গত বছর প্রাণ ভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা কয়েক লাখ রোহিঙ্গার নিরাপদ প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘ-মিয়ানমার সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে এ সমঝোতা স্মারকে সই করেছে মিয়ানমার।
সমঝোতা স্মারক অনুসারে দু’পক্ষ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ‘স্বাধীন, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের উপযুক্ত পরিস্থিতি তৈরিতে সহযোগিতামূলক কাঠামো প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার’ করেছে।
এরইমধ্যে সমঝোতা স্মারককে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলার পথে ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ’ বলে মন্তব্য করেছেন মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিষয়ক সমন্বয়ক নুট অস্টবি। তার মতে, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর আগে তাদের নিরাপত্তার পাশাপাশি কর্মসংস্থান, জীবিকা নির্বাহ, বাসস্থানসহ কিছু বিষয় বিবেচনায় অানতে হবে।
আমরা জানি, গত বছর ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ অভিমুখে রোহিঙ্গাদের যে স্রোত শুরু হয়েছিল, তার শেষ হয়েছিল সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গার সীমান্ত অতিক্রমের মাধ্যমে। কিন্তু ৯ মাসেও তাদের একজনকেও ফিরিয়ে নেয়নি মিয়ানমার। এমন কি জাতিসংঘসহ পুরো বিশ্বের অনুরোধ, অভিযোগ সবই অবজ্ঞা করেছে দেশটি।
শুধু তাই-ই নয়, বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে হওয়া সমঝোতা স্মারককেও। গত নভেম্বরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সই হওয়া ওই স্মারকের শর্ত অনুসারে পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে তাদেরকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরুর কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কথা রাখেনি মিয়ানমার।
রোহিঙ্গাদের ফেরিয়ে নিতে টালবাহানার যেন শেষ নেই। গত জানুয়ারীতে দুই দেশের কর্তকর্তাদের নিয়ে গঠিত ওয়ার্কিং কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে মিয়ানমার বলেছে, সপ্তাহে ১,৫০০ জন করে রোহিঙ্গা ফেরত নেবে মিয়ানমার। অর্থাৎ এই হিসেবে কয়েক বছরেও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শেষ হবে না।
মিয়ানমারের এসব অপকৌশলের মুখে বাংলাদেশ তার শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রেখেছে। কোনো রকম উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডে জড়ায়নি। শুধু ধারাবাহিকভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন রেখেছে, মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে। না হলে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে না তারা।
আমরাও তাই মনে করি। এতদিনে এটাই প্রমাণ হয়েছে, সহজে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে না মিয়ানমার। এক্ষেত্রে চাপ প্রয়োগই একমাত্র সমাধান। আর এই কাজে সবার আগে উদ্যোগ নিতে হবে জাতিসংঘকেই। যদিও সেই চেষ্টায় নিশ্চিতভাবেই বাধা হয়ে দাঁড়াবে তাদের অন্যতম মিত্র চীন। কিন্তু তারপরও এটাই শেষ সমাধান। এর বাইরে আর কোনো পথ নেই।
নতুন এ সমঝোতা স্মারক নিয়ে জাতিসংঘের মতো আমরাও আশাবাদী, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলার পথে এটা ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ’ই হবে বলে আশা করছি।