সিলেট থেকে: ৩২২ রান তুলেও জয়টা সহজে পেল না বাংলাদেশ। শেষদিকে ঘাম ছুটে গেল বোলারদের। হারের শঙ্কাও উঁকি দিচ্ছিল জিম্বাবুয়ের টেলএন্ডার ব্যাটসম্যানদের ছক্কা ঝড়ে। শফিউল ইসলাম, আল-আমিন হোসেনদের মার খাওয়া বাকরুদ্ধ হয়ে দেখছিলেন অধিনায়ক মাশরাফী। শেষ হাসি অবশ্য হেসেছে তার দলই। জিম্বাবুয়েকে ৪ রানে হারিয়ে তিন ওয়ানডের সিরিজ এক ম্যাচ হাতে রেখেই জিতে নিয়েছে টাইগাররা।
বাংলাদেশ-৩২২/৮, জিম্বাবুয়ে-৩১৮/৮
শেষ ৩০ বলে জিম্বাবুয়ের দরকার ছিল ৭৭ রান, হাতে ৩ উইকেট। এমন ম্যাচের শেষটা এত উত্তেজনা ছড়াবে চিন্তাও করা যায়নি! একাই লড়াই জমিয়ে তোলেন সফরকারী দলের পেস বোলার ডোনাল্ড ত্রিপানো। ২৮ বলে খেলে দেন ৫৫ রানের অপরাজিত ইনিংস। তাকে দারুণ সঙ্গ দেন আরেক বোলার টিনোটেন্ডা মুতুম্বাজি। অষ্টম উইকেট জুটিতে ৪৩ বল খেলে তারা যোগ করেন ৮০ রান।
শেষ ওভারে জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন ছিল ২০ রান। আল-আমিন হোসেন প্রথম বলে দেন ১ রান। দ্বিতীয় বলটি বাউন্সার দিতে গিয়ে করে বসেন ওয়াইড। পরে মুতুম্বাজির উইকেট পেলেও ত্রিপোনো চালিয়ে যান তোপ। টানা দুই ছক্কা মেরে হুংকার ছোড়েন।
শেষ দুই বলে একটি ছক্কা হলেই বেরিয়ে যেত ম্যাচ। পঞ্চম বলটি বাউন্সারে ডট আদায় করে নেন আল-আমিন। শেষ বলে দেন ১ রান। পাঁচ বছর পর ওয়ানডে খেলতে নামা এ পেসার ১০ ওভারে ৮৫ রান খরচ করেছেন।
তামিম ইকবালের ব্যাট ধরে আসা বিরাট সংগ্রহের পর প্রত্যাশার দাবি মেটাতে পারেননি বোলাররা। ৩২২ রান তুলেও বাংলাদেশকে পড়তে হয়েছিল হারের শঙ্কায়।
জিম্বাবুয়ের আরও তিন ব্যাটসম্যান পেয়েছেন ফিফটির দেখা। তারা কেউই ইনিংস খুব বেশি লম্বা করতে পারেননি। ওপেনার টিনাশে কামুনহুকামউইর ৫১, ওয়েসলে মাধেভেরে ৫২ ও সিকান্দার রাজা করেন ৬৬ রান।
তাইজুল ইসলাম নিয়েছেন সর্বোচ্চ তিন উইকেট। ১০ ওভারের কোটা সম্পন্ন করা এ বাঁহাতি স্পিনার দিয়েছেন ৫২ রান। শফিউল ইসলাম ৯ ওভারে ৭৬ রান খরচায় নিয়েছেন একটি উইকেট। মেহেদী হাসান মিরাজ ও মাশরাফীও নিয়েছেন একটি করে উইকেট। তারা খুব বেশি রান দেননি।
প্রথম ম্যাচে লিটন দাস গড়ে দিয়েছিলেন ব্যবধান। খেলেছিলেন ১২৬ রানের ঝলমলে এক ইনিংস। দল পেয়েছিল রেকর্ড ব্যবধানে (১৬৯ রান) জয়। পরের ম্যাচে লিটনকে ছাড়িয়ে যান তামিম। খেলেন দেশের হয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৫৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। দুই ম্যাচে দুই ওপেনারের সেঞ্চুরিতে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ।
জিম্বাবুয়ে এখন আর কঠিন প্রতিপক্ষ নয়। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে যেভাবে হুমকি দিয়ে গেল তা নতুন করে ভাবাবে বাংলাদেশকে। সবশেষ চারটি সিরিজই তারা হেরেছে বাংলাদেশের কাছে। শুক্রবার শেষ ম্যাচে একই চিত্রনাট্য মঞ্চস্থ হলে টানা চারবার হোয়াইটওয়াশ হবে সফরকারীরা। মুখোমুখি দেখায় টাইগারদের কাছে জিম্বাবুয়ে এই নিয়ে হারল টানা ১৬ ম্যাচ। তারা সবশেষ জয় পেয়েছিল ২০১৩ সালে নিজেদের মাঠে।
