করোনাভাইরাস সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ঢাকাকে নিরাপদ রাখতে কয়েক জেলায় সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ছয়টা থেকে ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ জেলায় সর্বাত্মক লকডাউন থাকবে।
হঠাৎ করে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়াতে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। দেশজুড়ে কাগজেকলমে নানা বিধি নিষেধ থাকলেও বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন, যা রাস্তায় নামলে ও প্রতিদিনের কর্মকাণ্ড দেখলেও বোঝা যায়। ঢাকার পার্শ্ববর্তী যে ৭ জেলায় লকডাউন দেয়া হয়েছে, সেসব জেলায় এরআগেও লকডাউন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপরেও জেলার সীমানায় ভেঙে ভেঙে মানুষজন যাতায়াত করেছে অনেকটা স্বাভাবিক নিয়মে। এতে করে সেসময়ই প্রশ্ন উঠেছিল, ওই ধরণের লাকডাউনের কার্যকারিতা নিয়ে।
বর্তমানে দেশের করোনা পরিস্থিতি ক্রমবর্ধমান। ভারতীয় করোনার ধরণ ডেল্টার কারণে দ্রুত দেশজুড়ে ছড়াচ্ছে সংক্রমণ। মৃত্যুর সংখ্যাও গত এপ্রিল মাসের মতো বাড়ছে। হাসপাতালসহ করোনা মোকাবিলায় সরকারের যথেষ্ট প্রস্তুতি থাকলেও সংক্রমণ বন্ধ করা যাচ্ছে না। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে শনাক্ত ৪ হাজার ৬৩৬ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছে ৭৮ জন। গত কয়েকদিনের শনাক্ত ও মৃত্যুর তুলনা করলে এই পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।
মঙ্গলবার সকাল থেকে কার্যকর হতে যাওয়া লকডাউনে আইনশৃঙ্খলা, জরুরি সেবা, পণ্যবাহী ট্রাক এবং অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া আর কোন কিছুই চলতে পারবে না। কোন মানুষ চলাচল করতে পারবে না বলে জানানো হয়েছে। রাজধানীর সীমান্তবর্তী ওইসব জেলাতে গার্মেন্টস-কলকারখানাসহ শ্রমঘন নানা কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। যেসবের প্রভাব সরাসরি রাজধানীর উপরে প্রত্যক্ষভাবে পড়ে। এই বিষয়গুলো কীভাবে সমন্বয় হবে তা পরিস্কার নয়। এছাড়া এরআগের লকডাউনের সময়ে যে অভিজ্ঞতার চিত্র গণমাধ্যমে উঠে এসেছিল, তা মোটেও সুখকর ছিল না।
ভ্যাকসিনের অপ্রতুলতা ও ভ্যাকসিন কার্যক্রমের ধীরগতি জাতির জন্য যখন চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে, তখন করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া একটি অশনিসংকেত। শুধুমাত্র লকডাউনের মতো পদক্ষেপ ছাড়াও এই পরিস্থিতি থেকে কী উপায়ে সবাইকে সুরক্ষিত রাখা যায়, তা ভাবতে হবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা থেকে।