মিয়ানমারে চলমান রোহিঙ্গা নিপীড়ন,গণহত্যা,ধর্ষণ বন্ধে অবিলম্বের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন সৌদি আরব।
মঙ্গলবার সৌদি বাদশা সালমানের সভাপতিত্বে এক বৈঠক থেকে এই আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ত্রাণ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বাদশা সালমান।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিধনের পর সৌদি নিরবতায় যখন মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে তখনই এই পদক্ষেপ নিলো ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র দুই মসজিদের অভিভাবক দেশটি।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর জাতিগত আক্রমণের নিন্দা জানিয়ে সৌদি আরব বলেছে,‘মানবতাবিরোধী এসব অপরাধ এবং সুপরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গাদের নিশ্চিহ্ন করার এই হীন চেষ্টা নিঃসন্দেহে বর্বরতা এবং সন্ত্রাসবাদের নিকৃষ্টতম উদাহরণ।’
নৃশংসতার শিকার হয়ে ঘর-বাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য সৌদি ত্রাণ বিতরণের জন্য একটি বিশেষ প্রতিনিধিদল পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাদশা সালমানের ত্রাণ বিষয়ক দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক ড. আবদুল্লাহ আল-রাবিয়াহ।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সংকট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫শ মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। সেনাবাহিনীর হামলা ও সহিংসতার মাত্রার ভয়াবহতার কারণে জাতিসংঘ একে ‘পাঠ্যবইয়ে যোগ করার মতো জাতিগত নিধনের উদাহরণ’ বলে অভিহিত করেছে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।