মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ আসা দিন দিন কমে আসছে। এখন আর আগের মতো ত্রাণ আসছে না। ৭ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার জন্য যেখানে গড়ে প্রতিদিন ৫শ’ মেট্রিক টন ত্রাণ প্রয়োজন সেখানে আসছে মাত্র ১শ’ মেট্রিক টনের মতো। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণে পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে সরকার।
গত আড়াই মাস ধরে টেকনাফ ও উখিয়ার ১২টি পয়েন্টে রোহিঙ্গাদের মাঝে বাংলাদেশিদের দেয়া ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। এ অবস্থায় আগামী ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে পুরো ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী (ডব্লিউএফপি)।
মিয়ানমার থেকে বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে এখনো আসছে রোহিঙ্গারা। আর নতুন আসা রোহিঙ্গাদের তালিকা ভুক্ত করে ক্যাম্পে পাঠিয়ে দিচ্ছে সেনা সদস্যরা।
মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের ১২টি পয়েন্টে দেয়া হচ্ছে ত্রাণ। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত দেয়া হয় ত্রাণ। কিন্তু এখন ত্রাণ আসা কমে যাওয়ায় ৮টার স্থানে ১২ টার সময় ও অনেক সময় রোহিঙ্গারা পাচ্ছে না ত্রাণ।
বর্তমানে দেশীয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ত্রাণ আসা কমে যাওয়ায় রোহিঙ্গাদের দীর্ঘসময় ধরে লাইনে অপেক্ষা করতে হয়। সবগুলো ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রেরই এখন একই চিত্র।
উখিয়ার বালুখালীর ২ নং বিতরণ পয়েন্টে কথা হয় রোহিঙ্গা যুবক নুুরুল আলম, রহিম উদ্দিন ও জয়নাল আবেদীনের সাথে।
তারা বলেন, ত্রাণ আসার কথা ১১টার দিকে। কিন্তু এখনও ত্রাণ আসেনি। তাই বসে আছি। খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে এখানে বসে আছি।
“কার্ড নিয়ে মালের জন্য আসছিলাম, কিন্তু মাল এখনো আসেনি। কখন আসবে জানি না। বাসায় বাচ্চারা না খেয়ে আমার অপেক্ষায় বসে আছে।”
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শুরু থেকেই মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাপক ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান।
মূলত টেকনাফ ও উখিয়ার মোট ১২টি পয়েন্টে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এ ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলতো। রোহিঙ্গাদের মাঝে বিতরণের জন্য ৫শ’ মেট্রিক টনের বেশি ত্রাণের প্রয়োজন হলেও এখন আসছে প্রায় ১শ’ মেট্রিক টন।
জানা গেছে, বর্তমানে উখিয়া উপজেলার কুতুপালং, বালুখালী, পালংখালী, থাইংখালী, টেকনাফ উপজেলার উনছিপাং, হ্নীলা, হোয়াক্যং, নয়াপাড়া, লেদা এবং বান্দরবানের তমব্রু এলাকায় সাত লাখের বেশি নতুন রোহিঙ্গা রয়েছে।
এমনিতে রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শুরু হয় সকাল আটটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। আর এ ত্রাণের আসায় ভোর রাত ৩টা থেকে এসে রোহিঙ্গারা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে। এখন তাদের অপেক্ষার প্রহর কাটছে না।
কক্সবাজার উখিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নিকারুজ্জামান বলেন, ‘হয়ত ত্রাণ দেওয়ার ক্ষেত্রে গাড়ির সংখ্যা কমেছে, শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে। এখন গড়ে প্রতিদিন আমরা ১০০-১২০ মেট্রিক টন চাল ত্রাণ পাচ্ছি।’
ত্রাণের পাশপাশি নিবন্ধনের কাজও এগিয়ে চলছে। এ কাজ শেষ হলে ডব্লিউএফপি ত্রাণের কাজ করবে জানিয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট খালেদ মাহমুদ বলেন, সেনাবাহিনীর পাশাপাশি বেশক’টি পয়েন্টে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী ডব্লিউএফপি রোহিঙ্গাদের মাঝে চাল, ডাল এবং তেল বিতরণ করছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম এককভাবে পরিচালনার দায়িত্ব ডব্লিউএফপি’কে দেয়া হচ্ছে। ত্রাণ দেওয়ার সমস্ত কার্যক্রম ডব্লিউএফপি’কে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা কাজ করছি।’