সেনাবাহিনী প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল নূর উদ্দিন খান দেশে ফেরার পর সেনাবাহিনীর সবাই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। সেনা সদস্যরা সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক এবং প্রেসিডেন্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) এইচ এম এরশাদের আদেশ অনুযায়ী মাঠে থাকলেও তার আদেশ পুরোপুরি অমান্য করতে পারছিলেন না। তবে প্রায় নিষ্ক্রিয় থেকে তারা আকারে-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তারা নিজেদেরকে রাজনীতির অংশ করতে চান না, এক সাবেক জেনারেলের ক্ষমতার জন্য জনগণের রক্ত ঝরাতে রাজি নন। তারপরও তাদের পক্ষে সরাসরি সর্বাধিনায়কের আদেশ অমান্য করার সুযোগ ছিল না। এক্ষেত্রে যিনি ভূমিকা রাখতে পারেন তিনি সেনাপ্রধান, কিন্তু পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী দেশে জরুরি অবস্থা জারির আগেই তিনি ঢাকা ছেড়েছিলেন। সৌদি আরবের উদ্দেশে সেনাপ্রধানের বিমান ছেড়েছিল ২৭ নভেম্বর সকাল ১০টায়, আর জরুরি অবস্থা জারি হয় ওইদিন সন্ধ্যায়।
সফর সংক্ষিপ্ত করে পাঁচদিনের জায়গায় তিনদিন পরই সেনাপ্রধান ঢাকায় ফিরে আসেন। বিমানবন্দরে অনেক সিনিয়র সেনা কর্মকর্তা অপেক্ষা করছিলেন। তারা সেখানেই সেনাপ্রধানকে দেশের অবস্থা সম্পর্কে জানান। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি সেনা সদরে গিয়ে নিজের অফিসে জরুরি বৈঠকে বসেন নূর উদ্দিন খান। সিনিয়র কর্মকর্তাদের বক্তব্য শোনার পাশাপাশি আরো কয়েক জায়গায় ফোন করে তিনি মতামত জানতে চান। ঢাকার বাইরে থাকা সিনিয়র কয়েক কর্মকর্তাকে ঢাকায় জরুরি তলব করা হয়। এর মধ্যেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে যায় যে সেনাবাহিনী ব্যক্তিস্বার্থের বদলে জনগণের পক্ষে দাঁড়াবে। তবে নিজেরা কাউকে কোনো কিছুতে বাধ্য করবে না, শুধু তাদের অবস্থান জানিয়ে সবপক্ষকে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হবে।
সেনাবাহিনীতে তখনো যে এরশাদের পক্ষে কিছু কর্মকর্তা ছিলেন না, এমন নয়। শুরুতে তারা সরাসরি সর্বাধিনায়কের সঙ্গে বৈঠকের পরামর্শ দিলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হয়। মনে করা হয়, একদিকে রাষ্ট্রপতি এবং অন্যদিকে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়কের সঙ্গে কমান্ডারদের বৈঠক হলে সেখানে সরাসরি তার আদেশ প্রত্যাখ্যানে জটিলতা হতে পারে। এর চেয়ে তাকে সেনাবাহিনীর অবস্থান জানিয়ে দেওয়াই ভালো।
সেনা সদরে কয়েকদিন যে দফায় দফায় বৈঠক হয় সেখানে কেউ কেউ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সামরিক শাসন জারির প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। কিন্তু, সেই সম্ভাবনাও নাকচ করে দেন সেনাপ্রধান। এর একটি কারণ ছিল যে তিনি কোনোভাবেই সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক ক্ষমতার যে খেলা তার অংশ করতে চাননি। সেনাবাহিনী এবং কর্মকর্তাদের বেশিরভাগও তাই মনে করতেন। সামরিক শাসন জারি না করার পক্ষে সেনা সদরের অবস্থান নেওয়ার আরেক কারণ ছিল যে তারা পরিস্থিতির উত্তরণে সাময়িকভাবে সামরিক শাসন জারির উদ্যোগ নিলে তখনকার অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে মানুষের কাছে তা প্রকারান্তরে এরশাদের পক্ষেই কোনো উদ্যোগ বলে বিবেচিত হতো যাতে পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কা ছিল। এছাড়া, সাময়িক সামরিক শাসন জারি হলে সেনাবাহিনী আরো একবার সরাসরি ক্ষমতার অংশ হয়ে গেলে তাদেরকে ব্যারাকে নিয়ে যেতে দীর্ঘ সময় লেগে যেতে পারে বলেও নূর উদ্দিন খান মনে করতেন।
