রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকার ইউনিভার্সিটি অব ডেন্টাল কলেজে র্যাগিংয়ে বাধা দিতে গিয়ে কয়েকজন ছাত্রের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন এক ছাত্রী। ঘটনার পরের দিন থানায় লিখিত অভিযোগ করেন ওই শিক্ষার্থী।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি রমনা থানায় করা অভিযোগে ওই শিক্ষার্থী উল্লেখ করেন, ১১ ফেব্রুয়ারি দুপুর দেড়টার দিকে ২৫তম ব্যাচের (প্রথম বর্ষ) ছাত্রছাত্রীদের রুমে আটকে রেখে র্যাগ দিচ্ছিল ২২তম ব্যাচের ফারদিন এহসান, জুবায়ের মাহি, অপু, অয়ন, আনিসসহ আরও ১৫-২০ জন ছাত্র।
সে সময় বাধা দিলে অভিযোগকারী শিক্ষার্থী এবং তার সাথে থাকা দুই সিনিয়র শিক্ষার্থীর দিকে তেড়ে আসে ২২তম ব্যাচের ফারদিন। এক পর্যায়ে ফারদিন তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।
অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘২২তম ব্যাচের ছাত্ররা শিক্ষার্থীদের র্যাগিং করার পাশাপাশি ছাত্রীদের ক্লাসরুমে আটকে রেখে ভয় দেখায়। ফারদিন ২৫তম ব্যাচের ছাত্রদের ৪০৪ নম্বর ছাত্রাবাস (ছেলেদের হোস্টেল) নিয়ে যাওয়ার জন্য অন্যদের নির্দেশ দেয়। দীর্ঘদিন ধরেই জুনিয়র ছাত্রদের ওপর শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছিল তারা।’
‘ঘটনার পরপরই ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির নির্বাহী পরিচালক ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান ও অধ্যক্ষ হোসনে আরাকে অবহিত করেন। এরপরই ফারদিনসহ অন্যান্যরা তাকে বিভিন্ন রকমের হুমকি দিচ্ছিল।’
রোববার রাতে ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘গতকাল শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির সদস্যরা আমাকে ডেকে নিয়ে কথা বলেন এবং যারা র্যাগিংয়ের শিকার হয়েছেন তাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। তদন্ত কমিটিও র্যাগিংয়ের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন।’
ভুক্তভোগীর অভিযোগ অধ্যক্ষ তাকে বলেছেন, ‘‘কলেজের বাইরের নিরাপত্তা দিতে পারবেন না। তখন আমি সকলের সঙ্গে কথা বলে রমনা থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করি। আমি বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’’
সেদিন ঘটনাস্থলে থাকা আরেক শিক্ষার্থী চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, ‘থানায় অভিযোগ দেয়ার পর পুলিশ তদন্তে আসে। আমাদের অধ্যক্ষ পুলিশের কাছে দুইদিনের সময় নেয়। আজ পাঁচদিন অতিবাহিত হলেও তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দিতে পারেনি।’
তার আশঙ্কা তদন্ত কমিটি বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করতে পারে।
বিষয়টি সম্পর্কে বক্তব্য জানতে ইউনির্ভাসিটি ডেন্টাল কলেজের অধ্যক্ষ হোসনে আরার মুঠোফোনে কয়েকবার ফোন করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান, অধ্যক্ষ গতকাল শনিবার রাতে অস্ট্রেলিয়া গিয়েছেন।
একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির নির্বাহী পরিচালক ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামানের মুঠোফোনেও একাধিকবার ফোন এবং ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
তবে শিক্ষার্থীকে লাঞ্ছিত ও র্যাগিংয়ে জড়িতদের শাস্তি দাবি করে গভর্নিং বডির সদস্য অধ্যাপক ডা. আব্দুল মালেক ভূইয়া চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ‘অধ্যক্ষ হোসনে আরা অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগেই এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। ওই শিক্ষার্থী থানায় অভিযোগ করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ এসেছিল। তদন্ত কমিটি কাজ করছে, দ্রুত তারা রিপোর্ট দেবেন।’
জানতে চাইলে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, আমার সঙ্গে আজও কথা হয়েছে। তারা দ্রুত তদন্তের ফলাফল জানাবেন।’
‘‘যদি ফৌজদারি অপরাধ সংগঠিত হয়ে থাকে, তাহলে মামলা হবে। না হলে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবেন।’’