চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

চামড়ায় দেয়া লবণের মজুদ যথেষ্ট, দামও হাতের নাগালে

চীন থেকে লবণ আমদানি করার কারণে দেশের লবণ মিলগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে দেশীয় লবণ রয়েছে। ফলে লবণের দাম রয়েছে হাতের নাগালে। ফলে এ বছর কোরবানির পশুর চামড়ার জন্য ব্যবহার করা লবণের কোনো ঘাটতি হবে না বলে জানিয়েছেন দেশের লবণ সংশ্লিষ্টরা।

তবে লবণ চাষীরা বলছেন, চায়না লবণ আমদানির কারণে দেশিয় লবণ উৎপাদন হুমকির মুখে পড়েছে। তাই বিদেশি লবণ আমদানি বন্ধ করতে হবে।

এখন পর্যন্ত লবণের যে দাম ও সরবরাহ রয়েছে তাতে সন্তুষ্ট চামড়া ব্যবসায়ীরা। এই ধারা শেষ পর্য‌ন্তু অব্যাহত থাকবে বলে তাদের প্রত্যাশা।

তবে তারা কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলছেন, তারা যেন চামড়ায় চায়না লবণ ব্যবহার না করেন। এতে চামড়ার মান কিছুটা নষ্ট হয়ে যায়।

বাংলাদেশ ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, কোরবানির মৌসুমে প্রায় এক লাখ টন লবণের প্রয়োজন হয় অন্য বছরের তুলনায় এ বছর এখনো লবণের সরবরাহ ও দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।

তিনি বলেন, লবণের দাম এখন ৮শ থেকে ৮৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে প্রতি বস্তা (৭৫ কেজি) লবণ। এখন পর্যন্ত এ বছর লবণের দাম তেমন বাড়েনি। আমরা আশা করি শেষ পর্যন্ত এর ধারাবাহিকতা থাকবে।

তবে ভিন্নমত প্রকাশ করে হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও চামড়া ব্যবসায়ী আলী হোসেন বলেন, আগের তুলনায় লবণের দাম একটু বেশি। অনেক সময় সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হয়।

তিনি বলেন, যেহেতু চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। ভাল মানের চামড়া পাওয়া যায় কম। তাই সঠিক সময়ে চামড়ায় লবণ দেয়ার জন্য লবণের দাম কমানো সরবরাহও নিয়মিত রাখা উচিত।

কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন বলছে, প্রতিটি বড় চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে ১০ থেকে ১২ কেজি, মাঝারি চামড়ায় ৭ থেকে ৮ কেজি ও ছোট চামড়ায় ৫ থেকে ৬ কেজি লবণ লাগে।

ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে দুই ধরনের লবণ পাওয়া যায়, দেশিয় এবং ভারতীয়। সবাইকে দেশিয় লবণ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন তারা। কারণ এতে চামড়ার মান ভালো থাকে। ভারতীয় লবণে ইউরিয়া থাকায় চামড়ার রং ও মান নষ্ট করে ফেলে।

লালবাগের পোস্তা এলাকার একজন পাইকারি লবণ বিক্রেতা জানান, পর্যাপ্ত লবণ মজুদ আছে। বর্তমানে দামও কম। ২০১৮ সালে ৭৫ কেজির বস্তা প্রতি দাম ছিল প্রায় ১ হাজার টাকা। এবছর প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা দরে। তবে ঈদের দিন থেকে হয়তো দাম সামান্য কিছু বাড়তে পারে।

বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে লবণের বার্ষিক চাহিদা ২৪ লাখ টন। এ বছর লবণ উৎপাদন হয়েছে ১৭ থেকে ১৮ লাখ টন। ফলে অন্তত ৮ লাখ টন লবণের ঘাটতি রয়েছে।

তবে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে সাধারণত লবণের চাহিদা থাকে প্রায় ১ লাখ টন। বর্তমানে মিল গেটে যে পরিমাণ লবণ আছে, তা এই চাহিদার চেয়েও অনেক বেশি বলে জানায় সমিতি।

এবার কোরবানির চামড়ার জন্য লবণের কোনো ঘাটতি তো হবেই না বরং প্রয়োজনের তুলনায় আরো অনেক বেশি উদ্বৃত রয়েছে বলে জানিয়েছেন লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির।

তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, চায়না লবণের দাপটে দেশিয় লবণ কোনঠাসা হয়ে পড়ছে। বাজারে বিক্রি হচ্ছে না। ফলে প্রত্যেকটা মিলে লবণ অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে। চামড়ার জন্য যেই লবণ ব্যবহার করা হয় সেই লবণের বস্তা (৭৫ কেজিতে এক বস্তা) ৫৮০ থেকে ৬৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে লবণের সরবরাহ প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। কিন্তু বিক্রি একেবারে নেই।

তিনি বলেন, কোরবানির সময় লবণের চাহিদা থাকে ১ লাখ টনের মত। কিন্তু সারা বছর প্রায় আড়াই লাখ টন লবণের চাহিদা থাকে। এই পরিমাণ লবণ শুধু চামড়ায় ব্যবহার হয়ে থাকে।

চায়না লবণের আমদানি বন্ধ করার দাবি জানিয়ে নুরুল কবির বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত লবণ রয়েছে। তবু আমদানি করা হচ্ছে। অথচ এতে বিসিকের কোনো নজরদারি নেই। দেশিয় লবণ চাষীদের রক্ষায় বিদেশি লবণ আমদানি বন্ধ করতে হবে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এ বছর কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ১ কোটি ১৮ লাখ। এ বছর ১ কোটি ১০ লাখ পশু কোরবানি হতে পারে। যেখানে গত বছর কোরবানি হয়েছিল প্রায় ১ কোটি ৫ লাখ পশু।