সেসময় সেনাবাহিনী যে এরশাদের আদেশ অমান্য করছে এবং তাকে যে সেনাবাহিনীর শক্তির উপর ভর করে ক্ষমতায় থাকতে দেওয়া হবে না সেটা বোঝাতে একটা উপায় ছিল মোতায়েন করা সেনাবাহিনীকে ক্যান্টনমেন্টে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু, একজন পেশাদার সেনা কর্মকর্তা হিসেবে সেনাপ্রধান নূর উদ্দিন খান সরাসরি সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়কের আদেশ অমান্য করার পক্ষে ছিলেন না। তিনি চাচ্ছিলেন পট পরিবর্তন হলে নতুন রাষ্ট্রপতি এবং সশস্ত্র বাহিনীর নতুন সর্বাধিনায়কের আদেশেই সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরে যাবে যাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে তার সুপ্রিম কমান্ডারের আদেশ অমান্য করতে না হয়। সেনা সদরের এ বিবেচনাও ছিল যে হঠাৎ করে সেনাবাহিনীকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হলে দেশজুড়ে অরাজকতা সৃষ্টি হতে পারে যা পরে আর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।
তবে, এক্ষেত্রে সেনাপ্রধান সিনিয়র কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সৈনিকদের মতামত জানতেও আগ্রহী ছিলেন। ইতিহাস সাক্ষী যে সৈনিকদের চাওয়া-না চাওয়াকে পরোয়া না করার কারণে এ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতেই অতীতে অনেক রক্তাক্ত ঘটনা ঘটেছে। তিনি এরকম কোনো পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হোক সেটা কোনোভাবেই চাচ্ছিলেন না। সেজন্য সিনিয়র কিছু কর্মকর্তাকে সৈনিকদের মতামত জানার নির্দেশ দেওয়া হয়। সঙ্গে সাধারণ মানুষের আসল চাওয়াটাও যেন তারা বুঝে নেন সেই নির্দেশ দেওয়া হয়।
ওইদিন সৈনিকদের মতামত জানার জন্য যে পাঁচজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাদের একজন সেনাবাহিনীর সেসময়কার ডিরেক্টর (মিলিটারি অপারেশন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। তিনিও সেনাপ্রধানের সঙ্গে সৌদি আরব থেকে মাত্রই দেশে ফিরেছিলেন।
দেশের বাইরে আকাশে বসে দেশে জরুরি অবস্থা জারির কথা জেনেছিলেন জেনারেল ইবরাহিম। সেদিন গুরুত্বপূর্ণ ওই দায়িত্ব পালনের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনটা দানা বেঁধে উঠেছিলো অনেক বছর যাবত। কোনো সময় একটু গরম কখনো একটু ঠাণ্ডা। নব্বই’র নভেম্বরে বিরোধীরা আন্দোলনকে শক্তিশালী, চোখা ও উত্তপ্ত করতে চেষ্টা করছিলেন যাতে এরশাদ সাহেব কোনোমতেই সেটা আর দমন করতে না পারেন।
১৯৯০ সালের অক্টোবরের ১০ তারিখ ঢাকা মহানগরে কিছু রাজনৈতিক ‘দুর্ঘটনা’ ঘটে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেদিন থেকেই আন্দোলনটা অতীতের তুলনায় আরো তীব্র হয়ে যায়। সাধারণতঃ পুলিশ এবং বিডিআর এরকম আন্দোলনকে সামাল দেয়। সেনাবাহিনী সর্বাবস্থায় সবদিন মোতায়েন হয় না। সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সবশেষ বাহিনী। তাই ঘন ঘন সেনাবাহিনীকে দিয়ে জনগণের মোকাবেলা করালে জনগণেরও অসুবিধা, সেনাবাহিনীরও অসুবিধা।
জেনারেল ইবরাহিম সেসময়ের কথা স্মরণ করে বলেন: যখন ২৭ নভেম্বর শাহবাগ মোড়ের কাছে ডা. মিলন গুলিবিদ্ধ হলেন তখন হঠাৎ করেই ঢাকা মহানগরের পরিস্থিতি বদলে গেলো। তুমুল বিক্ষোভ, তুমুল প্রতিবাদ। মহাসড়ক ও রাজপথ দখল হয়ে গেলো। সবকিছুই প্রতিবাদকারী ও বিক্ষোভকারীদের আয়ত্ত্বে। এরশাদ কারফিউ জারি করলেন। মিছিল নিষিদ্ধ করলেন। এবং স্বভাবতঃই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়োজিত করলেন এবং তাদেরকে সহায়তা করার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করলেন।
