চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

লাল কার্পেটে ৮২ নারীর অভূতপূর্ব প্রতিবাদে মোড়ানো কান

দাবী: কানে নারী নির্মাতার অংশগ্রহণে বৈষম্য, সম্মানী অসমতা ও যৌন হয়রানি দূর করা

নারী নির্মাতার অংশগ্রহণে বৈষম্য, সম্মানী অসমতা ও যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে ৮২ নারী নির্মাতা-শিল্পী-প্রযোজক কলাকুশলীর অসাধারণ প্রতিবাদের সাক্ষী হল ২০১৮ সালের কান চলচ্চিত্র উৎসবের লাল কার্পেট।

উৎসবে প্যালেস ডি ফেস্টিভালের সিঁড়ি। যেখানে  এক কাতারে দাঁড়িয়েছিল হলিউড থেকে ফ্রেঞ্চ ইন্ডাস্ট্রি হয়ে বলিউডও। হলিউড অভিনেত্রী কেট ব্লাঞ্চেট, ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট থেকে মেক্সিকান সালমা হায়েক হয়ে বলিউডের নন্দিতা দাস, রসিকা দুগালরা লাল কাপের্ট-এ অসাধারণ এ প্রতিবাদের অংশীদার হয়েছেন। পাঠ করেছেন লিখিত বক্তব্য। বাহুতে বাহুতে এক হয়ে তারা দাবী তোলেন নিরাপদ কর্মস্থলের, সম্মানী সমতার এবং বৈষম্য দূর করার।

হলিউডের প্রভাবশালী প্রযোজক হার্ভি ওয়েনস্টেইনের একের পর এক যৌন কেলেংকারি ও অতঃপর জেলবাসের সাত মাস পর এ প্রতিবাদ আলোড়ন তুলেছে চলচ্চিত্র দুনিয়ায় তো বটেই আপামর মানুষের মনেও।

৭১ বছর বয়সী কান উৎসবে প্রথমবারের মত এমন প্রতিবাদের ঘটনা ঘটল। যার ফলে উঠে এসেছে একটি তথ্য যাতে লিঙ্গ বৈষম্য প্রকট। ৮২ জন নারী নির্মাতার বিপরীতে উৎসবের মর্যাদাপূর্ণ পাম ডি অর পুরস্কার প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হয়েছে ১৬৪৫ জন পুরুষ নির্মাতার সিনেমা। যা শতকরা হিসেবে পাঁচ ভাগের বেশি নয়।

প্রতিবাদ লিপি পাঠ করছেন কেট ব্লাঞ্চেট

এবারের উৎসবে কেট ব্লেঞ্চেট পাম দ্যু ওর নির্বাচনে বিচারক প্যানেলে সভাপতি হিসেবে থাকছেন। বিচারক প্যানেল আরো চার নারী বিচারক থাকছেন।  যা চলচ্চিত্র দুনিয়ার অন্যতম সেরা সম্মান হিসেবে বিবেচিত হয়। তা স্বত্বেও প্রতিবাদের নেতৃত্বে তিনি ছিলেন।

সব মিলিয়ে উৎসবের পাঁচ নারী জুরি কেট ব্লেনচেট, ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট, আভা ডুভারনে, লিয়া সিডক্স এবং বুরুন্ডিয়ান গায়িকা খাদজা নিন প্রতিবাদে অংশ নেন।

প্যালেস সিড়ির লাল কার্পেট বেয়ে উপরে ওঠার আগে ইংরেজিতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কেট ব্লেনচেট। একই লেখা ফরাসিতে পাঠ করেন ফরাসি নির্মাতা অ্যাগনেস ভার্দা। যেখানে লেখা ছিল, নারীরা পৃথিবীতে সংখ্যালঘু নয়। কিন্তু চলচ্চিত্র দুনিয়া অন্য সাক্ষ্য দিচ্ছে। আমরা এখানে ৮২ জন এক হয়েছি এটি প্রদর্শন করতে যে আমরা পরিবর্তন এবং প্রগতির জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

চলচ্চিত্র শিল্পের সিঁড়ি সবার জন্য সমান হওয়া উচিত। আমাদের দাবী আমাদের কর্মক্ষেত্র যেন বৈষম্যহীন এবং সমতার হয়। আমরা ক্যামেরার সামনে বা পেছনে আমাদের পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে চাই।’

