এশিয়া কাপের ষষ্ঠ ম্যাচে আজ মাঠে নামবে পাকিস্তান সংযুক্ত আরব আমিরাত। প্রথম দল হিসেবে শততম আর্ন্তজাতিক টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা পাকিস্তানের প্রতিপক্ষ আজ কাগজে-কলমে আমিরাত হলেও বাস্তবে তো পাকিস্তানেরই অন্যকোন দল। আমিরশাহীদের বেশির ভাগ ক্রিকেটারই হয় পাকিস্তান থেকে আরব আমিরাতে অভিবাসী, কেউ বা পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত।
তবে ভারতের বিপক্ষে হারের পর পাকিস্তান ঘুরে দাঁড়াতে চায় আমিরাতকে হারিয়েই। আর পাকিস্তানেরই সাবেক পেস তারকা এবং অনেক দিন ধরেই আমিরাতের কোচের দায়িত্ব পালন করা আকিব জাভেদের আশা সাহসী ক্রিকেটই খেলবে তার দল।
আজ প্রতিপক্ষ হলেও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে পাকিস্তান ক্রিকেটের অনেক ঋণ। সেই ২০০৯ সাল থেকে পাকিস্তানের মাটিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নির্বাসিত হয়ে যাওয়ার পর মরুর দেশেই স্থায়ী হয়েছে পাকিস্তানের ক্রিকেট। আমিরাতই হয়ে উঠেছে পাকিস্তানের ‘হোমগ্রাউন্ড’।
এক সময় ‘শারজাহ কাপ’ হতো আমিরাতের মাটিতে। সে সময় পাকিস্তানই সবচেয়ে বেশি সমর্থন পেয়েছে অন্যান্য দলের তুলনায়। অনেক আগে থেকেই তাই আরব আমিরাত পাকিস্তানিদের জন্য ‘দ্বিতীয় ঘর’ হয়ে আছে।
তখন আরব আমিরাতের ক্রিকেট অতটা উন্নত ছিল না। আরব আমিরাত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পরিসরে অতটা উপস্থিতও থাকত না। কিন্তু যুগ বদলেছে। আমিরাতও এখন নিয়মিত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে। হয়তো এখনও নিজেদের দেশে জন্ম নেওয়া খেলোয়াড়দের নিয়ে দলটা গোছাতে পারেনি, তবে খেলে তো!
তাই পাকিস্তান সেখানে তাঁবু গাঁড়ায় আরব আমিরাতেরও লাভ বৈ ক্ষতি হয়নি তেমন। লাভ বা উপকার বা উন্নতি যে হয়েছে, সে তো এশিয়া কাপের চূড়ান্ত পর্বে আমিরাতের উত্তীর্ণ হওয়া দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
চূড়ান্ত পর্বে এসে আমিরাত শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে কী বোলিংটাই না করলো। এও তো উন্নতির স্পষ্ট চিহ্ন। ব্যাপারটা তাই পরিপূরক। পরিপূরক বলেই পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত আরব সাগরের এপাড়-ওপাড়ের দুই প্রতিবেশীই শুধু নয়, ক্রিকেটীয় বন্ধুও বটে। কেউ কেউ তো ‘ভাই’ও বলেন।
সেই বন্ধুরূপী ভাইয়েরা আজ মিরপুরের মঞ্চে একে-অপরের প্রতিপক্ষ। টি২০-তে এই প্রথম। পাকিস্তান-আমিরাত এর আগে তিনটি ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয়েছে। তিনটিতেই জয় পাকিস্তানের।
তার পরও এ আমিরাত একটু আলাদা। আর পাকিস্তানকে তো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে হারার পর আলাদা হতেই হবে। তবে যে যাই বলুন, এখন পর্যন্ত আমিরাত এ টুর্নামেন্টে যে ব্যাটিং করেছে, তাতে পাকিস্তানের বিশ্বমানের ফাস্ট বোলিং সামলানো তাদের জন্য মুশকিলই হবে হয়তো! তবে আগে বোলিং করে স্বল্পরানের মধ্যে পাকিস্তানকে আটকে দিতে পারলে হিসেব অবশ্য অন্যরকম হতে পারে।
তার ইঙ্গিত আকিব জাভেদ দিয়েছেনও। তিনি বলেন, ‘দশ বছর ধরে নিয়মিত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছে, এমন সেরা ব্যাটসম্যানকেও কাল (শনিবার) আমিরের সামনে দেখিয়েছে অসহায়। তাহলে আমার দলের ছেলেরা আর কতটুকুই বা করবে।’
এই ম্যাচ সামনে রেখে অনেক হিসেব-নিকেষ রয়েছে পাকিস্তানের। ভারতের বিপক্ষে বাজে হারের কারণে রান রেট অনেক কম থাকায় পাকিস্তানের জন্য সেটা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য এটাই সেরা ম্যাচ তাদের। তাই পুষিয়ে নেওয়ার ম্যাচ পুরনো বন্ধু বা অন্য সম্পর্কের কথা চিন্তা করার সময় কােথায়।
এর সূত্র ধরে পাকিস্তানি অলরাউন্ডার শোয়েব মালিক বলেছেন, ‘আসল ভাইরাও তো একে অপরের বিপক্ষে খেললে নিজেরাই জিততে চায়। আমাদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনাই ঘটবে।’
এই ম্যাচেও পাকিস্তানের ভরসার নাম মোহাম্মদ আমির। অল্প পুঁজি নিয়ে ভারতের বুকে যিনি কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিলেন। তবে পাকিস্তানের হয়ে আজ লাইমলাইটে থাকবেন শোয়েব মালিক ও অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি। দুজনই একটি মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। টি-২০ ফরমেটে নিজের ৩০০তম ম্যাচে আজ মাঠে নামবেন মালিক।
আর আজ তিনটি ছক্কা মারতে পারলে ডেভিড ওয়ার্নার ও মার্টিন গাপটিলকে টপকে সর্বাধিক ছক্কা হাঁকানোর তালিকায় চতুর্থ স্থানে উঠে আসবেন আফ্রিদি। ৮৫ টি-২০ ম্যাচে এ পর্যন্ত ৬৬টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন বুম বুম। ওয়ার্নার ৬৭ এবং গাপটিল মেরেছেন ৬৮টি ছক্কা। সবচেয়ে বেশি ছক্কা মেরেছেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। ৭১ ম্যাচে তার ছক্কার সংখ্যা ৯১টি। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ক্রিস গেইল মেরেছেন ৮৭টি। আর তিন নম্বরে থাকা শেন ওয়াটসনের ছক্কা সংখ্যা ৭৬টি।
আরব আমিরাতের হয়ে দৃষ্টি থাকবে অধিনায়ক আমজাদ জাভেদের উপর। পাকিস্তান বোলিং মোকাবেলা করার মতো যথেষ্ট সামর্থ রয়েছে তার। টি-২০ ফরমেটে লিস্ট এ’র ম্যাচে ১১৭ বলে ১৬৪ রানের ইনিংস খেলার রেকর্ড রয়েছে তার। আর তিন সপ্তাহ আগে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৪২ বলে ৭৬ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি।
আজকের ম্যাচে আরব আমিরাত দলে পরিবর্তনের কােনাে সম্ভাবনা নেই। তবে পাকিস্তান চার পেসার নিয়ে খেললেও মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান খুররম মঞ্জুরের জায়গায় স্পিন অলরাউন্ডার ইমাদ ওয়াসিমকে খেলাতে পারে।
টি-২০ না হলেও ওয়ানডে সাক্ষাতে ১০০ ভাগ জয়ে এগিয়ে পাকিস্তান। তবে একটা জায়গায় এখন আরব আমিরাতের চেয়ে পিছিয়ে। সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচের চারটিতে হেরেছ পাকিস্তান। সেখানে আরব আমিরাত হেরেছ তিনটিতে।
পাকিস্তান-আরব আমিরাত ম্যাচেও মিরপুরে থাকছে সবুজ উইকেট। তবে আবহাওয়ায় আদ্রতা না থাকায় ব্যাটসম্যানদের জন্যও সুযোগ থাকছে। গত ম্যাচে মোহাম্মদ আমিরের স্পেলের পর ভারতীয় ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি বলেছিলেন, নিজেদের প্রমাণের জন্য ব্যাটসম্যানদের আসলে এমন পিচই চাওয়া উচিত।
আজকের আবহাওয়া থাকবে উজ্জ্বল। বৃষ্টি-বাদলের কোনো সম্ভাবনা এখনো নেই, ওয়েদার ডটকম তেমনটাই জানিয়েছে।
এই ম্যাচের জয়-পরাজয় নিয়ে ‘ক্রিকেট কাউন্টি’ ডটকমের প্রেডিকশনের ফলাফল অবশ্য পাকিস্তানের পক্ষে। ৮৪ শতাংশ সম্ভাবনা পাকিস্তানের। ১৪ শতাংশের ধারণা জিতবে আরব আমিরাত।
সম্ভাব্য পাকিস্তান দল: শহীদ আফ্রিদি (অধিনায়ক), সারজিল খান, মোহাম্মদ হাফিজ, উমর আকমল, শোয়েব মালিক, ইমাদ ওয়াসিম/খুররম মঞ্জুর, সরফরাজ আহমেদ, আনোয়ার আলী/মোহাম্মদ নওয়াজ, ওয়াহাব রিয়াজ, মোহাম্মদ আমির ও মোহাম্মদ ইরফান।
সম্ভাব্য আরব আমিরাত দল: রোহান মুস্তাফা, মুহাম্মদ কালিম, মোহাম্মদ শাহজাদ, সাইমান আনোয়ার, মুহাম্মদ উসমান, আমজাদ জাভেদ (অধিনায়ক), মোহাম্মদ নাভেদ, সাকলাইন হাইদার, আহমেদ রেজা, এসপি পাতিল ও কাদের আহমেদ।