তিনি জানান, তিনদিন পর যখন তিনি ও সেনাপ্রধান নূর উদ্দিন খান দেশে ফিরে এলেন তখন সেনাপ্রধানকে সবকিছু সম্যকভাবে বুঝিয়ে দিলেন চিফ অব জেনারেল স্টাফ মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আব্দুস সালাম। সেসময় ঢাকা মহানগরে যে সেনা মোতায়েন ছিলো তারা মূলতঃ ঢাকা ও মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে যাওয়া সৈনিক। ঢাকা সেনানিবাসে ছিলো ৪৬ পদাতিক ব্রিগেড, আর্মি ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেড, এন্টি এয়ারক্রাফট ব্রিগেড, আর্মি সিগন্যালস ব্রিগেড এবং যেটাকে ‘সিডান্টারি’ বলা হয় সেটা ছিল লজিস্টক বা লগ এরিয়া।
আমরা সৈনিকদের মনোভাব, রিক্সাওয়ালার মনোভাব, সাধারণ মানুষের মনোভাব এবং এমনকি গৃহবধূদের মনোভাবও যাচাই করেছি। সবাই বলছিল, তারা রাজনৈতিক পরিবর্তন কামনা করেন।
জেনারেল ইবরাহিম বলেন: আমি ডিরেক্টর মিলিটারি অপারেশন্স ছিলাম। আর যেসব ইউনিটের সেনা মোতায়েন হয়েছে সেসব ব্রিগেডের কমান্ডারসহ আমরা মোট পাঁচজন ব্রিগেডিয়ার একসঙ্গে সারারাত ঢাকা শহরে ঘুরে বেড়াতাম। উদ্দেশ্য ছিলো সবাই সরেজমিনে যেন পরিস্থিতি দেখি। বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোয়াজ্জেম, মূসা এবং ফারুক আহমেদ চৌধুরিও তখন ছিলেন। আমরা সৈনিকদের মনোভাব, রিক্সাওয়ালার মনোভাব, সাধারণ মানুষের মনোভাব এবং এমনকি গৃহবধূদের মনোভাবও যাচাই করেছি। সবাই বলছিল, তারা রাজনৈতিক পরিবর্তন কামনা করেন।
‘সৈনিকগণের মনোভাব ছিলো আমরা পরবর্তী কোনো মার্শাল-ল’র অংশীদার হতে চাই না। এ সমস্যার সমাধান যেন রাজনৈতিকভাবে হয়। দেশের মানুষের উপর গুলি চালিয়ে আমরা কোনো শাসনকে পৃষ্ঠপোষকতা করবো না। অতএব দিন ১৫ আগে সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাগণ যে মনোভাব রাষ্ট্রপতি মহোদয়কে জ্ঞাত করেছিলেন সেটাই আরো পোক্ত হয়ে গেলো,’ বলে সেনা সদরকে তাদের উপলব্ধি জানিয়েছিলেন ইবরাহিমসহ পাঁচ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল।
জেনারেল ইবরাহিম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, চিফ অব জেনারেল স্টাফ এবং সেনাবাহিনী প্রধান রাষ্ট্রপতিকে মানুষের এবং সেনাবাহিনীর মনোভাব জানিয়ে দিলেন এবং ‘আমিও অন্যান্য যেসব জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে জানানো প্রয়োজন তাদেরকে সেই তথ্য জানিয়ে দিলাম। সেসময় এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তৎকালীন রাষ্ট্রপতিকে একটি ইংরেজি লাইন বলেছিলেন: স্যার, ইউর টাইম ইজ আপ।’
এমন সব ঘটনায় এরশাদ যা বোঝার বুঝে নিয়েছিলেন জানিয়ে জেনারেল ইবরাহিম বলেন, তিনিও (এরশাদ) আর রক্তপাত চাননি। আর চাননি বলেই ৪ ডিসেম্বর পদত্যাগের ঘোষণা দেন এরশাদ।
তবে, শেষদিকে এসেও এরশাদ কিছু নাটক করতে চেয়েছিলেন। ৩ ডিসেম্বরের ঘোষণায় তিনি নির্বাচনের আগে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। সেটা যেমন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি তেমনি সেনাবাহিনীও বুঝতে পারে তাদের সাবেক প্রধান তাদের উপর ভর করে ক্ষমতা আরো দীর্ঘস্থায়ী করতে চাচ্ছেন। সে কারণেই ওই সিনিয়র কর্মকর্তা সেনাবাহিনীর পক্ষে তাকে সাফ জানিয়ে দেন যে তার সময় শেষ।
