ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রভাব বিশ্বের নানা ক্ষেত্রের মত ক্রীড়াক্ষেত্রেও পড়েছে। সবচেয়ে বেশি কথা হচ্ছিল ইংলিশ ক্লাব চেলসির মালিক রাশিয়ান রোমান আব্রামোভিচকে নিয়ে। ক’দিন যাবৎ লন্ডনের ক্লাবটির মালিককে নিয়ে চলছে অনেক আলোচনা-সমালোচনা। ভক্ত-সমর্থকদের রোষের মুখে অবশেষে পদত্যাগে বাধ্য হলেন এই ধনকুবের।
ব্লুজদের ২০ বছরের দায়িত্ব ক্লাবটির ট্রাস্টের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন যুক্তরাজ্যে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা পাওয়া আব্রামোভিচ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হবার পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন ৫৫ বছর বয়সী এই ইসরায়েলি-রাশান ধনকুবের।
শনিবার ইংলিশ ক্লাবটির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে এক বিবৃতিতে আব্রামোভিচের ‘অভিভাকত্ব’ ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সেখানে বলা হয়, ক্লাবের মালিকানা না ছাড়লেও ক্লাবের সব দায়িত্ব চেলসি ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টিদের কাছে হস্তান্তর করেছেন আব্রামোভিচ।
এক বিবৃতিতে আব্রামোভিচ বলেছেন, ‘চেলসির ২০ বছরের মালিকানার সময়ে সবসময় ক্লাবের স্বার্থ সবার আগে দেখেছি। আর এই সময় আমি কেবল ক্লাবের একজন কর্মকর্তা হিসেবেই নিজেকে ভেবেছি। যার কাজ ক্লাবের উন্নতির জন্য কাজ করা, ক্লাবের ভবিষ্যৎ মজবুত করা। সেই সঙ্গে সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা রাখা।’
আব্রামোভিচ আরও বলেন, ‘সবসময় ক্লাবের সর্বোত্তম স্বার্থকে মনে রেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি ক্লাবের মূল্যবোধের প্রতি একাত্মতা রেখে সব দায়ভার চেলসি ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টিদের হাতে তুলে দিচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি, বর্তমানে তারা ক্লাব, খেলোয়াড়, স্টাফ এবং ভক্তদের স্বার্থ দেখাশোনার জন্য সর্বোত্তম।’
বিতর্কের শুরু যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের এক সদস্য কিছু গোপন নথি ফাঁস করার পর। নথিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের অনেক দুর্নীতির সঙ্গে আব্রামোভিচের সরাসরি যোগসূত্র পাওয়া যায়। আর একারণেই তাকে ক্লাবের মালিকানার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ারও জোর দাবি ওঠে। অবশেষে সেটাই করলেন এই ধনকুবের।
তবে ক্লাবটির সিদ্ধান্ত, নীতি প্রণয়ন বা অন্যসব কিছুতে কতদিন বাইরে থাকবেন আব্রামোভিচ, তা জানতে চেয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে চেলসির সমর্থক ট্রাস্ট (সিএসটি)। তারা ক্লাবটির ভবিষ্যত সম্পর্কে আরও ‘জরুরি ব্যাখ্যা’ এবং খোলাখুলি ব্যাখা চেয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ইউক্রেন ও দেশটির জনগণের পক্ষে একাত্মতা প্রকাশ করে তারা টুইটে লেখেন, ‘ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ এবং পরবর্তী জীবনহানির কারণে গভীরভাবে দুঃখিত এবং মর্মাহত চেলসি সমর্থকদের ট্রাস্ট। আমরা আব্রামোভিচের বিবৃতি এবং চেলসি ক্লাবটি পরিচালনার জন্য এই বিবৃতিটির অর্থ কী, তার জরুরী ব্যাখ্যা চাইছি।’
চেলসির মালিক আব্রামোভিচের উপর এখনও নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছে যুক্তরাজ্য সরকার। চেলসিকে যেকোনো অনিশ্চয়তা ও খেলোয়াড়দের বিক্ষিপ্ত না হওয়ার জন্য পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আব্রামোভিচ, কিন্তু এখন প্রশ্ন তা কতদিনের জন্য। সে বিষয়ে কথা বলেননি রাশিয়ান এই ধনকুবের, তার বিবৃতিতে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের বিষয়েও কোনো কথা ছিল না।