মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের নেতা অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া বলেছেন, আজকে মানবতার চরম বিপর্যয় চলছে। মানবতা দ্বিখন্ডিত করতে চাই না। আজকে গৌতমবুদ্ধের বাণী প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
“আমি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোক হিসেবে ক্ষমা প্রকাশ করছি।”
রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এ উপদেষ্টা আরো বলেন, আজ বাংলাদেশের সবাই এবং বিশ্ব বিবেক রোহিঙ্গাদের পক্ষে ও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে।
রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা এবং তাদেরকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার দাবিতে রোববার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে মানববন্ধন করেন সাদা দলের শিক্ষকরা।
এ সময় রোহিঙ্গাদের মুসলমান হিসেবে না দেখে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করার পাশাপাশি অবিলম্বে রোহিঙ্গা নিপীড়ন বন্ধের দাবিও জানান তারা। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকারকে একলা চলা নীতি পরিহার করে সবাইকে সাথে নিয়ে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।
সাদা দলের আহ্বায়ক ড. মো: আখতার হোসেনের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব ড. লুৎফর রহমানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনের শুরুতেই রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে ঐতিহাসিক বিষয় তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন ঢাবি সাদা দলের সদস্য ও ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান।
আরো বক্তব্য রাখেন সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক ও কলা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. সদরুল আমিন, সাদা দলের বর্তমান যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আবদুর রশিদ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, ড. দিলীপ বড়ুয়া প্রমুখ।
অধ্যাপক ড. সদরুল আমিন বলেন, সকলকে ঐক্যবদ্ধ থেকে এই সঙ্কট মোকাবিলা করতে হবে। সরকারের উচিৎ হবে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারকে চাপ প্রয়োগ করা এবং রোহিঙ্গাদের সে দেশে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করা।
পালি এন্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. দিলীপ বড়ুয়া বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের একসাথে ১০ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। আমরা লজ্জিত। তিনি মিয়ানমারের জঙ্গি বৌদ্ধদের প্রতিশোধ আমাদের ওপর নয়। আমরা সকলে রোহিঙ্গাদের পক্ষে এবং হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে।
ড. আখতার হোসেন খান বলেন, বাংলাদেশের নাফ নদীর ওপারে রোহিঙ্গাদের গ্রামে জ্বলছে, নাফ নদীতে নারী শিশু পুরুষের লাশ ভাসছে। শরণার্থী শিবিরে খাবারের জন্য অসহায় রোহিঙ্গাদের আহাজারি চলছে। তারপরও তথাকথিত বিশ্ব মোড়লদের কোনো বিবেক জাগ্রত হয়না। আমি বলবো রোহিঙ্গাদের মুসলমান হিসেবে না দেখে মানুষ হিসেবে দেখুন। তাদের প্রতি অমানবিক অাচরণ থেকে বিরত থাকুন।
প্রধানমন্ত্রীকে কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে মিয়ানমারের ওপর চাপ তৈরি এবং বাংলাদেশে যাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট না হয় সে জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।