প্রয়াত সুরকার, গীতিকার, শিল্পী লাকী আখান্দকে ভারতের প্রখ্যাত শিল্পী রাহুল দেব বর্মণ ভারতে ডেকেছিলেন। সেখানে সংগীতে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ পেয়েও দেশ ছেড়ে যাননি বলে জানান সামিনা চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘রাহুল দেব বর্মণ লাকী আখান্দের একর্ডিয়ানের ভক্ত ছিলেন। তিনি লাকী আখান্দকে ভারতে ডেকেছিলেন তার সঙ্গে একর্ডিয়ান বাজানোর জন্য। কিন্তু লাকী দেশকে অসম্ভব ভালোবাসতেন। দেশের সংগীতকে ভালোবাসতেন। তিনি চেয়েছিলেন দেশে থেকে সংগীতকে রুচিশীল গান উপহার দিতে। তাই করেছেন।’
লাকী আখান্দের সঙ্গে ফাহমিদা নবী ও সামিনা চৌধুরীদের পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। তাদের বাবা মাহমুদুন নবীর সঙ্গে লাকী আখান্দের ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। দুই বোন আদর করে লাকী আখান্দকে ডাকতেন ‘লাইচা’। ‘লাকী চাচার’ সংক্ষিপ্ত রূপ লাইচা।
গতকাল শুক্রবার সংগীতাঙ্গনকে কাঁদিয়ে লাকী আখান্দ চলে গেছেন না ফেরার দেশে। খবর শুনেই দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে তারা ছুটে গেছিলেন লাকী আখন্দকে দেখতে।
ফাহমিদা নবী বললেন, ‘লাকী আখান্দকে আমরা খুব কাছের মানুষ হিসেবে পেয়েছি। তার হাত ধরে আমরা কত কিছু শিখেছি। সব পরিকল্পনা আমাদের জানাতেন। তার অদ্ভুত একটি ভাবনা ছিল। আমাদের সঙ্গে প্রায়ই এ নিয়ে কথা হতো। কক্সবাজারের নির্জন দ্বিপে রিহার্সাল করবেন। সেটা আর হয়ে উঠল না।’
লাকী আখান্দকে রুচিশীল শিল্পী আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘লাকী আখান্দ মানেই নতুন কিছু। “ঘুড্ডি” ছবির সংগীত পরিচালনা করলেন। যেমন রুচিশীল ছবি তেমন রুচিশীল গান। সেই গানগুলো তো চিরসবুজ গান হিসেবে জায়গা করে নিল।’
সামিনা চৌধুরী বলেন, ‘লাকী আখান্দ যখন আমাদের বাসায় আসতেন আমার বয়স তখন পাঁচ কী ছয়। হারমোনিয়ামকে কিবোর্ড বানিয়ে বাজাতেন। এটা আমাকে মুগ্ধ করত। গান গাওয়ার চাইতে বাজানোটাকে প্রায়োরিটি দিতাম। আমি যত কর্ড শিখেছি যতটুকও বাজানো শিখেছি সব লাকী আখান্দের কাছ থেকে। আমার মতো অনেক অনেক ছেলে মেয়ে তার থেকে শিখেছে।’
লাকী আখান্দ স্থূল সুরকে পছন্দ করতেন না। তার সুর কেউ ভুল গাইলে রেগে যেতেন। কারণ সুরকে সন্তানের মতো ভালোবাসতেন। তিনি বিনয়ী বিশুদ্ধ মানুষ ছিলেন বলে জানান সামিনা চৌধুরী।
লাকী আখান্দের সঙ্গে কাটানো মধুর স্মৃতি বলতে গিয়ে সামিনা চৌধুরী বলেন, ‘সুরবাণী অনুষ্ঠানের রেকর্ডিং হবে। আমার ভাগে পড়েছে ‘কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে’ আর ‘আমায় ডেকো না’। আমি গান দুটো তুললাম। কিন্তু রেকর্ডিংয়ে গিয়ে দেখা গেল আমার গলা বসে গেছে। আমি বললাম, এখন কী হবে? তিনি বললেন, সোমা গান তো গাইতেই হবে। তিনি খুব শীতলভাবে আমাদের সঙ্গে কথা বলতেন। আমার কান্না পায় অবস্থা। আল্লাহকে ডেকে যাচ্ছি। মজার ব্যাপার হলো আমি রেকর্ডিং রুমে ঢুকতেই গলা ঠিক হয়ে গেল। একবারে ‘কবিতা পড়ার প্রহর’ গানটা গেয়ে ফেললাম। তখন বললাম, এখন দ্বিতীয় গানটাও নিয়ে নেন। দুইটা গানের রেকর্ডিং শেষ করে যেই বের হয়েছি, সাথে সাথে আবার গলা বসে গেল।’ এই ঘটনায় লাকী আখান্দ খুব খুশি হলো বলে জানান সামিনা চৌধুরী।
সামিনা চৌধুরী ও ফাহমিদা নবী বলেন, লাকী আখান্দের এই শূন্যতা পূর্ণ হবার নয়।
ছবি : তানভীর আশিক