চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

রামপালঃ সুন্দরবন ধ্বংসের বায়বীয় অভিযোগ তুলে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে বদ্ধপরিকর একটি মহল

বাংলাদেশের বৃহত্তম ব-দ্বীপ সুন্দরবন। যার আয়তন প্রায় ১০ হাজার বর্গ কি.মি। বাংলাদেশ এবং ভারত দু’দেশ জুড়েই জালের মত ছড়িয়ে আছে সুন্দরবন। যার বেশিরভাগ অংশই আবার বাংলাদেশের। প্রায় ৬,০১৬ কি.মি। যা পুরো সুন্দরবনের মোট আয়তনের প্রায় ৬২ শতাংশ। সুন্দরবন ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ, অন্যদিকে এটি রামসার সাইটেরও অন্তর্ভুক্ত।

সুন্দরবন ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা পায়। সে সময় ক্ষমতায় ছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যিনি সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবেলা করে পরিবেশ রক্ষার স্বীকৃতি স্বরূপ জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ পদক “চ্যাম্পিয়ন্স অব দা আর্থ” পুরষ্কারে ভূষিত হন।

যখন দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে আন্তর্জাতিক বিশ্বে, তখন খুব সূক্ষ্মভাবে একটি মহল রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ইস্যু করে সুন্দরবন ধ্বংসের বায়বীয় অভিযোগ তুলে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে বদ্ধপরিকর। বিরুদ্ধবাদীদের বায়বীয় অভিযোগ জানার পূর্বে আমাদের ধারণা থাকতে হবে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র কেন প্রয়োজন? বর্তমান আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পূর্বে “ডিজিটাল বাংলাদেশ” এবং “ভিশন ২০২১” বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করেছিল নির্বাচনী ইশতেহারে।

ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা এই মুহূর্তে এগিয়ে যাচ্ছে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে। যার মেয়াদ ২০১৬-২০২০। এ সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ২৩ হাজার মেগাওয়াট। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অন্যতম একটি লক্ষ্য হচ্ছে ১ কোটি ২৯ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। যার মধ্যে ১০ লাখ কর্মসংস্থান হবে দেশের বাহিরে, আর বাকি ১ কোটি ১৯ লাখ আমাদের অভ্যন্তরীণ।

তার জন্য প্রয়োজন বিশাল বিনিয়োগ এবং অবকাঠামো। সে লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। প্রায় ১০০ টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। যার মধ্যে ১০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল খুব শীঘ্রই আলোর মুখ দেখবে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করবে বড় বড় বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। আর তার জন্য প্রয়োজন হবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে বিনিয়োগকারীরা উৎসাহ পাবে না, অন্যদিকে সরকারের যে ১ কোটি ২৯ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য সেটাও পূরন হবে না। তাতে বেকারত্বের হার বাড়বে, প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী হবে। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ থেকে আবার নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।

বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে দেখার স্বপ্ন অনেকেরই। তাই বিশেষ মহলের ইন্ধনে চলছে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। সুন্দরবন ধ্বংসের ইঙ্গিত সরকার এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। একেই বলে মা’র চেয়ে মাসির দরদ বেশি। কার দরদ বেশি তা বুঝতে হলে কিছু পদক্ষেপের দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। ২০১১ সালে সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৮(ক) অনুচ্ছেদ সংযোজন করেন। যাতে লিপিবদ্ধ আছে- ‘রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীব-বৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণির সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন।’

অর্থাৎ পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ বাংলাদেশের সাংবিধানিক দায়িত্ব। এ সাংবিধানিক অঙ্গীকার রক্ষার্থে জাতীয় সংসদে ২০১২ সালে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন পাস করা হয়। অপরদিকে, ২৩ নভেম্বর ২০১৫ মন্ত্রীসভায় সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে জীব বৈচিত্র্য আইন ২০১৫ এর অনুমোদন দেওয়া হয়। এ সবই করা হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে নিজস্ব তহবিলে জলবায়ু ফান্ড গঠন করে বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাব মোকাবেলার জন্য ৪,০০০ কোটি টাকার ফান্ড গঠন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক দশক আগেও বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ পরিচিত ছিল ঝড়-বন্যা-ঘূর্ণিঝড়ের দেশ হিসেবে। আজ সবাই জানে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)