চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

রোহিঙ্গা: ৭ শীর্ষ বর্মি সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা

রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নৃশংস নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে মিয়ানমারের ৭ জন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

ওই নিষিদ্ধ কর্মকর্তাদের মধ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার দায়িত্বে থাকা জেনারেলও রয়েছে।

ইইউ জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞার আওতায় ওই ৭ জনের সম্পদ জব্দ করা হবে। নিষেধাজ্ঞার সময় তারা ইইউভুক্ত দেশগুলোতেও ভ্রমণ করতে পারবেন না।

এছাড়া মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়িয়েছে ইইউ। সেই সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দান ও প্রশিক্ষণে সহযোগিতা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে সংস্থাটি।

মিয়ানমারের নতুন আংশিক গণতান্ত্রিক সরকারের প্রতি সমর্থন জানাতে ২০১২ সালে দেশটির ওপর আগে থেকে আরোপিত অবরোধগুলো তুলে নিয়েছিল ইইউ। এবার রোহিঙ্গা ইস্যুতে আবারও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে নিজ কূটনীতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিলো বহুজাতিক এই সংস্থা।রোহিঙ্গা-মিয়ানমার-ইইউ

এর আগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ওপর বেশকিছু সাক্ষ্য-প্রমাণ পাঠানো হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) কাছে। বাংলাদেশের কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থার জোট এই তথ্যগুলো পাঠিয়েছে। নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের পালাতে বাধ্য করার বিষয়টি তদন্তে চাপ দেয়ার কাজ করছে সংস্থাগুলো।

এ নিয়ে চলতি সপ্তাহে হেগে রুদ্ধদ্বার বৈঠকও করেছেন আইসিসি বিচারপতিরা। সেখানেই এসব সাক্ষ্য-প্রমাণ নিয়ে প্রথমবারের মতো বিস্তারিত আলোচনা শুরু হয়। আইসিসির পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর খণ্ডন করার জন্য এবং প্রমাণ করার জন্য যে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আইসিসির হস্তক্ষেপের কোনো এখতিয়ার নেই।

মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।রোহিঙ্গা-মিয়ানমার-সেনাবাহিনী

৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।

সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত বহু মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনইউচসিআর-এর তথ্য অনুসারে, ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত সহিংসতায় হাজার খানেকের বেশি রোহিঙ্গা মারা গেছে। যদিও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দাবি, সংখ্যাটি মাত্র ৪শ’।

তবে আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সহায়তা সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স (মেডিসিনস স্যানস ফ্রন্তিয়েরস – এমএসএফ)-এর দাবি, ২৫ আগস্ট সহিংসতা ছড়ানোর পরবর্তী একমাসেই প্রায় ৭ হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছিল।রোহিঙ্গা-মিয়ানমার-ধর্ষণ-গণহত্যা-আইসিসি

প্রাণভয়ে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ওপর জরিপ চালিয়ে এই আনুমানিক হিসেবের কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।

সেনাবাহিনীর হামলা ও সহিংসতার মাত্রার ভয়াবহতার কারণে জাতিসংঘ একে ‘পাঠ্যবইয়ে যোগ করার মতো জাতিগত নিধনের উদাহরণ’ বলে অভিহিত করেছে। অন্যদিকে একে যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ‘জাতিগত নিধন কর্মসূচি’ বলে বর্ণনা করেছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।