মিয়ানমার জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সংকট মোকাবেলায় জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিতে সাড়ে ১০ কোটি ডলার সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জেনেভায় ঘোষিত ২০১৯ সালের জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানের (জেআরপি) জন্য দেওয়া ৬ কোটি ডলারের অতিরিক্ত হিসেবে আজকে আরো ৪ কোটি ৫৫ লাখ ডলার দেয়ার কথা জানানো হয়। এতে করে ২০১৯ সালের জেআরপিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার অঙ্ক দাঁড়াল সাড়ে দশ কোটি ডলারে।
রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবেলায় মানবিক সহায়তা দানকারী দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান শীর্ষে। ২০১৭ সালের আগস্টে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র এজন্য মোট প্রায় ৫০ কোটি ডলার দিয়েছে। এর মধ্যে ৪৫ কোটি ডলারের মতো ছিল বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশ্রয় দেওয়া স্থানীয় মানুষদের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি বাবদ।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এ সহায়তার অর্থ দিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য জীবন রক্ষাকারী খাবারের সংস্থান করা হবে। এতে করে বিদ্যমান মানবিক সহায়তার পরিমাণ বাড়ানো যাবে। এসবের মধ্যে থাকবে স্থানীয় বাজার থেকে খাবার কেনার জন্য ভাউচার সুবিধা, জীবন রক্ষা করার জন্য বর্ষা ও ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার প্রস্তুতি এবং অসহায় শিশু আর গর্ভবতী ও স্তন্যদাত্রী প্রসূতি নারীদের জন্য পুষ্টির ব্যবস্থা করা।
বাড়তি এই তহবিল বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া দশ লাখের বেশি শরণার্থী, বাংলাদেশের স্থানীয় এলাকাবাসী এবং মিয়ানমারের অভ্যন্তরে তথা এ অঞ্চলে বাস্তুচ্যুত মানুষদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া মানবিক সহায়তার পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে। এ সহায়তার আওতায় তাদের জন্য সুরক্ষা, জরুরি আশ্রয়, খাদ্য, পুষ্টি, পানীয় জল, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যসেবা, মনোসামাজিক সহায়তা ও শিক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া তহবিল বর্ষা ও ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের প্রস্তুতি,অবকাঠামো এবং আশ্রয়ের ক্ষেত্রে উন্নতির জন্য বিভিন্ন মানবিক সাহায্য সংস্থা এবং বাংলাদেশ সরকারের কার্যক্রমেও সহায়তা যোগাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র এই সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহায়তা করার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ। চরম দুর্ভোগের শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য সীমান্ত ও হৃদয়ের দ্বার খুলে দিয়ে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ যে উদারতা দেখিয়েছে তার প্রশংসা করা হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে। সব সামর্থ্যবান দেশের প্রতি এই বৈশ্বিক মানবিক সাহায্য উদ্যোগে অবদান রাখার আহ্বান জানানো হয়।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, বর্মি সেনাবাহিনীর নির্যাতনে ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত সীমান্ত পেরিয়ে সাড়ে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালেও সেনাবাহিনীর হামলায় প্রাণভয়ে আরও বহু সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিল।