চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রসূতি নারীদের সেবায় এবার প্রশিক্ষিত ধাত্রী

রোহিঙ্গা নারী মাসুকার বয়স ২৪। প্রথমবার মা হয়েছেন সম্প্রতি। দুর্ভোগ পেরিয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসার পরে সন্তান জন্মদানে কোন জটিলতা না হওয়ায় খুব খুশি তিনি। এত কষ্ট আর দুর্ভোগের মধ্যেও তার মুখে হাসি আনা সম্ভব হয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রের প্রশিক্ষিত ধাত্রীদের কারণে।

আলজাজিরাকে তিনি বলেন, এখানে এত ভালো সেবা দেখে খুব অবাক হয়েছি। সদ্য জন্ম নেওয়া বাচ্চাটার এখনও নাম রাখেননি তিনি। স্বামী শাফি আলম বলেন, ১৬ সেপ্টেম্বর মংডুর ধানখালি থেকে বাংলাদেশে আসার পর জীবনের মূল প্রয়োজনগুলো মেটাতে মেটাতে ওর নাম নিয়ে ভাবার সময়ই পাইনি।

কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২৪ হাজার প্রসূতি নারীকে সেবা দেবেন প্রশিক্ষিত ধাত্রীরা। এসব ধাত্রীরা ইউএনএফপিএর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রসুতি, নারী ও তরুণী মায়েদের সেবা দেবেন।

অাগস্টের ২৫ তারিখ থেকে সাড়ে চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। ত্রাণ সংস্থাগুলো তাদেরকে বাসস্থান, খাবার ও স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে। আর বাংলাদেশে আসা এসব রোহিঙ্গাদের মধ্যে দেড় লাখ নারী এবং এর মধ্যে ২৪ হাজার নারী সন্তানসম্ভবা। তাই এই ২৪ হাজার নারীর জন্যই আসছেন প্রশিক্ষিত ধাত্রীরা।

ফেব্রুয়ারি মাসে কুতুপালংয়ে ধাত্রী হিসেবে যোগ দেন তানিয়া। গত  ২১ দিন ১২ মায়ের প্রসবে সাহায্য করেছেন তানিয়া।

তিনি বলেন, কিছু কিছু প্রসুতি নারী বাংলাদেশে এসেছে যারা টানা কয়েকদিন কোন খাবার খায়নি। তাদের কাছে পোশাক নেই এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার মতো টাকাও তাদের নেই। তারা সত্যিই অসহায়। কেউ কেউ তো রাস্তার ধারেই সন্তান প্রসব করেছেন।

নয় মাসের প্রসুতি আরিফা বেগম কোনরকম বিশ্রাম ছাড়া সন্তানকে গর্ভে নিয়ে হেঁটেছেন কয়েক মাইল পথ। সঙ্গে ছিলো না কোন খাবার, আর বৃষ্টি পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলেছিলো।

তিনি বলেন, আমার খুবই ক্লান্ত লাগছিল, শ্বাসও নিতে পারছিলাম না। মিয়ানমারে কোথাও যাওয়াও নিরাপদ মনে হচ্ছিলো না। তবে এখানে এসে ভালো লাগছে।

কুতুপালং ক্যাম্পে নিজের শারিরীক অবস্থা নিয়ে একটু পরামর্শ করতে এসেছিলেন আরিফা। তিনি বলেন, মিয়ানমারে আমরা কোন স্বাস্থ্যসেবা পেতাম না। আমি খুশি যে আমি এখানে এসেছি।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনামূল্যে ওষুধ এবং সেবা নিতে পারছেন রোহিঙ্গারা। এমনকি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা অন্যান্যদের যেমন শিশু ও বয়স্কদেরও সেবা দিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।

ইউএনএফপিএর  ফিল্ড অফিসার আশরাফুল আলম বলেন, কক্সবাজারে এই সংস্থা ৬৮ জন ধাত্রী সরবরাহ করেছে। এখন এখানে ছয়টি মেডিকেল ক্যাম্প রয়েছে। আরও চারটি করার পরিকল্পনা চলছে।

ইউএনএফপিএর প্রিয়া মারওয়া জানান, তারা সরকার ও স্থানীয় সহকর্মীদের সঙ্গে মিলে সেবাপ্রদান প্রক্রিয়া আরো জোরদার করার চেষ্টা করছেন।

ইউএনএফপিএ রোহিঙ্গা নারীদের ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতা নিয়েও সচেতন করার চেষ্টা চলছে। রোহিঙ্গা নারীরা খুবই দুর্বল কারণ তাদের অনেকগুলো সন্তান। কারো কারো সন্তান সংখ্যা ৭ থেকে ১৪ জনও। তাদের পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে কোনো ধারণাই নেই।

প্রিয়া বলেন, আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করার জন্য কারণ এটা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো|

স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নিরাপদে শিশু জন্ম নিয়েছে ২৩০ টি। ৭০ হাজার শিশুকে টিকা দেওয়া হয়েছে। অন্যদেরও দ্রুত টিকার আওতায় আনা হবে। তাছাড়া ক্যাম্পগুলোতে যেখানে গর্ভবতী মা রয়েছে সেখানে লাল পতাকা এবং যেখানে শিশুর জন্ম হয়েছে সেখানে সবুজ পতাকা লাগানো হয়েছে।