এরপরই এরশাদ বুঝতে পারেন যে তার পায়ের নীচে আর এক ইঞ্চি মাটিও নেই। তাকে সেটা বুঝাতে এবং পদত্যাগে রাজি করাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন সেসময় রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মনজুর রশীদ খান। এরশাদ পদত্যাগে রাজি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি যাতে আবার উল্টে যেতে না পারেন সেজন্য তাৎক্ষণিকভাবে জেনারেল মনজুর রাষ্ট্রপতির তথ্য সচিবের মাধ্যমে বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বেতারে ওই খবর প্রচারের ব্যবস্থা করেন। সেনা সদরও দ্রুত খবরটি প্রচার করতে বলে। এসব কারণে ওইদিন সন্ধ্যায় উপ-রাষ্ট্রপতি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ছাড়াও যে মন্ত্রীরা এরশাদের সঙ্গে ছিলেন এবং পরে বাড়ি ফিরে গেছেন তারাও আগে জানতে পারেননি যে প্রেসিডেন্ট পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাদের সবাই টেলিভিশনের খবরে তাদের জন্য চরম সেই ‘দুঃসংবাদটি’ জানতে পারেন।
এরশাদের পদত্যাগের বিষয়ে সিদ্ধান্তের প্রথম খবরটি আসে বাংলাদেশ টেলিভিশনে। বিটিভিতে তখন রাত ১০টার ইংরেজি সংবাদ চলছিল। হঠাৎ দেখা যায় সংবাদ উপস্থাপক একটু থেমে একটি কাগজ নিলেন। এরপর তিনি পড়লেন: হিয়ার ইজ অ্যা ফ্লাশ নিউজ। প্রেসিডেন্ট এরশাদ হ্যাজ ডিসাইডেড টু রিজাইন।
সাধারণ সময়ে বিটিভি’র খবর খুব বেশি মানুষ না দেখলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় ওইসময় অনেক মানুষই খবর দেখছিলেন। তবে তার চেয়েও বেশি মানুষ খবরটি জানতে পারেন বিবিসি এবং ভয়েস অব আমেরিকা থেকে। ঠিক সেসময়ই ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা খবর চলছিল। তাতে টেলিফোনে লাইভে ছিলেন সাংবাদিক গিয়াস কামাল চৌধুরী। বিটিভির খবরের কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই তিনি ফোন লাইভে জানিয়ে দেন যে আন্দোলনের মুখে প্রেসিডেন্ট এরশাদ পদত্যাগে সম্মত হয়েছেন। আর এর কয়েক মিনিটের মধ্যে শুরু হয় বিবিসি বাংলার অনুষ্ঠান। সেখানে শুরুতেই এরশাদের পদত্যাগ সিদ্ধান্ত এবং সঙ্গে প্রতিক্রিয়ার খবর জানান সাংবাদিক আতাউস সামাদ।
তিন খবরে কিছুক্ষণের মধ্যে রাজপথে নেমে আসে লাখো মানুষ। সড়কের একপাশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং অন্যপাশে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতিকৃতিসহ মিছিল চলতে থাকে। বিজয় উৎসব শুরু করে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য। ছাত্রনেতারা তখন একেকজন জননায়ক।
ঢাকার মতো জেলা শহরগুলোতেও উৎসব শুরু হয়। কয়েকদিন আগে রক্তাক্ত ময়মনসিংহের রাজপথও তখন হাজার হাজার মানুষের মিছিলে প্রকম্পিত। কিছু না জেনেই সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখার সামনে একজন পুলিশ সদস্য মিছিলকারীদের দিকে বন্দুক তাক করেন। তাকে এরশাদের খবর জানালে তিনি বন্দুকসহ মিছিলে যোগ দেন। হাজারো মানুষের মিছিল এগিয়ে যায় ২৮ নভেম্বর পুলিশের গুলিতে নিহত ফিরোজ এবং জাহাঙ্গীরের বাড়ির দিকে। হঠাৎ এতো হইচই শুনে ফিরোজের শিশু ছেলেটি কেঁদে উঠে। তারপর আবার ঘুম।
(১৯৯০ সালে ছাত্রগণঅভ্যুত্থানে জেনারেল এরশাদকে বিদায় করা রাজপথের আন্দোলন প্রত্যক্ষ করেছে পুরো বাংলাদেশ। যেভাবে এ আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে এবং তার কিছু নেপথ্য ঘটনাও অনেকের জানা। তবে, সেনাবাহিনী সমর্থন প্রত্যাহার করায় যেভাবে জেনারেল এরশাদ পায়ের নীচে মাটি হারিয়ে ফেলেন সেই ঘটনা জানা নেই বেশিরভাগ মানুষের। ৯০ সালের উত্তাল সময়ে রাজপথের পাশাপাশি ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে কী ঘটছিল সেই অজানা অধ্যায়গুলো তুলে ধরা হচ্ছে ধারাবাহিক এ প্রতিবেদনে।)