রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে নিরাপত্তা ও ঝুঁকির শঙ্কা দূর করতে ঢাকায় শুরু হয়েছে ‘ইনফ্যাক্ট সায়েন্স ফেস্টিভ্যাল’ নামের বিজ্ঞান উৎসব। দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পর্কে কিশোর-তরুণদের স্বচ্ছধারণা দিতে এবং দেশের পরমাণু গবেষণায় তাদেরকে উৎসাহিত করতেই এই উৎসব।
উৎসবে রাশিয়ার পারমাণবিক শক্তি কমিশন রোসাটম-এর তিন প্রতিনিধির সঙ্গে সরাসরি কথোপকথন সহ কুইজ, গেমের মাধ্যমে পরমাণু শক্তি সম্পর্কে ব্যবহারিক ধারণা পাবে শিক্ষার্থীরা।
বিজ্ঞান উৎসবের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- রুশ এবং বাংলাদেশী বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণে লেকচার সেশন, বিজ্ঞানবিষয়ক প্রামান্য চিত্র প্রদর্শনী, বিভিন্ন ইন্টারেকটিভ গেমস ও জনপ্রিয় টকশো ইত্যাদি।
এসব কর্মসূচিতে অংশ নিতে রাশিয়া থেকে এসেছেন ডিমিত্রভগ্রাদ ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের রেডিও কেমিস্ট্রি বিভাগের প্রধান রতিস্লাভ কুজনেৎসভ, রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট সারাবুরা তাতিয়ানা এবং বিজ্ঞানবিষয়ক সাংবাদিক এলিয়া কাবানভ।
ইনফ্যাক্ট সায়েন্স ফেস্টিভ্যালের কর্মসূচিগুলো বিভিন্ন ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে। এর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারে চলছে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রুশ বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণমূলক বিতর্ক, উপস্থিত বক্তৃতার আসর।
২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ২৭ সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ধানমন্ডির রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি কেন্দ্র এবং ২৮ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারে বসবে ইনফ্যাক্টের বিভিন্ন আসর। মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারের নিউক্লিয়ার ইন্ডাস্ট্রি ইনফরমেশন সেন্টারে এই উৎসবের উদ্বোধন করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পর্কে ছড়ানো নিরাপত্তা, দুর্যোগ ঝুঁকি নাকচ করে দিয়েছেন বাংলাদেশ ও রাশিয়ার পরমাণু শক্তি বিশেষজ্ঞরা।
অনুষ্ঠানে আসা ঢাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান এম.আলী জুলকারনাইন বলেন,‘নিউক্লিয়ারের প্রথম দুইটি অক্ষরকে আগে পরে নিয়ে এলে এটা হয়ে যায় আনক্লিয়ার। আমাদের দেশে পরমাণু শক্তি সম্পর্কে ধারণাটাই আনক্লিয়ার। এই অস্বচ্ছতার কারণ হলো চর্চার অভাব। অথচ পরমাণু শক্তি মানুষের কল্যাণের জন্য একটি বড় সুযোগ। এজন্য পরমাণু শক্তিতে জানতে-বুঝতে বেশি বেশি চর্চা করতে হবে।’
উচ্চ শিক্ষায় এই চর্চার প্রসার ঘটাতেই চার বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং এ বিএসসি (সম্মান কোর্স) চালু হয়।
উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই বিভাগের চেয়ারম্যান ড.মো. শফিকুল ইসলাম বলেন,‘পরমাণু শক্তি নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে অনেক ভীতি আছে। প্রত্যেক দেশেই এই শক্তির পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক রয়েছে। সাধারণ মানুষের ধারণা এই শক্তি কেবলই বোমা তৈরির জন্য। আসলে নিউক্লিয়ার এনার্জি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন, ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের চিকিৎসা, খনিজ অনুসন্ধ্যানসহ নানা মানবকল্যাণমুখী কাজ করা যায়।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে আমাদের বহুদিনের চাওয়া পূরণ হচ্ছে। এখন এই শক্তি সম্পর্কে না জেনে,না বুঝে বিভ্রান্তি ছড়ানো একধরণের হুমকি। এজন্য শির্ক্ষাথীদেরই তাদের পরিবার,বন্ধুবান্ধবদের সচেতন করতে হবে।’
পরমাণু শক্তির কর্মক্ষেত্রগুলো তুলে ধরে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পরমাণু শক্তিতে স্বনির্ভর করতে শিক্ষার্থীদের এই বিষয়টিতে আগ্রহী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে না এলেও লিখিত বাণীতে রোসাটম এর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক আঞ্চলিক ভাইস প্রেসিডেন্ট আলেক্সি পিমেনভ বলেন, ‘পারমাণবিক শক্তির ক্ষেত্রে রুশ-বাংলাদেশ সহযোগিতার একটি নিদর্শন হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। আমরা আশা করি, এই সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরো সফলভাবে বিকাশ লাভ করবে। এই উৎসবটির মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে পারমাণবিক প্রযুক্তির ভূমিকা, বর্তমানে এই প্রযুক্তির ব্যবহার এবং টেকসই উন্নয়নে এর ভূমিকা সম্পর্কে বিশদভাবে জানতে পারবে।’
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারের মহাপরিচালক আবুল বাশার মো. জহুরুল ইসলাম, ঢাকাস্থ রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি কেন্দ্রের পরিচালক আলেকজান্ডার ডেমিন প্রমুখ।
এই উৎসবের আয়োজন করছে রসাটমের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান ‘এনার্জি অব দ্য ফিউচার’। এতে সহযোগিতা করছে রসাটমের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এএসই গ্রুপ অব কোম্পানিজ, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং ক্লাব, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকায় রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি কেন্দ্র।