সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর রহস্য নতুন মোড় নিল। প্রেমে ফাঁসিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা, সুশান্তের স্টাফ বদলে দেয়া, ওষুধের ওভারডোজ দেয়া, আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়া সহ আরও অনেকগুলো অভিযোগে রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে পাটনার রাজীবনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করলেন সুশান্ত সিং রাজপুতের বাবা কে কে সিং।
জানা গেছে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৪১, ৩৪২, ৩৮০, ৪০৬, ৫০৬ এবং ৩০৬ ধারায় দায়ের করা হয়েছে অভিযোগ। রিয়া ছাড়াও আরও পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
পাটনা পুলিশের চার সদস্যের একটি তদন্তকারী দল মুম্বাই পৌঁছে গেছে। দলটি মুম্বাই পুলিশের কাছ থেকে কেস ডায়েরি এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করবে।
ছয় পাতার এজাহারে সুশান্ত সিং রাজপুতের বাবা বলেছেন, রিয়া, তার পরিবার ও বন্ধুরা মিলে সুশান্তের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তার অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, তাকে চাপে রেখেছেন।
তিনি আরও বলেন, সুশান্তকে রিয়া শর্ত জুড়ে দিতেন, সিনেমা করতে হলে নায়িকা হিসেবে তাকেই রাখতে হবে। আর যদি তা না হয়, তাহলে সেই ছবি ফিরিয়ে দিতে হবে।
সুশান্তের বাবা আরও বলেন, সুশান্তকে তার বাড়ি থেকে সরিয়ে নিয়ে একটি ভুতুড়ে বাড়িতে ওঠেন রিয়া। সুশান্ত অদ্ভুত কথা বার্তা বলেন, এমন অভিযোগে সুশান্তকে মানসিক ডাক্তার দেখাতে বলেন রিয়া। সেই অজুহাতে রিয়া পরে সুশান্তকে নিয়ে মুম্বাইয়ের একটি বাড়িতে ওঠেন এবং নিজের পরিচিত এক মানসিক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। এরপর চিকিৎসকের সহায়তায় সুশান্তকে ওষুধের অতিরিক্ত ডোজ দিতেন রিয়া। সুশান্ত অসুস্থ হয়ে পড়ায় রিয়া সবাইকে বলে বেড়াতেন, সুশান্তের ডেঙ্গু হয়েছে।
সুশান্তের বাবা অভিযোগে আরও জানান, রিয়া সুশান্তের বিশ্বস্ত কর্মীদেরকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। তার বদলে নিজের পরিচিতদের সুশান্তের বাড়িতে নিয়োগ দিয়েছিলেন।
রিয়ার পরিবার সুশান্তের সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেছিল। এমনকি নিজের পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করা কমে গিয়েছিল সুশান্তের। সুশান্তকে পাটনাতে যেতে দিতেন না রিয়া।
কে কে সিং-এর অভিযোগ, রিয়া সুশান্তের ফোন নম্বর বদলে দিয়েছিলেন। নিজের কাছের বন্ধু স্যামিয়াল মিরান্ডার নামে নেয়া একটি সিম সুশান্তকে ব্যবহার করতে বাধ্য করেছিলেন রিয়া।
কে কে সিং-কে সুশান্ত বেশ কয়েকবার জানিয়েছিলেন যে তাকে কিছু মানুষ নিয়ন্ত্রণ করছে এবং তারা তাকে পাগলা গারদে পাঠিয়ে ছাড়বে।
সুশান্তের বাবা জানান, সুশান্তের একাউন্টের ১৭ কোটি রুপির থেকে ১৫ কোটি রুপি অন্য কয়েকটি একাউন্টে সরিয়ে নেয়া হয়েছে, যেগুলোর কোনোটিই সুশান্তের নয়।
এজহারে আরও বলা হয়, সুশান্ত ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে কেরালায় স্থায়ী হওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন এবং সেজন্য যায়গা খুঁজছিলেন। কিন্তু রিয়া সেটা জানতে পারেন এবং সুশান্তের মানসিক চিকিৎসা নেয়ার তথ্য মিডিয়ায় জানিয়ে দেয়ার হুমকি দেন। সুশান্তকে ধ্বংস করে দেয়ার হুমকিও দেন রিয়া।
অভিযোগে আরও বলা হয়, সুশান্ত অর্থ আত্মসাতের ব্যাপারে প্রশ্ন করায় ৮ জুন রিয়া সুশান্তের ফ্ল্যাট ছেড়ে বের হয়ে যান। কোনো প্রমাণ যেন না থাকে সেজন্য নিজের সঙ্গে নিয়ে যান ল্যাপটপ, নগদ অর্থ, অলংকার, কার্ড, চিকিৎসা সম্পর্কিত নানা তথ্যের কাগজ।
সুশান্তের প্রাক্তন ম্যানেজার রিয়ার আত্মহত্যার পর সুশান্ত ভয় পাচ্ছিলেন, রিয়া তাকে এই ঘটনায় ফাঁসিয়ে দিতে পারেন। তাই রিয়াকে বেশ অনেকবার ফোন দিয়েছিলেন তিনি, কিন্তু রিয়া তার নাম্বার ব্লক করে দিয়েছিলেন। রিয়াই দিশাকে সুশান্তের ম্যানেজার পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন সুশান্তের বাবা।
গত ১৪ জুন বান্দ্রায় নিজের ফ্ল্যাটে গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় পাওয়া যায় সুশান্তের মৃতদেহ। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। সেই সাথে প্রাথমিক ভাবে ধারণা পাওয়া গিয়েছে ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন তিনি। তবে সেটি কী কারণে তাই নিয়ে বর্তমানে পুলিশি তদন্ত চলছে।