আরও একটা বছর গেল, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হত্যার বিচারের রায় কার্যকর না করতে পারার ব্যর্থতা দীর্ঘ হলো। একটি নয়, দুটি নয়; ৪৯টি বছর। তবুও সেই হিংস্র জানোয়ারদের ফাঁসির রায় বাস্তবায়ন হলো না! তাহলে আর কত বছর অপেক্ষা করতে হবে? তাহলে কি বিচার পাবে না জাতির সূর্যসন্তানরা? তাদের পরিবার-পরিজনেরা?
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের জন্য শুধু এটাই বেদনাদায়ক বিষয় নয়। আরও বড় কষ্ট আর হতাশাজনক ঘটনা হলো; দেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে জাতিকে তার কতজন মেধাবী সন্তানকে হারাতে হয়েছিল- তার সঠিক কোনো তালিকাও এই ৪৯ বছরে করতে পারেনি সরকার। যে কারণে আজও বহু শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম আজনা রয়ে গেছে নতুন প্রজন্মের কাছে।
যদিও গতকাল রোববার প্রাথমিকভাবে এবং সীমিত পরিসরে এ নিয়ে একটা তালিকা অনুমোদন করেছে সরকার। পরে তা গেজেট আকারে প্রকাশের কথা রয়েছে। সেই তালিকায় ১ হাজার ২২২ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম রয়েছে। কিন্তু আমরা জানি এই তালিকা অনেক অনেক দীর্ঘ। বিশেষ করে এখন পর্যন্ত খুঁজে না পাওয়া অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে অজানা বদ্ধভূমিতে হত্যার পর তাদের মরদেহ গুম করা হয়েছে।
আমরা জানি একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের মূলে ছিল দুই জল্লাদ, আলবদর নেতা আশরাফুজ্জামান খান এবং চৌধুরী মুঈনুদ্দীন। বিচারে তাদের ফাঁসির দণ্ড হয়েছে সেই ৭ বছর আগে, ২০১৩ সালে। কিন্তু এখনো তাদের দেশে এনে সেই বিচারের রায় কার্যকর করতে পারেনি সরকার। অথচ সেই দুই জল্লাদ পালিয়ে বা লুকিয়ে নেই। যুক্তরাজ্যে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির নেতৃত্ব দিচ্ছে। আর মাঝে মাঝেই হুংকার দিচ্ছে, ‘কেউ তাদেরকে ছুঁতেই পারবে না।’
খুনিদের এই আস্ফালন, হুংকার ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ। আমাদের প্রশ্ন- এই রাষ্ট্রটা কি এতোটাই দুর্বল, যে ফাঁসির দড়ি গলায় পরেও এত বড় ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে জঘন্য খুনিরা? কেন তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত গড়ে তোলা হচ্ছে না? কেন সেই জল্লাদদের ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না? কোথায় সমস্যা? কোথায় বাধা?
আমরা মনে করি, জাতিকে আজ এসব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময় এসেছে। রাষ্ট্র পরিচালকদের জবাব দিতে হবে; কবে হবে সেই খুনিদের ফাঁসি?