সিগন্যাল ইদুনা পার্ক। অতীতে যে মাঠ রিয়াল মাদ্রিদকে কেবল বিষাদই উপহার দিয়েছে! সেই মাঠেই মঙ্গলবার রাতে নতুন করে ইতিহাস লিখেছে জিনেদিন জিদানের শিষ্যরা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ঘরের মাঠে অপরাজেয় থাকা বরুশিয়া ডর্টমুন্ডকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে লস ব্লাঙ্কোসরা।
যে মাঠে অতীতে ছয় ম্যাচে তিনটি করে হার এবং ড্র রিয়ালের, সেখানে শাপমুক্তি ঘটাতে জোড়া গোল এসেছে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর থেকে। একটি গোল করে ও একটি করিয়ে বিশ্বসেরা ফুটবলারকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন গ্যারেথ বেল।
বরুশিয়া গেরো খোলার ম্যাচে রিয়ালের হয়ে একটি ব্যক্তিগত মাইলফলকও ছুঁয়েছেন রোনালদো। স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নদের হয়ে এটি সিআর সেভেনের ৪০০তম ম্যাচ! আর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দেড়শতম!
‘এইচ’ গ্রুপের ম্যাচটির শুরু থেকেই ছিল আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের খেলা। ভালো একটি সুযোগ পেয়েও ১০ মিনিটের মাথায় ছুঁড়ে এসেছেন দানি কারভাহাল। স্বাগতিক গোলরক্ষক রোমান বুরকিকে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন রিয়াল ডিফেন্ডার।
পরের মিনিটে একই দোষে আটকান গ্যারেথ বেল। রোনালদোর বানিয়ে দেওয়া বলে ওয়েলস ফরোয়ার্ড পা ছোঁয়াতে পারলেই এগিয়ে যেতে পারতো লস ব্লাঙ্কোসরা।
নিজেদের মাঠে দাপট বজায় রাখতে আক্রমণে গেছে বরুশিয়াও। ১৪ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে গোল প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল জার্মান দলটি। ম্যাক্সিমিলিয়ান ফিলিপ্পের শট ফিরিয়ে রিয়ালকে বিপদমুক্ত করতে যান গোলরক্ষক কেইলর নাভাস। সেসময় নাভাসের ফেরানো বল গোললাইনে অধিনায়ক সার্জিও রামোসের হাতে লাগলে পেনাল্টির জোরাল আবেদন ওঠে। রেফারি যদিও সাড়া দেননি।
ম্যাচের ১৮ মিনিটে শাপমোচন করেছেন গ্যারেথ বেল এবং কারভাহাল। ডি-বক্সের বাইরে থেকে কারভাহালের উড়িয়ে মারা বল মাটিতে পড়ার আগেই দারুণ এক ভলিতে বরুশিয়া গোলরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে জালে জড়িয়ে রিয়ালকে এগিয়ে দেন বেল।
বিরতির আগে দুবার ডি-বক্সের মধ্যে বল পেয়েও জাল খুঁজে নিতে পারেননি রোনালদো। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে সুযোগ পেয়েছিলেন রামোসও। কর্নার থেকে আসা বলে মাথা ছুঁয়ে ডানবারের পাশ দিয়ে মাঠের বাইরে ফেলেছেন রিয়াল অধিনায়ক।
মধ্যবিরতি থেকে ফিরেই আক্রমণ শানিয়েছে বরুশিয়া। ৪৭ মিনিটে ইয়ারমেলেঙ্কোর মাথা ছোঁয়া বল কোন প্রকারে ঠেকিয়ে বিপদ হতে দেননি রাফায়েল ভারানে।
মিনিট দুয়েক পরেই স্বাগতিক দর্শকদের স্বস্তি কেড়ে নিয়ে স্বরূপে দেখা দেন রোনালদো। ৪৯ মিনিটে বামপ্রান্ত থেকে গ্যারেথ বেলের ক্রস খুঁজে নেয় পর্তুগিজ মহাতারকাকে। তা থেকে চলতি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নিজের তৃতীয় গোলটি করতে ভুল করেননি সিআর সেভেন।
গোলের জবাব দ্রুতই গোলের মাধ্যমেই দিয়েছে বরুশিয়া। ৫৪ মিনিটে গঞ্জালো কাস্ত্রোর পাসে পা ছুঁয়ে ব্যবধান কমিয়ে আনেন পিঁয়েরে ওবামেয়াং।
ম্যাচের ৭৯ মিনিটে বরুশিয়ার ফেরার সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দেন লা লিগায় টানা দুই ম্যাচে গোল না পাওয়া রোনালদো। লুকা মডরিচের ডিফেন্স চেরা পাসে বরুশিয়া গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে নিজের জোড়া গোল পূর্ণ করেন সিআর সেভেন। এবারের আসরে চতুর্থ, আর ইউরোপ সেরার প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ ১০৯তম গোল তার।
যোগ করা সময়েও সমানতালে বরুশিয়ার জাল বরাবর শট নিয়েছে রিয়াল। অতিরিক্ত মিনিটে রামোসের জোড়াল হেড বাঁচিয়ে নিজেদের সম্মানটুকু রক্ষা করতে চেষ্টা করেছেন বরুশিয়া গোলরক্ষক রোমান বুরকি। কিন্তু রিয়ালের জয় আটকাতে পারেননি।
শিরোপা ধরে রাখার মিশনে রিয়ালের এটি টানা দ্বিতীয় জয়। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে অ্যাপোয়েল নিকোশিয়াকে ৩-০ গোলে হারিয়েছিল জিদানের শিষ্যরা। সেখানে ডর্টমুন্ডের টানা দ্বিতীয় হার। প্রথম ম্যাচে টটেনহ্যাম হটস্পারের মাঠে একই ব্যবধানে হেরেছিল জার্মান দলটি। ‘এইচ’ গ্রুপে রাতের অন্য ম্যাচে হ্যারি কেইনের হ্যাটট্রিকে নিকোশিয়াকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে টটেনহ্যাম।