চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

রোযা রেখেছো?

পৃথিবীতে সূর্য ওঠা কিংবা ডুবে যাওয়া সত্য, একটা বয়সের পরে ঋতু বা পিরিয়ড বা মাসিক আমাদের মেয়েদের জীবনে সত্য হয়ে দেখা দেয়। যখন প্যাড কিনতে যাই তখন রুমমেট-বান্ধবীদের লজ্জায় পড়তে দেখি। এতো প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে গিয়ে তারা লজ্জা পান, আশেপাশের মানুষজন শুনতে পেলো কিনা অথবা দোকানদার তার দিকে তাকিয়ে কুটিল হাসি হাসছে কিনা।

একই সমস্যা হয় যখন আমরা অন্তর্বাস কিনতে যাই, ইচ্ছে করেই দোকানি বার বার ‘সাইজ’ জানতে চায়। আশে পাশের দোকানিরাও ইশারা ভাষায় কথা বলে।

রমজান মাস চলছে। প্রাকৃতিক বা ঈশ্বরপ্রদত্ত নিয়ম যাই বলি না কেনো, প্রতি মাসের মতো রমযান মাসেও আমাদের পিরিয়ড হয়। এই পিরিয়ড না হলে মানবজাতি সৃষ্টি হতো না। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই পুরুষ, নারী কিংবা তৃতীয় লিঙ্গ জন্মলাভ করে। যদি এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ থাকে তাহলে গুগলে সার্চ দিন। আরো ভালো জানতে পারবেন।

দু:খজনক হলেও সত্য এই দৈব শারীরিক বিষয় (আমরা মেয়েরা একে অনেক সময় সমস্যা বলে থাকি) নিয়ে সার্বক্ষণিক লজ্জায় পড়তে হয় আমাদের। রোযার মাসে তো আরো বেশি। ক্লাস, অফিস, পরিবার কিংবা বন্ধুদের প্রশ্ন থাকে ‘রোযা আছো?’ কেউ জেনে প্রশ্ন করে, কেউ ইচ্ছে করে প্রশ্ন করে, কেউ না জেনে প্রশ্ন করে।

বেশিরভাগ সময় আমরা মেয়েরা মিথ্যা বলি, আর যদি সত্য বলি, শুনতে হয় আরো ভয়াবহ প্রশ্ন, ‘কেন রোযা রাখো নি?’ কিংবা ‘এ বছর কি রোযা রাখা ছেড়ে দিলে,’ ‘ধর্মকর্ম কি সব বাদ’। রোযার মাসে আরেকটা কমন প্রশ্ন, ‘কয়টা রোযা ছিলে?’ যদি সত্য বলি, তাহলে পরের প্রশ্ন ‘কেনো থাকো নি বাকিগুলো’। এ জাতীয় নানা প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কি পরিমাণ ভয়াবহ বলে বোঝাতে পারবো না। এ প্রশ্নগুলো অনেকে ভরা মজলিশে করে বসে, সে তো মজা নেয়ই, আশে পাশের মানুষগুলোকেও মজা দেয়।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হলো পিরিয়ডের সময় প্রচুর পানি খেতে ইচ্ছা হয়, কিন্তু নিষ্ঠুর এ দুনিয়ায় তো আর যাবতীয় পুরুষকুলের সামনে পানি খাওয়া যায় না। মাকেও দেখেছি কেউ দেখবে তাই লুকিয়ে খাচ্ছে। আরো ভয়াবহ অভিজ্ঞতাও আছে। আমাদের বাসায় কাজ করতো এক খালা, উনি এ অবস্থায়ও রোযা রাখতেন, তার ভয় ঘরের ‘ব্যাডা মানুষ’ যদি দেখে ফেলে এই লজ্জা কোথায় রাখবেন?

বন্ধুরা রোযা রাখিস নাই কেনো, এটা বলে মজা নেওয়ার আগে ভেবে নিবেন, আপনার নারী বন্ধুটি মন খারাপ করছে কি না। অফিসের সময় নারী সহকর্মীটিকে ইফতার করতে যাচ্ছেন না কেনো, কিংবা রোযা রাখছেন না কেনো, তাকে সবার সামনে এই ভয়াবহ প্রশ্নগুলো করবেন না প্লিজ। এমনকি সে যদি কৌশলী উত্তর দেয়, সেটাও বুঝতে না পেরে পুনরায় আলাদা করে জিজ্ঞাসা করার আগে ভেবে নিন, এটা ঠিক কি না। ঋতুস্রাব এর ব্যাপার না বুঝলে বা না জানলে স্ত্রী, গার্লফ্রেন্ড, মা কিংবা বোনের কাছ থেকে জেনে নিন।

আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান যা বলে, আমাদের দেশের মোটামুটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষরা এই ব্যাপারটা জানেন। আর যারা জানেন না তাদের বলি, এই সময়ের রোযা আল্লাহই মাফ করেছেন, এগুলো পরে রাখা যায়। না জানাটা কোনো অপরাধ না, তবে জেনে না জানার ভান করা, কিংবা নারীদের বিব্রত করার জন্য বারবার এ প্রশ্ন করাটা অপরাধ।

অনেক পুরুষই এখন আমাদের সহযাত্রী। তারা আমাদের পক্ষে আন্দোলন করেন। তারা যৌন হয়রানি কিংবা ইভ টিজিং-এর বিরুদ্ধে কথা বলেন কিংবা নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। কিন্তু যারা এমন করেন, তাদেরও হরহামেশাই এমন প্রশ্ন করতে দেখেছি।

আমার অনুরোধ, দয়া করে এই জাতীয় প্রশ্ন করে আপনার বন্ধু, সহকর্মী কিংবা পরিবারের নারী সদস্যদের লজ্জার মুখে ফেলবেন না। তাদের প্রতি সহমর্মিতা দেখান। মনে রাখুন, নারী জাতি এই প্রক্রিয়ায় না গেলে আপনার সন্তান পৃথিবীর আলো দেখবে না। এ কারণে তাদেরকে জনসম্মুখে এহেন প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকুন।