বিশ্ব গত বছর থেকে করোনা সংক্রমণের কারণে স্তব্ধ হয়ে আছে। বাংলাদেশে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেলে সরকার গত বছর থেকে সাধারণ ছুটি দিয়ে জনগণকে যার যার অবস্থানে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। এত সরকার অনেকটা সফলও হয়েছে। সারা বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশে শিথিল লকডাউনের পরও করোনা আমাদের বিপর্যস্ত করতে পারেনি।
এরপর দ্বিতীয় ঢেউয়ের শঙ্কায় সরকার আবার লকডাউন ঘোষণা করে। গত কিছুদিন মৃত্যুহার কমে এসেছে। এর মধ্যে হঠাৎ বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে সংক্রমণ বেড়ে যায়। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দিন দিন বাড়ছে। এই অবস্থায় উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি ক্যাম্পকে কঠোর লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত লকডাউন কার্যকর থাকবে।
এ বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) শাহ রেজওয়ান হায়াত। তিনি বলেন: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে সামাজিক দূরত্ব বাজায় রেখে জরুরি ওষুধ, খাদ্য ও গ্যাস সিলিন্ডার বিতরণের কার্যক্রম চলমান থাকবে। কক্সবাজারে ৩৪টি ও নোয়াখালীর ভাসানচরে ১টিসহ ৩৫টি রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প রয়েছে। এর মধ্যে এ পর্যন্ত নোয়াখালীর ভাসানচরে কোনো রোহিঙ্গার করোনা শনাক্ত হয়নি। কক্সবাজারের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মধ্যে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প-২ ডব্লিউ, কুতুপালং ক্যাম্প-৩, কুতুপালং ক্যাম্প-৪, জামতলি ক্যাম্প-১৫ ও টেকনাফের লেদা ক্যাম্প ২৪-কে কঠোর লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেন: কক্সবাজারের ৩৪টি রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে সাড়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করে। এসব বসতিতে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা নেই বললেই চলে। এর মধ্যে রোজা ও ঈদে জনসমাগমের নানা উপলক্ষ ছিল। ক্যাম্পে করোনা আক্রান্তের খবরে লোকজন ভয়ে আছে। ঘনবসতি ও অবাধ বিচরণের কারণে কয়েক দিন যাবৎ করোনা রোগী পাওয়া যাচ্ছে। ক্যাম্পে ও ক্যাম্পের বাইরে যাতায়াতকারি লোকজন মাস্ক পরলেও তরুণদের কোনোভাবেই মাস্ক পরানো যাচ্ছে না। এ অবস্থায় সরকার ও সংশ্লিষ্টমহল গুরুত্বের সঙ্গে অনুধাবন করবেন বলে আমরা মনে করি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আন্তর্জাতিক তদারকি সংস্থা যেহেতু সেখানে মনিটরিং আছে সেহেতু এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আগেই কঠোর ব্যবস্থা নেবেন বলে আমাদের আশা। রোহিঙ্গারা যেহেতেু ভাসানচরসহ ইতিমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে সেহেতু সেখানে কঠোরতর লকডাউনের কোনো বিকল্প নেই।