অভিযোগ গঠনের ১৫ বছর পর ভারতের কথিত ধর্মীয়গুরু ডেরা সাচ্চা সৌদা-র প্রধান গুরমিত রাম রহিম সিং কে বিশেষ সিবিআই আদালত দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিলেন। রায় ঘোষণার পর পাঞ্জাব-হরিয়ানা রাজ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২৮ জন নিহত হয়েছে। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ১০ বছর আগে ২০০৭ সালে এই ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের শুনানি শুরু হয়েছিল। তিনি কি অপরাধ করেছিলেন?
ঘটনার শুরু ২০০২ সালে। রাম রহিম সিংয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেন তারই ভক্ত এক নারী। ধর্ষণের শিকার ওই নারী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর কাছে চিঠি লিখেছিলেন। ওই চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে রাম রহিমের কাছে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তিনি। ওই চিঠিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, রাম রহিম তার মতো আরও অনেক নারী ভক্তকেই ধর্ষণ করেছেন তার হরিয়ানার সির্সার আখড়াতে।
ওই নারীর অভিযোগ আমলে নেয়া হচ্ছিল না দীর্ঘদিন ধরে। পরে পাঞ্জাব ও হরিয়ানার উচ্চ আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে সিবিআইকে এই অভিযোগ খতিয়ে দেখার আদেশ দিয়ে রুল জারি করেন। এরপর সিবিআই ২০০২ সালে ওই চিঠির উপর ভিত্তি করে রাম রহিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে।
১৮ জন ভক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুই জন স্বীকার করেন যে তাদেরকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে একজন ভক্ত দাবি করেন তাকে ‘পবিত্র’ করে দেয়ার কথা বলে ধর্ষণ করা হয়েছিল। দুজন ভক্তই ধর্ষণের শিকার হওয়ার জবানবন্দি দেন।২০০৭ সালের ৩০ জুলাই সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে এই জবানবন্দি দিয়েই চার্জশীট গঠন করা হয়।
ধর্ষণের শিকার এক ভক্ত জানান যে, ঘটনার দিন তিনি যখন রাম রহিমের হামাগুড়ি দেয়া চেম্বারে প্রবেশ করেন, প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে ঘরের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। তখন রাম রহিম সিং পর্নোগ্রাফি দেখায় মগ্ন ছিলেন। এই অভিযোগের সূত্র ধরেই তদন্ত শুরু করে সিবিআই। কারণ তার ওই বিশেষ চেম্বারে প্রবেশের অধিকার সীমিত ছিল।
২০০৮ সালে রাম রহিম সিংয়ের বিচার শুরু হয়। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর ভারতের দন্ডবিধির ৩৭৬ ধারা ও ৫০৬ ধারা অনুযায়ী তাকে ধর্ষণ ও আহত করার দুটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
তবে শুরু থেকেই নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসছিলেন তিনি। তিনি এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এই অভিযোগ মনগড়া ও ভিত্তিহীন। আমি যৌন মিলনে একেবারে অক্ষম।’
রাম রহিম সিংয়ের বিরুদ্ধে দুটি পৃথক হত্যা মামলাও চলমান রয়েছে। ২০০২ সালের জুলাইয়ে রণজিৎ সিং নামের এক পুরুষ ভক্তকে হত্যা এবং একই বছরের অক্টোবরে সাংবাদিক রাম চান্দরকে হত্যার মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ধর্ষণের শিকার নারী ভক্তের বেনামি চিঠি প্রচারের দায়ে ভক্ত রণজিৎকে খুন করেন রাম রহিম সিং।এমনটিই দাবি করেন রণজিতের পরিবার।