সাউথ আফ্রিকার বোলারদের সাধারণমানে নামিয়ে নিজেদের রেকর্ড সংগ্রহ, ৬ উইকেটে ৩৩০ রানের স্কোর গড়ে বিশ্বকাপযাত্রা করেছে বাংলাদেশ।
এটা বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দলীয় সর্বোচ্চ ইনিংস। আগে সর্বোচ্চটি ছিল ৪ উইকেটে ৩২২। ২০১৫ অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে রন তাড়া করে জেতার ম্যাচে ওই সংগ্রহ গড়েছিল মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার দল।
বিশ্বকাপের বাইরে ওয়ানডেতেই এটি টাইগারদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। আগের সর্বোচ্চটি ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে, ৬ উইকেটে ৩২৯। আর প্রোটিয়াদের বিপক্ষে বাংলাদেশের আগের সেরা সংগ্রহটি ছিল ২৭৮ রানের।
পাকিস্তান ১০৫, শ্রীলঙ্কা ১৩৬ এবং আফগানিস্তান ২০৭। নিজেদের প্রথম ম্যাচে বিশ্বকাপে এশিয়ার তিন প্রতিনিধির এই যখন অবস্থা, তখন বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নামার আগে শঙ্কাই ছিল। তার উপর সাউথ আফ্রিকার পেস ব্যাটারির চোখ রাঙানি ছিলই। সব শঙ্কা, অনুমান, ভবিষ্যদ্বাণী তুরি মেরে উড়িয়ে দিলেন টাইগার ব্যাটসম্যানরা।
ইংল্যান্ডের কাছে হারের পর এদিন ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে নামে সাউথ আফ্রিকা। টসের সময় দলটির অধিনায়ক বলেন, বাংলাদেশকে চাপে রাখতে একজন বাড়তি পেসার নিয়েছেন তারা। কিন্তু বাংলাদেশকে চাপে রাখতে পারল কোথায়! উল্টো তামিম-সৌম্যর ব্যাটের চাপে দিশেহারা প্রোটিয়াদের ‘বহুল চর্চিত’ পেস আক্রমণ।
ইনজুরি কাটিয়ে ব্যাটিংয়ে নামা তামিমের মধ্যে শুরুতে কিছুটা অস্বস্তি দেখা যায়। তবে অন্যপ্রান্তে সৌম্য ছিলেন বেশ সপ্রতিভ। প্রথম তিন ওভারে খোলসে ঢুকে থাকলেও পরে হাত খোলেন। এর মধ্যে লুনগি এনগিডির দুই ওভারে হাঁকান টানা দুটি করে চার।
সঙ্গীকে হাত খুলতে দেখে তামিমও শুরু করেছিলেন। কিন্তু আন্দিলে ফেলুকোয়ওর প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলে উইকেটের পেছনে কুইন্টন ডি ককের হাতে ক্যাচ সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে। থামে ২৯ বলে ১৬ রানের ইনিংস।
দুর্দান্ত শুরু করে সামনে দিকে যাচ্ছিলেন সৌম্য। তার চলার পথে অনেকটা সত্যি হতে যাচ্ছিল তাকে নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক তারকা ড্যারেন গঙ্গার একটি অনুমান। ম্যাচ শুরুর আগে গঙ্গা বলেছিলেন, বাংলাদেশের অন্য ব্যাটসম্যানদের শর্ট বলে দুর্বলতা থাকলেও এই শর্ট বলের বিরুদ্ধেই মিশন সৌম্যর! ক্যারিবীয় তারকা অনুমান অনেকটা সত্যি করে ব্যাট চালাতে থাকেন বাংলাদেশ ওপেনার। যদিও শেষ পর্যন্ত আউটও হয়েছেন শর্ট বলেই।
৩০ বলে ৯ চারে ৪২ রানের তড়িৎ ইনিংস খেলার পর ক্রিস মরিসের একটি শর্ট বলে হুক খেলতে গিয়ে আউট হন। বল সৌম্যর ব্যাটের উল্টো পাশে লেগে উপরে যায় বাতাসে। অসাধারণ প্রচেষ্টায় সেই ক্যাচ লুফে নেন প্রোটিয়া উইকেটকিপার কুইন্টন ডি কক।
এরপরই সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম ইনিংস মেরামত শুরু করেন। দুজনে এমনভাবে ব্যাট করতে থাকেন, যেন দোলনায় চড়িয়ে দোলাচ্ছেন প্রতিপক্ষ বোলারদের! ১৪২ রানের জুটি গড়েন সাকিব ও মুশফিক। এই এক জুটিতেই হয়েছে কয়েকটি রেকর্ড। এটি সাকিব-মুশফিকের পঞ্চম শতরান জুটি, যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। সঙ্গে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ডও।
২৪ ওভার একসঙ্গে ব্যাট করার পর বিচ্ছিন্ন হন সাকিব-মুশফিক। সাকিব ৮৪ বলে ৭৫ করে ফিরলে ভাঙে জুটি। শুরু থেকে সাউথ আফ্রিকা বোলারদের দৌঁড়ের উপর রাখলে যাকে নিয়ে ভয় ছিল, সেই ইমরান তাহিরের বলে সুইপ খেলতে গিয়ে ফেরেন তিনি।
সাকিব ফেরার পর বেশিদূর যেতে পারেননি সেঞ্চুরির পথে হাঁটা মুশি। ফেলুকোয়ওর বলে বাউন্ডারি ভ্যান ডার ডুসেনের হাতে ধরা পড়লে শেষ হয় মিস্টার ডিপেন্ডেবলের ৭৮ রানের ইনিংস। তার ৮০ বলের ইনিংস সাজানো চোখ ধাঁধানো আটটি বাউন্ডারিতে।
ব্যাটে-বলে ভালো সংযোগ করলেও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি নিউজিল্যান্ডের বাউন্সি উইকেটে সফল মোহাম্মদ মিঠুন। দুই চার ও এক ছক্কায় ২১ বলে ঠিক ২১ রান করেন তিনি। তবে শেষের ছোঁয়াটা দারুণ দেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মোসাদ্দেক হোসেন। ২০ বলে ২৬ রান করে মরিসের বল মিডঅফরে উপর দিয়ে খেলতে গিয়ে ফেলুকোয়ও’র হাতে ক্যাচ দেন মোসাদ্দেক।
তবে শেষ ওভারে ১৪ রান নিয়ে বাংলাদেশের স্কোর ডাবল থ্রি জিরোতে পৌঁছে দেন মাহমুদউল্লাহ। ৩৩ বলে তিন চার ও এক ছয়ে ৪৬ রানের বিদ্যুৎগতির ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন তিনি।
প্রোটিয়াদের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন ফেলুকোয়ও, মরিস ও তাহির।