোপ্রোফেন জাতীয় ঔষধ ব্যবহারের করা হয়েছে এমন গবাদিপশুর মৃতদেহ খাওয়ার ফলেই মারা যাচ্ছে শকুন। এছাড়া খাদ্য সংকট ও আবাসস্থল ধ্বংসও শকুন বিলুপ্তির অন্যতম কারণ।
শুকুন সংরক্ষণে কাজ করছে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার আইইউসিএন ও বন বিভাগ। এ নিয়ে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় কর্মশালার।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, শকুন সংরক্ষণের দায়িত্ব পুরো সমাজের। এজন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। কোনো গবাদিপশু অসুস্থ হলে তাকে যেন নিষিদ্ধ ওষুধগুলো দেয়া না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং জনমানুষের মাঝে তথ্যটি ছড়িয়ে দিতে হবে।
বাংলাদেশে সাত প্রজাতির শকুনের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। বাংলার শকুন ও সরু ঠুঁটি শকুন, আবাসিক শকুন হিসেবে এখনো টিকে আছে। তবে নিষিদ্ধ এসব ঔষধ ব্যবহার বন্ধ করা না গেলে আর বেশিদিন দেখা পাওয়া যাবে না প্রকৃতির ঝাড়ুদার শকুনের।
অতিরিক্ত সচিব ও সভাপতি, জাতীয় শকুন সংরক্ষণ কমিটি, মো. নুরুল করিম বলেন, বাংলাদেশ ছাড়া আর কোনো দেশে এখনো গ্যাজেটের মাধ্যমে ভালচার সেফ জোন ঘোষণা করা হয়নি। এই সেফ জোনগুলোকে সঠিক ব্যবস্থাপনার অধীনে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ভালচার সেফ জোন বা শকুন অভয়ারণ্য ঘোষণার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে অভিনন্দন জানান আইইউসিএন ভালচার স্পেশালিস্ট গ্রুপের কো-চেয়ার ক্রিস বাউডেন।
প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও জাতীয় শকুন সংরক্ষণ কমিটির সদস্য মুকিত মজুমদার বাবু বলেন, শকুন মরাপচা খেয়ে প্রকৃতিকে পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি রোগমুক্ত রাখছে। শকুনই একমাত্র প্রাণী, যা অ্যানথ্রাক্সের মতো জীবাণুকেও হজম করে ফেলতে পারে।
সুতরাং এ ধরণের একটি প্রাণী আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে গেলে তা আমাদের জন্যই সমস্যার কারণ হবে বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও সমান গুরুত্বপূর্ণ শকুন। তাদের পরামর্শ শকুন সংরক্ষণে ডাইক্লোফেনাক ও কিটোপ্রোফেনের পরিবর্তে পশু চিকিৎসায় সর্বস্তরে মেলোক্সিক্যাম ব্যবহারের।