বামে যে ছবিটি দেখছেন সেটি এক বোনের, তার ভাইয়ের সঙ্গে। মায়াভরা হাসিমুখের এই বোনটির নাম হোসনা বেগম। বয়স ২২ বছর। পরিবারের সবার ছোট, অনেক অাদরের। অাসছে ২৯ শে জুলাই বিয়ের দিন ঠিক ছিল তার। মা-বাবার পছন্দেই।
পরিবারটির স্বজনদের সঙ্গে মৌলভীবাজারে কথা বলে জানলাম, হোসনার শাড়িসহ বিয়ের সব কেনাকাটাও সম্পন্ন ছিল। বিয়ের হল বুকিংসহ সবকিছু রোজার অাগেই শেষ হয়েছে।
না, বোনটির অার বিয়ের পিঁড়িতে বসা হবে না। লন্ডনে পুড়ে যাওয়া ভবনটির ১৭ তলার ১৪৪ নাম্বার ফ্লাটে বাবা কমরু মিয়া সহ মা অার ভাইয়ের সঙ্গে বসবাস করতেন তিনি। তাদের মূল বাড়ি মৌলভীবাজারের একাটুনার বিরইনবাদ গ্রামে।
বৃহস্পতিবার ভোরে লন্ডনের গ্রীনফেল টাওয়ারের লেলিহান বিভীষিকাময় অাগুন ভবনটির অার সব হতভাগ্য বাসিন্দারের মতো পুড়িয়ে দিয়েছে হোসনার সব সপ্নও। সেহরি অার ফজরের নামাজের পর সেই ধেয়ে অাসা যন্ত্রনায় দগ্ধ হয়ে মৃত্যুর দুয়ারে অাত্মসমপর্ন করা ছাড়া অার কোন পথও ছিল না তাদের। শেষবার ফোনে সংযোগ বিছিন্ন হওয়ার অাগে লন্ডনে অারেকটি বাড়িতে বসবাসরত ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন হোসনা।
নিশ্চিত মৃত্যুর ক্রমাগত এগিয়ে অাসা দেখে ভাইয়ের কাছে বোনটি দোয়া চেয়েছিল, কিছুটা কম কষ্টে মৃত্যুর।
হোসনা কি তার হবু বরের কাছ থেকে সংসার শুরুর অাগেই শেষবারের মতো বিদায় নিতে পেরেছিলেন, সেই প্রশ্নটির উত্তর অার খুজঁতে পারেনি অামার সাংবাদিক সত্ত্বা। কেননা, অামিও হোসনার মত ফুটফুটে এক বোনের ভাই। দুর্ঘটনাতে পিতা হারানো এক হতভাগ্য সন্তান।
মা বাবা অার ভাইয়ের সঙ্গে অগ্নিদগ্ধ নিখোঁজদের তালিকায় হোসনার মুখটি দেখে অামার চোখেও যে অশ্রু নেমেছে, তা টের পেলাম লিখতে বসে সেলফোনের স্ক্রীনে টলমলে অশ্রুফোঁটা দেখে।
অামার বোনটাও তো থাকে সাড়ে ১৫ ঘন্টা দুরে। শশুরবাড়ী ঠিকানায় নয়, সাড়ে তিনহাতের ছোট্ট মাটির বিছানায় পুড়ে যাওয়া বোনটিকে কী করে রেখে অাসবে ভাইটি…।
নাহ, অক্ষরগুলোর অার সাধ্য নেই অশ্রুকে ধরে রাখবার, সমবেদনা কিংবা সান্তনার…।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)