কক্সবাজারে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে এখনো উদ্বেগ কাটেনি। জেলায় করোনা শনাক্তের হার এখনও দশের উপরে। জেলায় সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হচ্ছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে। তবে সংশ্লিষ্ট এলাকায় লকডাউন পালন হচ্ছে ঢিলেঢালাভাবে।
প্রশাসনের কর্মকর্তারা এবং পুলিশ যতক্ষণ মাঠে থাকে ততক্ষণ লকডাউন কার্যকর থাকে। এর পর মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন লক্ষণ নেই। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অবস্থা আরো নাজুক। ঘন বসতি হওয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লকডাউন কার্যকর করা অনেকটা কঠিন।
এ অবস্থায় কক্সবাজার জেলায় করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি এখনো উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা মাহবুবুর রহমান। তিনি জানান কক্সবাজারে করোনা সনাক্তের হার এখনো দশের উপরে। সনাক্তের দিক দিয়ে কক্সবাজার জেলা দেশের মধ্যে টপ টেনে রয়েছে। করেনা সনাক্তের হার উদ্বেগজনক মাত্রায় থাকায় কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে কঠোর বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে।
এদিকে কক্সবাজারের ২৫০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতালে ৩ দিনে এক রোহিঙ্গা শরণার্থীসহ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চারজন মারা গেছেন। সবশেষ বৃহস্পতিবার (৩ জুন) কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে নতুন করেন শনাক্ত হয়েছেন ৬৬ জন। তাদের মধ্যে ২৫ জনই রোহিঙ্গা শরণার্থী।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী ৩ জুন পর্যন্ত জেলায় করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার ৫৭৮ জনের শরীরে। করোনায় মারা গেছেন ১১২ জন। তার মধ্যে রোহিঙ্গা মারা গেছে ১৭ জন।
গত তিন দিনে করোনা আক্রান্ত চারজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শাহীন মো. আবদুর রহমান চৌধুরী। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ইদানিং সংক্রমণ ও মৃত্যু দু’টোই বাড়ছে। সংক্রমণ রোধে রোহিঙ্গা শিবিরসহ পুরো জেলায় কঠোর লকডাউন দরকার।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ ও রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অনুপম বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেলায় করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ছিল। তখন দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা থাকতো ৩ থেকে ৫ জনের মধ্যে। এখন দৈনিক গড়ে ৮০ জনের বেশিও শনাক্ত হচ্ছে।
অনুপম বড়ুয়া বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। কাজের জন্য রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের বাইরে চলে যাচ্ছে, আবার ফিরে আসছে। এছাড়া শরণার্থীদের মানবিক সেবায় যুক্ত এনজিও কর্মীরা প্রতিদিন ক্যাম্পে যাওয়া আসা করছেন।
ডা. অনুপমের মতে, এনজিও কর্মীদের অনেকেই ঈদের ছুটিতে বাড়িতে (কক্সবাজারের বাইরের জেলায়) গিয়েছিলেন, এখন ফিরে এসে ক্যাম্পে যাতায়াত করছেন। তাদের কারও কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা হয়নি। ফলে সংক্রমণ বাড়ছে।
তিনি মনে করেন, সংক্রমণ রোধ করতে হলে উখিয়া ও টেকনাফের পাশাপাশি ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে পৃথক রেড জোন ঘোষণা করা দরকার।
জেলা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটি উখিয়া ও টেকনাফ এবং ৫টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত ২১ মে থেকে কঠোর লকডাউনের আওতায় আনে। পাশাপাশি উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের চারটি ওয়ার্ল্ডকে রেড জোন ঘোষণা করে উপজেলা প্রশাসন। আগামী ৬ জুন পর্যন্ত লকডাউন ও রেড জোন কার্যকর থাকবে।