চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

রুটদের গুঁড়িয়ে লর্ডসে সাদা পোশাকে কোহলিদের রঙিন দিন

কী ছিল না এই টেস্টে! চড়াই-উতরাই, কখনও বোলারদের দাপট, কখনও ব্যাটসম্যানদের ফিরে আসা। কখনও হারতে হারতে লড়াইয়ে ফেরা, কখনও ফিরতে ফিরতে লড়াই হেরে বসা। লর্ডসে শেষদিনে এসে সেই উত্তাপ-রোমাঞ্চ পৌঁছাল চরম শিখরে। একের পর এক ভাঁজ খুলতে লাগল মোহাবিষ্ট করে রাখা গোয়েন্দা রহস্যের শেষ অধ্যায়ের মতো। শেষে রুটদের গুঁড়িয়ে সাদা পোশাকে রঙিন এক দিনের হাসি কোহলিদের।

লর্ডসে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড ও ভারত। যাতে ১৫১ রানের জয়ে এগিয়ে গেল কোহলিরা। প্রথম টেস্টে সফরকারী ভারতের নাকের ডগা থেকে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে বৃষ্টি!

প্রথম ইনিংসে লোকেশ রাহুলের ১২৯ রানে সংগ্রহের খাতায় ৩৬৪ জমিয়েছিল ভারত। নিজেদের প্রথম ইনিংসে অধিনায়ক জো রুটের অপরাজিত ১৮০ রানে ৩৯১ পর্যন্ত যায় ইংল্যান্ড। জমায় ২৭ রানের লিড।

দ্বিতীয় ইনিংসে একসময় ২০৯ রানে অষ্টম উইকেট হারিয়ে বসা ভারত নবম উইকেটে মোহাম্মদ সামি ও জাসপ্রিত বুমরাহর অবিচ্ছিন্ন ৯০ রানের জুটিতে ২৯৮তে পৌঁছে ইনিংস ঘোষণা করে।

ইংল্যান্ডের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৭২ রানের। হাতে ছিল প্রায় ৬০ ওভার। কিন্তু ভারতের পেস তোপের সামনে স্বাগতিকরা গুঁড়িয়ে যায় মাত্র ১২০ রানে, ৫১.৫ ওভার ব্যাট করে।

কেবল এই তথ্যগুলো বুঝিয়ে দিতে পারবে না কেমন রোমাঞ্চ ছিল লর্ডস টেস্টের শেষদিনে। ৬ উইকেটে ১৮১ রানে দিন শুরু করে ভারত। রিশভ পান্ট ১৪ ও ইশান্ত শর্মা ৪ রানে ক্রিজে আসেন।

পান্ট নামের পাশের যোগ করতে পারেন আর মাত্র ৮ রান। ইশান্ত যোগ করেন ১২ রান। সেখান থেকে শুরু সামি ও বুমরাহর প্রতিরোধ। তাদের আর বিচ্ছিন্নই করতে পারেননি প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে উইকেটশূন্য থাকা অ্যান্ডারসন, মার্ক উড বা অলি রবিনসনরা।

সামি ও বুমরাহ কেবল ম্যাচজয়ী জুটিই গড়েননি, রানও তুলেছেন সময়ের চাহিদা অনুযায়ী। দুজনে ৯০ রান যোগ করেন ১২০ বলে। ৬ চার ও এক ছয়ে ৭০ বলে ৫৬ করে অপরাজিত থাকেন সামি, বুমরাহ অপরাজিত থাকেন ৩ চারে ৬৪ বলে ৩৪ রানে।

ভারতের টেলের ওই ধাক্কার শক সামলে উঠতে পারেনি লক্ষ্য তাড়ায় নামা ইংল্যান্ড। অন্যদিকে টেলের লড়াইয়ের পর আরও বেশি উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠেন সফরকারী বোলাররা। রানের খাতা খুলতে না দিয়ে সামি ও বুমরাহ ফিরিয়ে দেন যথাক্রমে স্বাগতিক দুই ওপেনার সিবলি ও বার্নসকে।

খানিক পর তাদের সাথে যোগ দেন বাকি দুই পেসার ইশান্ত শর্মা ও মোহাম্মদ সিরাজ। তারা একে একে ফেরান হাসিব ৯, রুট ৩৩, বেয়ারস্টো ২, মঈন ১৩ ও স্যাম কারেনকে শূন্য রানে।

এখানে এসে প্রতিরোধের মুখে পড়ে ভারত। জস বাটলার ও রবিনসন একটা করে ওভার উইকেটে টিকে থাকার লড়াইয়ে অনেকটা সফল হতে থাকেন। সময় যত গড়ার, ম্যাচের দোলাচল ভাগ্য তত বুক টিপটিপানি বাড়াতে থাকে।

একসময় ৯০ রানে সপ্তম উইকেট পড়ে যাওয়ার পর বাটলার ও রবিনসন ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা ভারতীয় পেসের সামনে কাটিয়ে দেন পাক্কা ১২.৩ ওভার। বরিনসনকে এলবিডব্লিউ করে আবার ত্রাতা বনে যান বুমরাহ।

তারপর বাটলারকে (২৫) উইকেটের পেছনে পান্টের গ্লাভসে বন্দি করা সিরাজ একই ওভারে তিন বল পর অ্যান্ডারসনকে বোল্ড করে উদ্দাম উল্লাসে মাতেন। ৩২ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি, প্রথম ইনিংসেও নিয়েছিলেন ৪ উইকেট।

প্রথম ইনিংসে উইকেটশূন্য বুমরাহর শিকার ৩ উইকেট। সামি নিয়েছেন এক উইকেট। ২টি উইকেট ইশান্তের। ম্যাচসেরা হয়েছেন প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান লোকেশ রাহুল।