প্রতি চার বছর পরপর এক মাসের জন্য ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ‘ বসে। এই সময়ে অনেক জাতিই বিশ্ব ফুটবলের দৈত্য হয়ে ওঠে এবং অনেক খেলোয়াড় হয়ে যান কিংবদন্তি।
প্রতিবারই অনেক তরুণ খেলোয়াড় বিশ্বকাপে আসেন খুব কম লাইমলাইট নিয়ে। কিন্তু আসর শেষ হতে না হতেই বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো বিশ্বের নামীসব ক্লাবে নাম লিখিয়ে ফেলেন।
এমন শীর্ষ পাঁচজন তরুণ খেলোয়াড়দের দিকে তাকাই, যারা তাদের উজ্জ্বল পারফরম্যান্স দিয়ে বিশ্বকাপকে আলোকিত করেছেন।
হুয়ান ফার্নান্দো কুইনটেরো (কলম্বিয়া)
প্রতি বিশ্বকাপের মতো সবাই যেটা মনে করেছিল, কোনো এক কলম্বিয়ান তারকা তার ফুটবল সমর্থ্য দেখাবেন এবং সবাইকে আকর্ষণ করবেন। ২০১৪ বিশ্বকাপে যেমন হামেস রদ্রিগেজ। রাশিয়া বিশ্বকাপে তেমনি হুয়ান ফার্নান্দো কুইনটেরো কাজটা করলেন।
বিশ্বকাপের আগে নিজের দেশের ক্লাব থেকে পর্তুগিজ ক্লাব পোর্তোতে চার বছরের ধারে গিয়েছেন। বিশ্বকাপে তার পারফরম্যান্সের পর তিনি সেখান থেকে ফিরবেন কিনা সেটা নিয়েই এখন সন্দেহ। মানে পোর্তো তাকে বড় অঙ্কের অর্থে রেখে দিতে চাইবে।
জাপান ও পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত স্কিল দেখিয়েছেন কুইনটেরো। আক্রমণ থেকে ডিফেন্স সব জায়গাতেই প্রায় সমানভাবে উপস্থিত থেকেছেন। হোসে পেকারম্যানের প্রধান খেলোয়াড়দের একজন ২৫ বছরের এই তরুণ।
আন্তে রেবিচ (ক্রোয়েশিয়া)
হতাশার ব্রাজিল বিশ্বকাপের পর জাতীয় দল থেকে প্রায় হারিয়ে গিয়েছিলেন আন্তে রেবিচ। কিন্তু জ্লাতকো দালিচ ক্রোয়েশিয়ার কোচ হওয়ার ফিনিক্স পাখি হয়ে ওঠেন তিনি। তারপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। মানজুকিচ ও পেরিসিচের সঙ্গে দালিচের মেশিনে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ রেবিচই।
রাশিয়া বিশ্বকাপের তারকাদের মধ্য রেবিচ একজন। আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে তার সেই চক্রাকার ভলি বহুদিন সমর্থকদের মনে থাকবে। যে ম্যাচে লুকা মদ্রিচের মতো ফুটবলার পেনাল্টি মিস করেছিলেন ডেনমার্কের বিরুদ্ধে, সেই ম্যাচে অতিরিক্ত সময়ে পেনাল্টিতে গোল করে দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হয়ে ওঠেন রেবিচ। দুর্দান্ত পারফর্ম করা ফ্রাঙ্কফুট তারকাকে পেতে এরইমধ্যে লাইন লাগিয়েছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের জায়ান্ট ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
ডেনিস চেরিশেভ (রাশিয়া)
