চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

রোহিঙ্গারা কি কখনো তাদের দেশে ফেরত যেতে পারবে?

মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য এখনও সহায়ক পরিবেশ তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা আইওএম এর মহাপরিচালক উইলিয়াম ল্যাসি সুইং। রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ, সম্মানজনক ও সেচ্ছামূলক প্রত্যাবাসনের পরিবেশ সৃষ্টি হতে যথেষ্ট সময় লাগবে বলেও মনে করে তিনি। রোববার দুপুরে কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে আইওএম এর মহাপরিচালক উইলিয়াম ল্যাসি সুইং সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

এরআগেও যেসব আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে এসেছিলেন তারাও আইওএম মহাপরিচালকের ভাষায় কথা বলেছেন। যদিও জাতিসংঘের সাথে মিয়ানমারের সমঝোতা স্মারক সই ও বাংলাদেশ-মিয়ানমার চুক্তি হয়েছে প্রত্যাবাসনে। এই অবস্থায় প্রশ্ন জাগতে পারে, রোহিঙ্গারা কি কখনো তাদের দেশে ফেরত যেতে পারবে?

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার ‘ঘাড় ত্যাড়া’ আচরণ করছে বললে একেবারে ভুল হবে না। সবই শুনছে, বুঝছে, স্বীকার করছে, কিন্তু আসল কাজের কাজ কিছুই করছে না। বিষয়টি খুবই উদ্বেগের।

এদিকে বর্ষাকাল শুরু হয়ে গেছে এবং পাহাড়ী এলাকায় যেখানে রোহিঙ্গা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে সেখানে মারাত্মক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যেকেনো সময় বড় ধরণের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বড় ধরণের মানবিক বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন। এই বিষয়ে বিভিন্ন আন্তজার্তিক সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীরা নানা কথা বললেও তারা সেভাবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে চাপ তৈরি বা কথা বলছে না। বিষয়টা যেনো শুধুই বাংলাদেশের বিষয়। যদিও জাতিসংঘের মহাসচিব কিছুদিন আগে এই নিশ্চুপ আচরণের জন্য বিশ্ব বিবেককে দায়ী করেছেন।

আন্তজার্তিক সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীরা রোহিঙ্গাদের উন্নয়ন ও বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সারাবিশ্ব জুড়ে তহবিল করছে। এইকাজে তারা রোহিঙ্গা নারী-শিশুদের বর্তমান অমানবিক অবস্থা বিশ্বজুড়ে প্রচার করছে, কিন্তু তাদের এই অবস্থার জন্য মিয়ানমারের সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে বিশ্ব রাজনীতির নানা শাখা-প্রশাখা বিচার করছে। তারা যদি এই বিষয়ে আরেকটু সোচ্চার হতো তাহলে মিয়ানমারকে বাগে আনতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতায় গতি আসতো, আর নিজ দেশে ফিরে যাবার পথ সুগম হতো রোহিঙ্গাদের।

বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের ফেরাতে কাজ করে যাচ্ছে, কাজ করছে তাদের বর্তমান জীবনমানে কিছুটা পরিবর্তন আনতে। সেইসঙ্গে সরকারের উচিত হবে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করতে আসা আন্তজার্তিক সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীদের কর্মপরিকল্পনা ও পদ্ধতিতে প্রত্যাবাসনের উপযোগী কোনো এজেন্ডার ব্যবস্থা করা। শুধু রোহিঙ্গাদের খাইয়ে-পড়িয়ে সমস্যার যে সমাধান হবে না, তা আন্তজার্তিক সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীদের সামনে বার বার তুলে ধরে মিয়ানমারকে ক্রমাগত চাপ দিতে রাজি করালেই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সহজ হবে বলে আমাদের ধারণা। না হলে এই দশ লাখ রোহিঙ্গার নিয়ে নানামুখি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপের মুখে পড়তে হতে পারে বাংলাদেশকে।