লিখিত বক্তব্য শেষে কেট সবার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘চলুন সিঁড়ি বেয়ে উঠি।’

৮২ জনের প্রতিবাদী দলে বলিউডের হয়ে অংশ নেন ‘ফায়ার’ খ্যাত নন্দিতা দাস এবং রসিকা দুগাল। প্রতিবাদী অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন অভিনেত্রী মারিয়ন কটিলার্ড, আলজেরিয়ান সোফিয়া বটেলা এবং মেক্সিকান সালমা হায়েকের মত অভিনেত্রী।

অন্যদিকে নির্মাতাদের মধ্যে ছিলেন পেটি জেনকিন্স, আভা ডুভার্নে, হাইফা আল মনসুর। হিলদা কুয়েলি এবং মাহা দাখিল এর মত নারী সিনেমা এজেন্ট-এর পাশাপাশি প্রতিবাদী দলে ছিলেন টেলিরুড চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজক জুলি হান্টসিংগার এবং নারী চলচ্চিত্র সাংবাদিক মেলিসা সিলভারস্টেইন।

তারা প্যালেস ডি ফেস্টিভাল এর সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠে ডেবুসি থিয়েটার এর সামেন নীরব দাঁড়িয়ে থাকেন কিছুক্ষণ। পরে তারা কানের প্রতিযোগিতা বিভাগে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাওয়া ২১ সিনেমার মধ্যে তিন নারী নির্মাতার একজন, ফরাসী নারী নির্মাতা ইভা হুসোন এর ‘গার্লস অব দি সান’ এর গালা প্রিমিয়ার উদ্বোধন করেন। সিনেমাটি কুর্দিশ নারীদের যুদ্ধের ওপর ভিত্তি করে নির্মত।

বাকী দুই নারী নির্মাতা ও তাদের সিনেমা হল নাদিন লাবাকির ‘ক্যাপেরনাম’ ও এলিস রোরওয়াশার্স এর ‘হ্যাপি অ্যাজ লাজ্জারো। যা চলতি সপ্তাহে প্রিমিয়ার হবে।’

উৎসব পরিচালক থিয়েরি ফ্রেমক্স ৮২ তারকার এই প্রতিবাদ সমর্থন করেন বলে জানান। তার মতে এটি কানে তাদের ব্যক্তিত্বপূর্ণ উপস্থিতির সাক্ষ্য দেয়। কান এর মানসম্পন্ন সিনেমা বাছাইয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই নারী-পুরুষ সমতা বিধানে কান কর্তৃপক্ষ সচেষ্ট হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

প্রতিবাদে সামিল বলিউডের নন্দিতা দাস ও রসিকা দুগাল

সোমবার পর্যন্ত প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে বলে উদ্যোক্তরা গণমাধ্যমকে অবহিত করেন। কানের সমুদ্র সৈকতে সোমবার উৎসবের ডিরেক্টর্স ফোর্টনাইট এবং ক্রিটিক উইকস এর বিশেষ অনুষ্ঠান হবে। সেখানে উৎসবে সমতার বিষয় তুলে ধরবেন প্রতিবাদীরা।

এই প্রতিবাদকে আয়োজকরা তুলনা করছেন ‘টাইমস আপ’ আন্দোলনের সঙ্গে। পাশাপাশি ফরাসি ৫০১০ ইনটু ২০২০ আন্দোলনের সঙ্গে তুল্য হচ্ছে কানের প্রতিবাদ। যেখানে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে আজকের সময়েও কতটা কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয় নারীকে সামাজিক এবং পেশাদারী জীবনের সোপানে।

কয়েক বছর ধরে কানে নারী নির্মাতাদের অংশগ্রহণ বেড়ে চরলেও তা আশানুরুপ নয়। এটাই সত্য যে ৭১ বছরের কানে একবারই মাত্র কোন নারী নির্মাতার সিনেমা কান এর পাম দ্যু অর জেতে। ১৯৯৩ এর কানে জেতা সেই সিনেমার নাম ছিল‘ পিয়ানো’।