স্প্যানিশ লা লিগার খবর যারা রাখেন বিশ্বকাপের আগেও ডেনিস চেরিশেভের নাম তারা শুনেছেন। কিন্তু ২০১৭-১৮ মৌসুমে ভিয়ারিয়ালের হয়ে মাত্র ৯টি ম্যাচ খেলা তারকা যে বিশ্বকাপে খেলবেন সেটা নিজেও ভাবেননি। কিন্তু কোচ স্তানিস্লভ চেরচেসভ তার উপর বিশ্বাস রেখেছিলেন।
অ্যালান জাগোয়েভের ইনজুরির ফাঁকে দলে ডাক পান চেরিশেভ। সৌদি আরবের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের ওপেনিং ম্যাচে জোড়া গোল করে রীতিমতো বিস্ফোরণ ঘটান। মিশরের বিরুদ্ধে নিজের তৃতীয় গোলটিও করেন। আর স্পেনের বিরুদ্ধে পেনাল্টি শট থেকে গোলের সুযোগও নষ্ট করেননি। কোয়ার্টার ফাইনালে দল বাদ যাওয়া পর্যন্ত ছিলেন গোল্ডেন বল জয়ের দৌড়েও।
আলেকজান্ডার গোলোভিন (রাশিয়া)
চেহারায় মিলের কারণে প্রথম দেখাতে অনেকেই জার্মানির মার্কো রিউস বলে ভুল করেন আলেকজান্ডার গোলোভিনকে। প্রায় অভিন্ন মুখ, অনুরূপ চুলের ছাট, খেলার একইরকম টেকনিকের কারণে রিউসের সঙ্গে অনেক মিল তার। সিএসকে মস্কোর মিডফিল্ডার সম্পর্কে বিশ্বকাপের আগে খুব কমই জানতো লোকজন। গতি, ড্রিবলিং দক্ষতা, দূরদর্শিতা এবং নিখুঁত সেট পিস ক্ষমতার কারণে ডিফেন্ডারদের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠেছেন গোলোভিন।
প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে দুটি অ্যাসিস্ট করার পর ফ্রি-কিক থেকে দুর্দান্ত এক গোলও করেন গোলোভিন। তারপর থেকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি ২২ বছরের তরুণকে। গ্রুপর্বে দারুণ খেলার পর নকআউটপর্বে স্পেনের বিরুদ্ধে জর্ডি আলবা এবং নাচোকে মুগ্ধ করেছেন তিনি। স্পেনের বিরুদ্ধে পেনাল্টিতেও গোল করেন গোলোভিন। পারফরম্যান্স দেখে তার প্রতি আগ্রহের কথা গোপন করেনি ইংলিশ জায়ান্ট ক্লাব চেলসিও।
তাকাশি ইনুই (জাপান)
জাপান এই বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় রূপকথার কাহিনীগুলোর একটি। গ্রুপপর্বে পোল্যান্ড ও কলম্বিয়ার মতো দলগুলো এশিয়ান দলটিকে সুযোগ দিতে চায়নি। কিন্তু ’সূর্য উদয়ের দেশ’ ঠিক আলো ছড়িয়েছে। প্রথম ম্যাচে কলম্বিয়াকে হারিয়ে দেয় তারা। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে সেনেগালের বিরুদ্ধে দেখা দেন তাকাশি ইনুই।
সেনেগালের বিরুদ্ধে ২-২ গোলে ড্র করা ম্যাচে সমতাসূচক গোলটি করেন ইনুই। ওই ম্যাচে নিজের গতি আর ড্রিবলিং দিয়ে দৃষ্টি কাড়েন অনেকের। জাপানের সবচেয়ে বেশি বয়সী (৩০) স্ট্রাইকার বেলজিয়ামের বিরুদ্ধেও গোল করেন। তাও যেনতেন গোল নয়। ডি-বক্সের ২৫ গজ দূর থেকে চোখ ধাঁধানো এক গোল। যদিও শেষ মুহূর্তের গোলে ইনুইদের হৃদয় ভাঙে বেলজিয়াম। তবে ইনুইর পারফরম্যান্স তাকে নিয়ে নতুন করে ভাবাবে তার ক্লাব রিয়াল বেটিসকে।