প্রথম ম্যাচে বড় সংগ্রহ এনে দিয়ে ব্যাটসম্যানরা বাড়িয়েছিল অধিনায়কের আত্মবিশ্বাস। টস জিতে তাই আগে ব্যাটিং নিতে ভুল করেননি মাশরাফী। খুবই মন্থর গতিতে আগের ম্যাচ রান তোলায় সমালোচনায় বিদ্ধ হওয়া তামিম ব্যাটিংয়ের ধরন বদলান এদিন। ছুটতে থাকেন রানের পিছু।
আরেক প্রান্তে লিটন খেলতে থাকেন আত্মবিশ্বাস নিয়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার। তামিমের স্ট্রেইট ড্রাইভে আসা বল বোলারের হাত ছুঁয়ে ভেঙে যায় ননস্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্প। অনেকটা বেরিয়ে আসা লিটন আর ফিরতে পারেননি। ১৪ বলে ৯ রানে থামতে হয় আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ানকে।
পরের আউটটিও দুর্ভাগ্যজনক। শান্তকে রান আউটে ফিরতে হয় তামিমের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে। মাধেভেরের বল ফাইন লেগে ঠেলে রান নিতে চেষ্টা করেননি শান্ত, কিন্তু তামিম ছুটে পৌঁছে যান ব্যাটিং প্রান্তে। প্রায় অসম্ভব রানকে রানে পরিণত করার তাড়াহুড়ো করেন তামিম, মাশুল গুণে সাজঘরের পথ ধরতে হয় শান্তকে। ১০ বলে ৬ রানে থামে তরুণ বাঁহাতির পথচলা।
পরে মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গী করে দলীয় সংগ্রহ একশোর ওপারে টেনে নেন তামিম। দুই সিনিয়রের জুটিতে আসে দ্রুতগতির ৮৭ রান। দারুণ খেলতে থাকা মুশফিক ছয় মারতে যেয়ে বাউন্ডারির কাছে ক্যাচ দিয়েছেন। ফেরার আগে ৬ চারে ৫০ বলে ৫৫ রান জমিয়েছেন নামের পাশে।
ততক্ষণে সেঞ্চুরি পূর্ণ করে তামিম এগোন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে সঙ্গী করে। দুজনে শতরানের জুটি আনেন। ৯৭ বলে একশ ছুঁয়েছে তাদের জুটি। যা ভেঙেছে ১০৬ রানে এসে। মাহমুদউল্লাহ ৩ চারে ৫৭ বলে ৪১ করে আউট হন।
তামিম তার আগে থেকেই বিধ্বংসী। টিনোটেন্ডার বলে ২৪ রান তুলেছেন রিয়াদকে নিয়ে। প্রথম চার বলে তিন চার ও এক ছক্কায় তামিম নেন ১৮, পরে বলে ওয়াইড-সিঙ্গেল, তারপরের বলে চার মারেন মাহমুদউল্লাহ।
তামিম ফেরার পর ৩ চার ও এক ছয়ে ১৮ বলে অপরাজিত ৩২ রান তুলে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টাইগারদের রেকর্ড সংগ্রহে বাংলাদেশকে নেন মোহাম্মদ মিঠুন।
এদিন ঝলমলে এক দেড়শ পেরোনো ইনিংস দিয়েছেন তামিম। পথে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডেতে ৭ হাজারি ক্লাবে নাম লিখিয়েছেন। কিছুদিন সমালোচনার মধ্যে কেটেছে তার। টি-টুয়েন্টি, ওয়ানডেতে টেস্টের মতো ব্যাটিং করে যাচ্ছিলেন। বড় রানও আসছিল না। সব সমালোচনার জবাব ব্যাটেই দিলেন। ৪০ বলে ফিফটি, ১০৬ বলে শতক, ১৩২ বলে দেড়শ ছোঁয়া টাইগার ওপেনার ক্যারিয়ারের ১২তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি পেয়েছেন। থেমেছেন ২০ চার ও ৩ ছয়ে ১৩৬ বলে ১৫৮ রানের ইনিংস সাজিয়ে।