‘মানুষ মানুষের জন্য’। মানুষের কর্তব্য হলো সর্বদা আল্লাহর আদেশ- নির্দেশ পালন করে তাকওয়া তথা আল্লাহ ভীতি অর্জন করা। কেননা আল্লাহ আল কুরআনের সূরা হুজরাতের মধ্যে বলেছেন: তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তিই অধিক উত্তম যে তাকওয়া তথা আল্লাহ ভীতির দিক থেকে উত্তম।
মহান আল্লাহ বলেন: হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেয়া হলো যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদের দেয়া হয়েছিল। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। [সূরা আল বাকারা, আয়াত নং ১৮৩]
মুমিন রমজানে ক্ষুধা ও পিপাসা দিয়ে শয়তানের সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে। এতে করে নিমিষেই শয়তান পরাজিত হয়। আবার কুপ্রবৃত্তির তাড়নায় মানুষ সকল প্রকার পাপাচারে লিপ্ত হয়।
আর পাপাচার থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: হে যুবকরা তোমাদের মাঝে যে সামর্থ্য রাখে সে যেন বিবাহ করে। কেননা বিবাহ দৃষ্টি অবনত রাখে ও লজ্জাস্থানের সুরক্ষা দেয়। আর যে বিবাহের সামর্থ্য রাখে না সে যেন সিয়াম পালন করে। কারণ এটা তার রক্ষাকবচ। [সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ১৪০০]
সিয়াম বা রোজা মূলত সবরের মাস। মহিমান্বিত এই মাস মানুষকে আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা লঙ্ঘন না করে তার প্রতি দৃঢ় আনুগত্যের প্রশিক্ষণ দেয়। একজন মুমিন এসময় তার নিজের বিবেক ও মনকে নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট সতর্ক থাকে।
রোজার অশেষ উপকারিতার মধ্যে স্বাস্থ্যের উন্নতি অন্যতম। কেননা এসময় একজন মুমিন নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিমিত আহার তথা খাবার গ্রহণ, একই সময়ে সাহরি, নির্দিষ্ট সময়ে বিশ্রামের কারণে পাকস্থলি অনেকটা সবল হয়ে উঠে।
আধুনিক সাস্থ্য গবেষণার তথ্যমতে, নবী মুহাম্মদ (সা.) সবসময় খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। তাই ইফতার খেজুর দিয়ে করা সুন্নাত। আর সে খেজুরে রয়েছে নানান ভিটামিন। যেমন ভিটামিন এ, বি, সি, ডিসহ ক্যালসিয়াম, ফসফরাস যা শুধু আমাদের মস্তিষ্ক, লিভার, পেট এবং স্নায়ুকেই মজবুত করে না বরং আমাদের দেহ এর ফলে ব্যাপক শক্তি সঞ্চার করে থাকে।
রোজার উপকারিতার বিষয়ে হেদায়াতের দিশারী, আকায়ে নাম যার তাজেদারে মাদিনা, দোজাহানের বাদশাহ, নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্পষ্ট হাদিসে বলেছেন, প্রতিটি বস্তুর যাকাত রয়েছে আর শরীরের যাকাত হচ্ছে রোজা। সুতরাং আমাদের আল্লাহর প্রতিটি হুকুম আহকাম জীবনের প্রতি পদে অনুসরণ করে রমজানের রোজা রাখা উচিত।
রহমতের এই মাসে রোজাদার দৈনন্দিন জীবনের সকল ভোগবিলাস ত্যাগ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে পরকালে জান্নাত লাভের প্রতি সচেতন থাকেন। কেননা আল্লাহ তায়ালা আল কুরআনের সূরা দোহা’য় বলেছেন, ইহকাল অপেক্ষা পরকাল উত্তম।
ভুলে যাওয়া মানুষের স্বভাব। মানুষ আল্লাহর অনুগ্রহ মূল্যায়ন করতে শেখে তখন যখন সে তা থেকে বঞ্চিত হয় অথবা তা হারিয়ে ফেলে। তারই ধারাবাহিকতায় রমজানে রোজা পালনের মাধ্যমে অভাবীদের দুরবস্থা অনুধাবন করতে শেখে। এরপর সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে আল্লাহ তাদের প্রতি আরো অনুগ্রহ বাড়িয়ে দেন।
শেষপ্রান্তে এসে একটি হাদিস মনে পড়ে গেল এবং সেটি বলা কর্তব্য মনে করছি। আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন: রমজান মাসে চারটি কাজ তোমাদের উপর জরুরী। সেগুলো হল কালিমা বেশি বেশি করে পড়া, ইস্তিগফার তথা আল্লাহর কাছে বেশি করে ক্ষমা প্রার্থনা করা, বেশি বেশি আল্লাহর কাছে জান্নাত চাওয়া, জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া। আল্লাহ তায়ালা এবারের রমজানে উপরের আমলগুলো করার তাওফিক দান করুন। আমীন