কফি আনান কমিশনের সুপারিশমতে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে নাগরিত্ব প্রদান এবং তাদের ওপর অত্যাচার বন্ধের প্রস্তাব জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তুলবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী।
প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘের বৈঠকে যাওয়ার আগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে রোহিঙ্গাদের করুণ অবস্থা তুলে ধরার পাশাপাশি বাংলাদেশের অবস্থানও সুস্পষ্ট করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে একাত্তরে বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও চাইবেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও জাতিসংঘের মহাসচিবের বিবৃতি পরে শোনান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
গত বিশ দিনে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে ঢুকে পরার খবর এখন পুরোনো। দেশের গন্ডি ছাপিয়ে যা এরই মধ্যে কাঁপিয়ে দিয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গন। আরাকানের মুসলিম জনগোষ্ঠির ওপর এই রাষ্ট্রীয় হামলার উদ্বেগ জানাচ্ছে গোটা বিশ্ব। কিন্তু তাতেও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির ওপর আক্রমণ থামছে না এবং তাদের বাংলাদেশে ঢোকার প্রবণতাও কমছে না।
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচিসহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ও প্রতিষ্ঠানসমূহ যখন রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সুবিধাজনক অবস্থান নিয়েছেন, তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের সহায়তায় নিজে কক্সবাজারে ছুটে গেছেন। তাদের অস্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন এবং সর্বোপরি রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক আচরণ করেছেন তিনি। অং সাং সুচি নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে আসন্ন জাতিসংঘ সভাতেও যোগ দেবেন না বলে ইতোমধ্যে জানা গেছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫শ মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।