জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন নিয়ে ক্রিকেটের পথ হাঁটা আজমীর আহমেদের। এবার সেই স্বপ্নের নাগাল পেতে চান ২২ বছরের এই তরুণ। প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে ২২২ রানের ইনিংস খেলার পর নিজের ওপর বিশ্বাস আরও বেড়েছে তার। স্বপ্নের জাতীয় দলে জায়গা পেতে নিজের সবটুকু দিয়ে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করবেন বলে জানালেন চ্যানেল আই অনলাইনের মুখোমুখি হয়ে।
৫০ ওভারের ক্রিকেটে দেশের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিয়ান আজমীর। গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে উদয়াচল ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে ১৬৮ বলে ২২২ রানের ইনিংসটি খেলে অপরাজিত থাকেন অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের এই ওপেনার। ১৬টি করে চার-ছক্কায় ইনিংসটি সাজান এই ডানহাতি।
বাংলাদেশ দলের জার্সি গায়ে তুলতে হলে সামনে আরও অনেক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে আজমীরকে। বেশ কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে স্বপ্নকে ছুঁতে হবে। আজমীর বিশ্বাস রাখছেন নিজের পরিশ্রম ও সাধনার ওপর, ‘পরিশ্রমের ফল আল্লাহ নিজ হাতে দেন। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবো। বিশ্বাস করুন, ওই ইনিংসটা আমাকে কতটা আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে সেটা বুঝিয়ে বলতে পারবো না। পরিশ্রম করার তাগিদ ভেতর থেকেই অনুভব করতে পারছি। এই ইনিংসটা আমার প্রতি আশেপাশের মানুষদের প্রত্যাশা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। এটাকে ধরে রাখতে আরও পরিশ্রম করার অনুপ্রেরণা পাচ্ছি। স্বপ্নটা এতই গভীর হয়েছে যে, এটা ছাড়া মাথায় আর কিছুই নেই। হোক বা না হোক, আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাবো।’
প্রথম বিভাগে তো নয়ই, বাংলাদেশে স্বীকৃত ৫০ ওভারের ক্রিকেটেও ডাবল সেঞ্চুরি নেই আর কারো। দেশের ক্রিকেটে আজমীরের ইনিংসটাই তাই সর্বোচ্চ রানের। প্রথম ১১ ম্যাচে ফিফটি পাননি একটিও। আজমীর সব ব্যর্থতা পুষিয়ে দিয়েছেন এক ম্যাচেই। লিগে নিজের ১২তম ম্যাচে এসে পেলেন ফিফটি, সেটিকে রূপ দিলেন সেঞ্চুরিতে; তারপর টেনে নিলেন ডাবলে।
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিজের স্বাভাবাকি খেলাটাই খেলেছেন আজমীর। ব্যাটিংয়ের সময় এক মুহূর্তের জন্যও এলোমেলো হননি, ‘আগের ম্যাচে ৪৫ করে আউট হয়ে গিয়েছিলাম। এই ম্যাচটায় নামার আগে মাথায় ছিল যদি আজ ফিফটি পেরিয়ে যাই, সেটাকে বড় করবো। সেটা যে এত বড় হয়ে যাবে চিন্তাও করিনি। মাঠে আমি কোচকে বলেছিলাম, আজ যদি ফিফটি পেরোতে পারি ইনশাআল্লাহ বড় ইনিংস খেলবো, দোয়া করবেন। সবার দোয়া ছিল, তাই হয়ে গেছে। আমি আমার খেলাটাই খেলেছি। বল সিলেকশনটা ভালো ছিল। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একইভাবে খেলেছি। ডাবল সেঞ্চুরি করার পরও মনে হয়নি এলোমেলো শট খেলি। শুধু মনে হয়েছে আমাকে শেষ করে আসতে হবে।’
অগ্রণী ব্যাংকের হেড কোচ আনোয়ার হোসেন চৌধুরী ছাত্রের সাফল্যে দারুণ খুশি। আজমীর যখন উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে ক্লাস এইটের ছাত্র, তখন থেকেই তাকে দেখভাল করছেন তিনি। এতদিন পর কোচকে গর্ব করার উপলক্ষ এনে দিয়েছেন আজমীর।
আজমীরের মাঝে পরিশ্রম করার মানসিকতা ও বড় ক্রিকেটার হওয়ার ইচ্ছাশক্তি দেখতে পান আনোয়ার হোসেন, ‘ও খুব পরিশ্রমী। এটা ওর সবচেয়ে বড় গুণ। বড় কিছু হতে হলে ইচ্ছা থাকতে হয়। ওর ভেতরে সেই ইচ্ছাটা আছে। এবার প্রথম দিকে রান পাচ্ছিলো না। টিম থেকে ড্রপ করিনি। বাদ দেয়া তো খুব সহজ। রান খরায় থাকা কোনো ব্যাটসম্যানকে কীভাবে রান করানো যায় এটাই তো কোচের বড় চ্যালেঞ্জ। ওয়ানডে ম্যাচে ২০০ রান করা অনেক বড় ব্যাপার। স্কিলফুল না হলে এত রান করা যায় না। সবচেয়ে ভালো লেগেছে এটা দেখে যে, পুরো ইনিংসে উল্টাপাল্টা কোনো শট ছিলো না তার। সবই ছিল ক্রিকেটিং শট। ও ড্রাইভটা খুবই ভালো খেলে। স্পেশালি অফ-ড্রাইভ, অন-ড্রাইভ, ওভার দ্য টপ দারুণ খেলে। সবচেয়ে বড়গুণ যেটা সে ক্রস ব্যাটে খেলতে পারে না, সোজা ব্যাটে খেলে।’
কোচের চোখে বড় ক্রিকেটার হওয়ার সব ধরণের রসদ রয়েছে আজমীরের মধ্যে, ‘ওর স্কিল আছে, স্ট্রেন্থ আছে, উদ্দীপনা আছে, জেদ আছে। দরকার আরেকটু পরিণত হওয়ার। ফ্যান্টাসটিক ব্যাটসম্যান সে। পরিণতবোধ আসবে খেলতে খেলতেই। আগামী মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ খেলবে। প্রথম বিভাগে দুই মৌসুম ভালো খেললো, এটা একধরনের আত্মবিশ্বাস এনে দিয়েছে। সামনেরবার প্রিমিয়ার লিগে ভালো ভালো বোলারদের খেলবে। তখন আরেক ধরনের পরিণতবোধ আসবে।’
কোচের দেয়া পরামর্শ মেনেই এগিয়ে যেতে চান আজমীর। প্রিমিয়ার লিগে পারফর্ম করতে এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করছেন। উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল মাঠ ও শেখ জামাল ক্রিকেট একাডেমিতে জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার মোহাম্মদ সেলিমের অধীনে অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন। চলছে পড়াশোনাও। তিতুমীর কলেজে অ্যাকাউন্টিংয়ে অনার্স করছেন আজমীর।
ভিডিও সম্পাদনা: মাহমুদুল ইসলাম